কোচি : বাবু জর্জ ভালাভি। কেরলের কোচি এলাকার বাসিন্দা। চার দশকেরও বেশি সময় আগে এক সংস্থার ২.৮ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলেন। আর আজ সেই শেয়ারের বাজার (Share Market) দর শুনলে চমকে উঠবেন। ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু অনেক কাঠ খড় পুড়িয়েও সেই টাকা হাতে পাচ্ছেন না ভালাভি। কিন্তু হাল ছাড়ছেন না। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আজও।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭৮ সালে। সেই সময় বাবু জর্জ ভালাভি এবং তাঁর পরিবারের চার সদস্য মিলে উদয়পুরের এক সংস্থা মেবার অয়েল অ্যান্ড জেনারেল মিলস লিমিটেডের ২.৮ শতাংশ শেয়ার কেনেন। সেই সময় ওই সংস্থার নাম শেয়ার বাজারের তালিকায় ছিল না।
মাঝে ৪৩ বছর কেটে গিয়েছে। মেবার অয়েল অ্যান্ড জেনারেল মিলসের সম্পত্তি ফুলে ফেঁপে ওঠে এতদিনে। নামও বদলে যায় সংস্থার। নতুন নাম দেওয়া হয় পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ়। আর এই পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ় এখন শুধু শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত রয়েছে এমনটাই নয়, দালাল স্ট্রিটে খুব ভাল সময়ও যাচ্ছে সংস্থার। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মুনাফা কামিয়েছে পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ়।
আর সংস্থার এই ফুলে ফেঁপে ওঠার দিনে দর বেড়েছে বাবু জর্জ ভালাভির ২.৮ শতাংশ শেয়ারের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের হিসেব বলছে, সোমবার বাজার বন্ধ হওয়ার সময় সংস্থার প্রতিটি শেয়ারের দাম উঠেছে ৩ হাজার ২৪৫ টাকা। একইসঙ্গে বাবুর ২.৮ শতাংশ শেয়ার এখন হিসেব করলে হয় ৪২.৪৮ শতাংশ শেয়ারে।
বাবু জর্জ ভালাভি সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে আশির দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত মেবার অয়েল অ্যান্ড জেনারেল মিলস (অধুনা পিআই ইন্ডস্ট্রিজ়) ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরে সংস্থা যখন বড় হতে শুরু করে, তখন তাঁকে কেরল এবং তামিলনাড়ুতে সংস্থার তৈরি কীটনাশকের ক্লিয়ারিং এবং ফরওয়ার্ডি এজেন্ট করা হয়।
বাবুর বড় ভাই জর্জ জি ভালাভির জাহাজের ব্যবসা ছিল। জর্জ জি ভালাভির সঙ্গে পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রতিষ্ঠাতা পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। সেই সূত্রেই দক্ষিণ ভারতে সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটরের দায়িত্ব পান। সেই সময়েই বাবু সংস্থার ২.৮ শতাংশ শেয়ার কেনে এবং সেই সংক্রান্ত শংসাপত্র বাড়িতে রেখে দেয়।
গোটা বিষয়টি ভুলেও গিয়েছিলেন ভালাভি। কিন্তু ২০১৫ সালে তাঁর ছেলে ওই সার্টিফিকেটের কাগজ পান বাড়িতে। জানতে পারেন, সংস্থার এখন নাম হয়েছে পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ়। শেয়ার বাজারে নামও রয়েছে। আর তারপরই ওই শেয়ারের শংসাপত্র ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে জমা করার জন্য সংস্থার রেজিস্টারের কাছে যান। সংস্থার রেজিস্টার করে কার্ভি কনসালট্যান্টস নামে একটি সংস্থা।
কিন্তু কার্ভি কনসালট্যান্টস থেকে বলা হয়, সংস্থার সঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ করতে। আর এরপর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই বলা হয়, ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওই শেয়ার অন্যদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ শেয়ারের কাগজপত্র সব ভালাভির বাড়িতেই ছিল। তাহলে কীভাবে ওই শেয়ার অন্যদের বিক্রি করল সংস্থা?
কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এই ধরনের শেয়ার বিক্রি করতে হলে, শেয়ারের কাগজপত্র দরকার পড়ে, কিংবা শেয়ারের বর্তমান মালি কের থেকে ডুপ্লিকেট শেয়ার বের করার অনুমতি লাগে। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই করা হয়নি। সংস্থার থেকে এরপর আধিকারিকরা এসে যাবতীয় তথ্যও দেখে গিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, সব তথ্য ঠিকঠাক রয়েছে। কিন্তু এরপরেও সংস্থার তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে সেবির দ্বারস্থ হয়েছে কোচির ওই পরিবার। তবে সেবির কাছেও একই জবাব দিয়েছে পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ়। ওই শেয়ার অন্যদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছেন সেবির আধিকারিকরা। ভালাভির আশা, সেবি হয়ত নিশ্চয়ই কিছু একটা ব্যবস্থা করবে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি চাকুরেদের জন্য সুখবর, আগামী বছর বাড়তে পারে মাইনে