টাকার এমন অধঃপতন এর আগে দেখেনি দেশবাসী। মঙ্গলবার আশি ছুঁয়ে ডলারের নিরিখে আরও একবার নয়া রেকর্ড গড়ে ফেলল টাকা। তাতে আম-জনতার কী? টাকার এমন ওঠা-নামায় সত্যিই কি খেটে খাওয়া মানুষের উপর কোনও প্রভাব পড়ে? পড়ে বইকি! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসারের টিকি-টি বাঁধা আছে ওই টাকার ওঠা-নামার মধ্যেই। বিশেষ করে ডলারের নিরিখে। সরাসরি কোনও প্রভাব না পড়লেও, বাজারে গেলে যে আঁচ অনুভব করেন, তা ওই টাকার অধঃপতনের জন্যই।
গত এক সপ্তাহ ধরে ডলারের নিরিখে টাকার ক্রমশ পতন দেখা গিয়েছে। ডলার পিছু ৮০.০৬ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে মঙ্গলবার। অর্থাৎ এক ডলারের দাম ছিল ৮০.০৬টাকা। এর ফলে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল একটু সস্তা হলেও ভারতকে কিনতে হবে বেশ চড়া দামেই। বেশি ডলার খরচ করে অপরিশোধিত তেল কিনলে, বৃদ্ধি পাবে পরিবহণ খরচ। ফলত, ভিন রাজ্য থেকে আসা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরও বাড়বে তড়তড়িয়ে। আগামিদিনে বাজারে আলু-শাক-সবজি-মাছের দাম যে আর একটু চড়া হবে, তা বলা বাহুল্য।
শুধুই সংসারের খরচ নয় চিকিৎসাতেও নাজেহাল হতে পারে আম জনতা। ডলারের দাম বাড়ায় চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বহু জিনিসের দাম বাড়তে পারে। কারণ, ওষুধের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি-সহ একাধিক জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় ভারতকে। এর সঙ্গে বাড়তে পারে বিমার খরচও। করোনার জেরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বহু মানুষ। এরপর বাড়তি চিকিৎসা খরচ আম-জনতার কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া কিছুই নয়।
সম্প্রতি টাকার মূল্য কমার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে বিনিয়োগে বিমুখ হচ্ছেন বিদেশি লগ্নিকারীরা। শেয়ার মার্কেট থেকে লগ্নি উঠিয়ে মার্কিন বাজারে বিনিয়োগ করতে বেশি উৎসাহী তাঁরা। এর ফলে মন্দা মুখ দেখছে দালাল স্ট্রিট। অন্যদিকে, ডলারের দাম বাড়ায় বাড়বে বিদেশি গাড়ির দাম। বিদেশে পড়াশুনার ক্ষেত্রেও গ্যাঁটের কড়ি বেশি খরচ করতে হবে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভাটা পড়বে বিদেশ ভ্রমণেও।
করোনাকালে স্তব্ধ হয়েছিল অর্থনীতি। সেখান থেকে কাটিয়ে ওঠার পরপরই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফের নতুন করে করোনার মাথাচাড়া দেওয়া। দোসর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। যার জেরে ব্যাপক ক্ষতি চাষাবাদে। সবকিছু নিয়ে তৈরি হয়েছে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। তা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও। তাই, এমন পরিস্থিতির মধ্যে টাকার পতনে বাদ পড়বে না আপনার বাড়ির হেঁশেলও। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।