AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

আশা জাগাচ্ছে নতুন Kaveri Engine, তবে কি একে ব্যবহার করা হবে LCA Tejas ও AMCA-তে?

Indian Air Force, DRDO: আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ডিআরডিও এখন কাবেরি ইঞ্জিনকে অন্য ভাবে ব্যবহার করছে। কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিন প্রায় ৮০ কিলোনিউটন থ্রাস্ট উৎপাদন করতে সক্ষম। নতুন এই ইঞ্জিনের শুধুমাত্র শক্তি বেড়েছে এমন নয়। আসলে নয়া এই ইঞ্জিনকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যা একাধিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।

আশা জাগাচ্ছে নতুন Kaveri Engine, তবে কি একে ব্যবহার করা হবে LCA Tejas ও AMCA-তে?
এবার কাবেরি ইঞ্জিনে উড়বে তেজস?Image Credit: PTI
| Updated on: Oct 26, 2025 | 9:44 AM
Share

কাবেরি ইঞ্জিন, ভারতের একেবারে নিজের প্রকল্প। যে প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত স্বপ্ন দেখেছিল সম্পূর্ণ ভারতীয় যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করার। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এই প্রকল্পে সাফল্য নিয়ে আসতে পারেনি DRDO বা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। তবে, এবার যেন সেই ইঞ্জিনের পুনর্জন্ম ঘটেছে। ডিআরডিও নতুন করে তৈরি করছে কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিন। ইতিমধ্যেই সেই ইঞ্জিনের একটি ভ্যারিয়েন্টের প্রোডাকশনও চালু হয়ে গিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।

১৯৮০ সালে ভারত নিজস্ব জেট ইঞ্জিন তৈরি করার এক উচ্চাকাঙ্খী স্বপ্ন দেখেছিল। আর সেই স্বপ্নকে সাকার করতে গত ৪৫ বছরে ধরে চেষ্টা করে যাওয়া হচ্ছে কাবেরি ইঞ্জিন তৈরি করার। প্রথমে তেজস লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফটের জন্যই এই ইঞ্জিন ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু বাকি বিমানের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও ইঞ্জিন তৈরি না হওয়ায় জেনারেল ইলেকট্রিকের ইঞ্জিনের উপর নির্ভর করতে হয় ভারতকে। আসলে, এই কাবেরি ইঞ্জিন তেজসকে ওড়াতে প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট তৈরি করতে ব্যার্থ হয়েছিল।

বর্তমানে কাবেরি ইঞ্জিনের পরিবর্তিত সংস্করণ যা কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিন নামে পরিচিত, তা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিনের ডি১ ভ্যারিয়েন্ট আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

Gtx 35vs Kaveri

কাবেরি ইঞ্জিন

পটভূমি: কেন ব্যর্থ হয়েছিল কাবেরি?

নব্বইয়ের দশকে যখন তেজস লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফটের নকশা তৈরি করা শুরু হয়, তখন এর জন্য একটি দেশীয় ইঞ্জিন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই লক্ষ্যেই গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট বা GTRE কাবেরি ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশকের প্রচেষ্টার পরও, কাবেরি ইঞ্জিন সম্পূর্ণভাবে তৈরি করে তা যুদ্ধবিমানে ব্যবহারের উপযুক্ত করতে পারেনি ভারত। আর এর প্রধান কারণ ছিল ইঞ্জিনের অতিরিক্ত ওজন এবং তার প্রয়োজনীয় ৯০ কিলোনিউটন থ্রাস্ট তৈরি করতে না পারা। আর এর ফলেই তেজসে আমেরিকান জিই এফ ৪০৪ ইঞ্জিন ব্যবহার করা শুরু হয়।

নতুন কাবেরি: প্রযুক্তিগত অগ্রগতি

আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ডিআরডিও এখন কাবেরি ইঞ্জিনকে অন্য ভাবে ব্যবহার করছে। কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিন প্রায় ৮০ কিলোনিউটন থ্রাস্ট উৎপাদন করতে সক্ষম। নতুন এই ইঞ্জিনের শুধুমাত্র শক্তি বেড়েছে এমন নয়। আসলে নয়া এই ইঞ্জিনকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যা একাধিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।

  • আফটারবার্নার প্রযুক্তি: কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিনের এই নয়া সংস্করণে যুক্ত করা হয়েছে আফটারবার্নার। এই আফটারবার্নার প্রয়োজন অনুসারে ইঞ্জিনের থ্রাস্ট বাড়াতে পারে।
  • উপাদান ও ব্লেড প্রযুক্তি: কাবেরি ইঞ্জিনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল এই ইঞ্জিন বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারত না। এ ছাড়াও সিঙ্গেল ক্রিস্টাল ব্লেড প্রযুক্তিও ছিল না ভারতের কাছে। আর এই সমস্যা সমাধানে ডিআরডিও এখন হাত মেলাতে চলেছে ফরাসি সংস্থা Safran-এর সঙ্গে। যদিও হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয় সিঙ্গেল ক্রিস্টাল ব্লেড প্রযুক্তি আগেই তৈরি করেছিল ডিআরডিও। যদিও সেই প্রযুক্তি যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত প্রযুক্তির তুলনায় অনেকই আলাদা। স্যাফরানের সঙ্গে এই অংশীদারিত্বের লক্ষ্য হল প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান করা ও এই সমস্যাগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকার খুঁজে বের করা।
  • ঘাতক: ডি১ নামের কাবেরির একটি ড্রাই সংস্করণ, যেখানে আফটারবার্নার নেই, তা ভারতের আনম্যানড কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকল ‘ঘাতক’-র জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আফটারবার্নার না থাকায় এই সংস্করণটি ড্রোনটির স্টেলথ বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। বর্তমানে গোদরেজ অ্যারোস্পেস এই সংস্করণটি তৈরি করছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডি১ ভ্যারিয়েন্টের প্রথম ইউনিট সরবরাহ করে তারা।

পরীক্ষামূলক পর্যায় ও ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্ম

কাবেরি ইঞ্জিনের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর উপর বর্তমানে কঠিন পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। পুরনো তেজস যুদ্ধবিমানের প্রোটোটাইপ এয়ারফ্রেম ব্যবহার করে আকাশে এর শক্তির পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষাগুলি ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব, নির্ভরযোগ্যতা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এর কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিআরডিওর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ইঞ্জিন আগামীতে তেজসের কোনও ভ্যারিয়েন্ট বা অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট অর্থাৎ AMCA-তেও ব্যাবহার করা হতে পারে।

বৈশ্বিক সহযোগিতা: স্যাফরনের ভূমিকা

ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতা আনতে বিদেশি অংশীদারিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির ক্ষেত্রে, ফরাসি সংস্থা স্যাফরনের সঙ্গে ডিআরডিওর সহযোগিতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্যাফরন তার উচ্চ-তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এমন প্রযুক্তি ও সিঙ্গেল ক্রিস্টাল ব্লেড প্রযুক্তির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ফলে, এই অংশীদারিত্ব তৈরি হলে ভারত কেবল প্রযুক্তিগত জ্ঞান পাবে, এমনটা নয়। উল্টে সম্পূর্ণ দেশীয় ইঞ্জিন তৈরির সক্ষমতাও বাড়াতে পারবে। আর সেই সক্ষমতাই আগামীতে বিদেশি ইঞ্জিনের ওপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে দেবে।

তাৎপর্য: ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার নতুন দিগন্ত

কাবেরি ডেরিভেটিভ ইঞ্জিন ভারতের কাছে শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার একটি প্রতীক। যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন একটি দেশের সামরিক শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। অতীতে বিদেশি সরবরাহকারীরা প্রয়োজনমতো প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে বা খুচরো যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। যে কারণে অনেক সামরিক প্রকল্প সময় মতো শেষ হয়নি। একটি শক্তিশালী দেশীয় যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন সেই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে। কাবেরি ইঞ্জিনের কার্যকারীতা এই মুহূর্তে এটাই প্রমান করছে ভারত ধীরে ধীরে কিন্তু নিজের লক্ষ্যের দিকে ঠিকই এগিয়ে চলেছে। আর সেই কারণেই আগামীতে ভারত একটি সামরিক দিক থেকে ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর এই পদক্ষেপেই হয়তো একদিন ভারতের আকাশ কাবেরি ইঞ্জিনের গর্জনে ভরে উঠবে।