নয়া দিল্লি: হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সংকটের আদানি গোষ্ঠী। আর তার জেরে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং সেক্টর নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। এই অবস্থায় শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এই বিষয়ে প্রথম বিবৃতি প্রকাশ করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া বা আরবিআই। আরবিআই-এর বিবৃতি অনুযায়ী, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সার্বিকভাবে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের উপর এবং পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি চালাচ্ছে তারা। বিশেষ করে আদানি গোষ্ঠীতে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে যে ব্যাঙ্কগুলি তাদের উপর আলাদাভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
আরবিআই-এর সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আরবিআই-এর একটি সেন্ট্রাল রিপোজিটরি অব ইনফরমেশন অব লার্জ ক্রেডিট ডাটাবেস সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমে যে ব্যাঙ্কগুলি কোনও সংস্থায় ৫ কোটি টাকা বা তার বেশি লগ্নি করে, তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। আরবিআই-এর বর্তমান মূল্যায়ন অনুসারে, ব্যাঙ্কিং সেক্টর বর্তমানে স্থিতিস্থাপক এবং স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। পর্যাপ্ত মূলধন, মান সম্পন্ন সম্পদ, নগদের প্রাপ্যতা, প্রভিশন কভারেজ এবং লাভের সঙ্গে সম্পর্কিত পরামিতিগুলি স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে। আরবআই যে লার্জ এক্সপোজার ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছে, সেই নির্দেশিকা মেনেই ব্যাঙ্কগুলি চলছে।”
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে, গত এক সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠীর আওতাধীন সংস্থাগুলির সম্মিলিতভাবে অন্তত ১২,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ব বিমা সংস্থা এলআইসি-সহ, এসবিআই, পিএনবি, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের মতো বিভিন্ন ব্যাঙ্ক লগ্নি করেছে আদানি গোষ্ঠীতে। তাই আদানি গোষ্ঠীর অবাক করা পতনে ব্যাঙ্কগুলির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্যাঙ্কে আমানত হিসেবে রাখা অর্থ খোয়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। এই অবস্থায় সরকারি ভাবে আরবিআই কিছু না বললেও, ব্যাঙ্কগুলির কাছে আদানি গোষ্ঠীতে তাদের লগ্নির পরিমাণ এবং কীসের ভিত্তিতে তারা আদানিদের ঋণ দিয়েছিল – এই সব বিষয়ে বিশদ তথ্য চেয়েছিল বলে জানিয়েছিল আরবিআই-এর এক সূত্র।
সিএনবিসি-টিভি১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি গোষ্ঠীর সিইও জানিয়েছিলেন, বাজারে আদানি গোষ্ঠীর মোট ঋণের পরিমাণ ৩০০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৯০০ কোটি ডলার তারা ধার করেছিল বিভিন্ন ভারতীয় ব্যাঙ্ক থেকে। সিএলএসএ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়াদী ঋণ, মূলধন এবং অন্যান্য আর্থিক সহায়তা মিলিয়ে আদানি গোষ্ঠীর মোট ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ, তাদের মোট ঋণের মাত্র ৩৮ শতাংশ। ৩৭ শতাংশ হল বন্ড বা বাণিজ্যিক নথিপত্র। ১১ শতাংশ ধার করা হয়েছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এবং বাকি ১২-১৩ শতাংশ গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ ঋণ।