গ্রাফিক্স সৌজন্যে : অভীক দেবনাথ
পৃথিবীতে এরকম অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা দৈনন্দিন জীবনযাপনে অতিরিক্ত খরচ করে থাকেন। সঞ্চয় করার তাগিদ থাকলেও কোনওভাবে খরচের রাশ ধরতে পারেন না। রাস্তাঘাটে কিছু দেখলেই সবসময় কিনে নিতে ইচ্ছে করে। জীবন অধ্যায়ের একটা সময়ে খরচে রাশ টানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ জীবনযাপনের পাশাপাশি একটি সঞ্চয়ও জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে কোনও জরুরি অবস্থায় সম্বল সেই তহবিল। কোনও কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া হোক বা অন্য কোনও কারণে তখন সেই সঞ্চয় থেকেই খরচ করারই প্রয়োজন পড়ে। তাই সংসারের যাবতীয় খরচের পাশাপাশি সঞ্চয় করা খুব জরুরি।
এবার অযথা ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ের পথে হাঁটতে হবে সকল রোজগেরেদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কৌশল ও মানসিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অত্যধিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফিনোলজির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে বসবাসকারী মানুষেরা তাঁদের আয়ের প্রায় ৩৪ শতাংশ সঞ্চয় করেন। এবং খরচ করেন ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে ১১ শতাংশ নিজেদের আয়ের সমপরিমাণ খরচ করেন। আর ৬ জনের মধ্যে ১ জন আয়ের থেকে বেশি ব্যয় করেন। তবে তাঁরা অনেকেই বুঝতে পারেন না আয়ের থেকে বেশি ব্যয় তাঁরা কেন করছেন। তাই সঞ্চয়ের জন্য় টাকা সরিয়ে রাখার আগে খরচের কারণগুলি চিহ্নিত করা প্রয়োজনীয়।
অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ কী?
- কোনও ব্যক্তি বা মহিলার অভ্যেসই অতিরিক্ত খরচ করা।
- মিডিয়ায় বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন।
- অনেক সময় কোনও সংস্থার বিপণন কৌশলে মানুষ ভাবেন যে, সেই পণ্য কেনার দরকার পণ্যটি ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন অনেকেই। প্রলোভিত হয়ে পণ্যটি কিনে ফেলেন। সাধারণত অনলাইনে কেনাকাটার সময় দেখা যায়, পণ্যের নীচে লেখা রয়েছে, ‘প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে, আর মাত্র কয়েকটা পড়ে রয়েছে।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, উপভোক্তাদের মনে পণ্যের অভাব তৈরি করতে এই কৌশল ব্যবহার করা হয়।
- এক্ষেত্রে সহকর্মীদের প্রভাবও থাকে। সহকর্মীর মুখে কোনও পণ্য়ের বিষয়ে জেনে নিজেও সেদিকে টাকা ব্যয় করার কথা ভাবেন।
- সোশ্যাল মিডিয়ার হাতছানিও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থাগুলি নিজেদের পণ্য়ের বিষয়ে একের পর এক প্রোমোশনে চোখ ধাঁধিয়ে যায় ক্রেতাদের। হাতে টাকা না থাকার সেটিও একটি বড় কারণ। সোশ্যাল মিডিয়ার আরেকটি বড় প্রভাব হল সেখানে কারোর পোস্ট দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের ঘুরতে যাওয়ার ছবি দেখে অনেকেই নিজেদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান বানিয়ে ফেলেন।
- এছাড়াও রয়েছে সংসারের চাপ। অনেকেই অবসর যাপনের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। পরিবারের সদস্যদের খুশি করার জন্য বাজেটে টান থাকলেও হাসিমুখে খরচ করে ফেলেন।
অতিরিক্ত ব্যয় কমানোর উপায় :
- কোথাও বিল মেটানোর জন্য নগদ টাকা দিন। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করলে খরচের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অনলাইনে পেমেন্ট করলে আমাদের কাছে কোনও হিসেব থাকে না আমরা কত টাকা খরচ করছি এবং অ্য়াকাউন্টে আর কত টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
- খরচের হিসেব রাখার জন্য একটি ডায়েরি রাখুন। প্রতিদিন কত টাকা ব্যয় করছেন তার একটি হিসেব রাখুন। প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের মূল্যায়ণ করা সম্ভব হবে।
- কেনাকাটার জন্য একটি মাসিক বাজেট তৈরি করুন। নির্ধারিত বাজেটের বাইরে এক টাকাও খরচ করবেন না। এইভাবে খরচে লাগাম পরানো সম্ভব।
- সঞ্চয়ের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করুন। বেতনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য সঞ্চয়ের জন্য আগেই সরিয়ে রাখুন। অবশিষ্টটুকু খরচ করুন।