নয়া দিল্লি: করোনাকালে (COVID-19) বদলেছে আমাদের জীবনযাত্রা (Lifestyle), পরিবর্তন এসেছে কাজের পদ্ধতিতেও। লকডাউন(Lockdown)-র জেরে বাড়িই অফিসে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় বাড়িতেই বন্দি থাকার পর যখন সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে, অনেক অফিসেরই দরজা আগের মতো খুলে গিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু সংখ্যক কর্মীই আর অফিসে ফিরতে চাইছেন না। যাতায়াতের সময়টুকু বাঁচিয়ে, তারা বাড়িতে বসেই যাবতীয় কাজ করতে চান। সূত্রের খবর, শীঘ্রই কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক(Labor Ministry)-র তরফেও “ওয়ার্ক ফ্রম হোম”(Work From Home)-কে পাকাপাকি স্বীকৃতি দিতে পারে। তবে বাড়িতে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে বেতনের কাঠামোতেও (Salary Structure)।
প্রতিটি কর্মচারীরই বেতনের মধ্যে একাধিক ভাগ থাকে। সেখানে যাতায়াতের খরচ থেকে শুরু করে থাকার খরচ-একাধিক বিষয়কে অন্তর্গত করেই বেতনের কাঠামো তৈরি করা হয়। যদি কোনও কর্মী আজাীবন বাড়িতেই বসে কাজ করতে চান, সেক্ষেত্রে তাদের হাউস রেন্ট অ্যালোয়েন্স (House Rent Allowance) বা এইচআরএ (HRA) হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে, পরিকাঠামোর অধীনে “রিইমবার্সমেন্ট” (Reimbursement) খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। শ্রম মন্ত্রকের তরফে আপাতত এই পরিকল্পনাই করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
কর্মীদের যদি আজীবন বাড়িতেই বসে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তাদের কাজের বিভিন্ন শর্তে পরিবর্তন আসতে পারে।একইসঙ্গে সংস্থা ও কর্মী- উভয়ের ব্যায়ের হিসাবও বিবেচনা করতে হবে। কর্মীরা যদি বাড়িতে বসে কাজ করেন, সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ (Electricity) ও ওয়াই-ফাই(Wifi)-র জন্য খরচ হয়। এই খরচগুলি কর্মীদের ক্ষতিপূরণ পরিকাঠামোর অন্তর্গত থাকতে হবে। সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, একজন কর্মী নিজের বাড়ি বা নিজের শহর থেকে কাজ করলে, তার জীবনযাত্রায় যে কম খরচ হচ্ছে, তার উল্লেখ ক্ষতিপূরণের প্য়াকেজে থাকা উচিত। সরকারের তরফেও এই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে এবং শীঘ্রই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একাধিক সংস্থার শীর্ষকর্তাদের বক্তব্য, কর্মীরা যদি বাড়ি থেকে কাজ করে, সেক্ষেত্রে তাদের বেতনের পরিকাঠামোয় পরিবর্তনের প্রয়োজন। যেমন, এইআরএ ও পেশাদারি ট্য়াক্সে পরিবর্তন আসবেই। এছাড়া কর্মীদের কাজের সময়সীমাও একটি বড় আলোচ্য বিষয়। শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মীদের প্রয়োজনে সেই সময় বিভাজনের ব্যাখ্যাও দিতে হতে পারে।
তবে আধুনিক ও পরিবর্তনশীল সমাজে, বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই বলেই মনে করছেন অনেকে। বাজারে যেমন চাহিদা ও সরবরাহের উপর ভিত্তি করে দাম ধার্য করা হয়, একইভাবে কর্মীদেরও কাজের ধরন, সময়সীমা সহ একাধিক বিষয় বিবেচনা করেই বেতনের কাঠামো তৈরি করী প্রয়োজন। ম্যানেজমেন্ট ও কর্মীদের মধ্যে বাড়ি থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে শর্ত নিয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনে পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
ভিন রাজ্যে অবস্থিত কোনও সংস্থার যদি কোনও কর্মী তাঁর নিজস্ব শহর থেকে কাজ করে, সেক্ষেত্রে এইআরএ-তে বড় প্রভাব পড়তে পারে। এইআরএ-তে করের ছাড় মূলত তিনটি বিষয়ের উপর পাওয়া যায়-
১. সংস্থা কত এইচআরএ (HRA)দিচ্ছে।
২. মেট্রো শহরে বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে বেসিক বেতনের ৫০ শতাংশের সঙ্গে ডিয়ারনেস অ্যালায়েন্স (DA)-র যোগফল। মেট্রো শহর নয়, এমন জায়গায় বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে বেতনের ৪০ শতাংশ ও ডিএ-র যোগফল।
৩. বেতন থেকে কত বাড়ি ভা়ড়া দিতে হচ্ছে, তার ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি অংশ এবং ডিএ-র যোগফল।
যদি এইআরএ কমিয়ে দেওয়া হয় এবং অন্য কিছু দিয়ে তা পূরণ না করা হয়, তবে কর্মীর উপর করের চাপ বাড়তে পারে। যদি এইচআরএ কমে যায়, তবে যখন একজন কর্মী মেট্রো শহর থেকে ছোট শহরে স্থানান্তরিত হন, তবে তার হাতে পাওয়া বেতনের অঙ্কও হ্রাস পাবে। এইআরএ-র পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব কর্মীর আয়কর দানেও পড়বে।
এইআরএ হ্রাস পেলে, সেই অর্থ কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে যোগ হয়ে যেতে পারে, অথবা কর্মীর বেতনেও যদি সরাসরি সেই অঙ্ক যোগ হয়, তবে করের বোঝা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।