‘পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যন সোর্ড’ বা ‘কলম তরবারির থেকেও ধারাল’ এই প্রবাদের সত্যিই আক্ষরিক প্রয়োগ করে দেখালেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২ এপ্রিল পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেই শুল্ক অনুযায়ী আগামী ৯ এপ্রিল থেকে আমেরিকায় আমদানিকৃত বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর বিভিন্ন হারে কর বসবে। আর এই ঘোষণা সামনে আসার পর সবার আগে ধাক্কা খেয়েছিল আমেরিকার বাজার। সেদিন একসঙ্গে পড়ে সে দেশের বড় বড় একাধিক সূচক। অনেক সূচক তো ৯ শতাংশও পড়ে গিয়েছিল।
সেই প্রাথমিক ধাক্কা কিছুটা হলেও সামলে উঠেছিল আমাদের দেশের বাজার। যদিও ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী ভারতের ফার্মা সেক্টরে এই শুল্কের কোনও প্রভাব পড়ত না। কিন্তু এর বাইরে অনেক সেক্টরেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শুল্ক যুদ্ধের আঁচ এসে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। ৭ এপ্রিল, ব্ল্যাক মনডের স্মৃতি ফেরাল গোটা পৃথিবীর স্টক মার্কেট। সোমবার বাজার খোলার পরই হুড়মুড়িয়ে পড়তে থাকে আমাদের দেশ ভারতের একাধিক সূচক। বাজার খোলার পরই ৩,২০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে যায় বিএসই সেনসেক্স সূচক। অন্যদিকে, ভারতের আর এক বেঞ্চমার্ক সূচক নিফটি ৫০ পড়ে ১,০০০ পয়েন্টের বেশি।
শুধু ভারতের নয়, ট্রাম্পের এই শুল্কের আগুনে পুড়েছে এশিয়ার প্রায় সব দেশের শেয়ার বাজারই। ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ৫০ পর্যন্ত ৭ শতাংশের কাছাকাছি পড়েছে জাপানের স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিক্কেই ২২৫। ১৩ শতাংশ পড়েছে চিনের হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক হ্যাংসেং। প্রায় ১২ শতাংশ পড়েছে এস অ্যান্ড পি এশিয়া ৫০ সূচক। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের কিছু সংস্থা এই সূচকের অন্তর্গত। ১৪ শতাংশের বেশি পড়েছে চিনেক্সট সূচক। চিনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের একটি সূচক এই চিনেক্সট। প্রায় ১৭ শতাংশ পড়েছে ইন্দোনেশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক এলকিউ৪৫ (LQ45)।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শেয়ার মার্কেটের সূচকের তুলনায় ভারতের দুই বেঞ্চমার্ক সূচকের কেউই শতাংশের বিচারে এইভাবে মুখ থুবড়ে পড়েনি। নিফটি ৫০ ও বিএসই সেনসেক্স দুই সূচকই পড়েছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। আর ভারতের সূচকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭.১৮ শতাংশ পড়েছে নিফটি স্মলক্যাপ ১০০ সূচক। ৭.৪৪ শতাংশ পড়েছে নিফটি মেটাল সূচক। যদিও বিএসই স্মলক্যাপ সূচক পড়েছে ৫.৫৪ শতাংশ।
তবে, দিনের শুরুতে ৬৪৮টি সংস্থা ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন দর ছুঁয়ে ফেলেছে। আর এই কারণেই বাজার খুলতে না খুলতেই সেনসেক্স প্রায় ৩২০০ পয়েন্ট ও নিফটি প্রায় ১০০০ পয়েন্ট পড়ে যায়। ৭ এপ্রিল ইতিমধ্যেই ৩১০টি শেয়ার লোয়ার সার্কিট হিট করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ট্রেন্ট, লয়েন্ডস মেটাল ও টাটা স্টিলের। আর এই পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজার খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকা হারিয়েছেন।
কোথাও বিনিয়োগ করতে চাইলে সেই বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করুন। এই লেখা শুধুমাত্র শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে। TV9 বাংলা বিনিয়োগের কোনও উপদেশ দেয় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।