রাহুল চক্রবর্তী: ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার ক্রমশ কমছে। অথচ দেশের প্রবীণ নাগরিকদের একটি বড় অংশের নিয়মিত আয়ের একমাত্র ভরসা হল ফিক্সড ডিপোজিট। স্বাভাবিকভাবে স্বল্প সঞ্চয় থেকে তুলনামূলকভাবে ভাল আয় করতে গেলে বিকল্পের সন্ধান ছাড়া কোনও উপায় নেই। তবে অবসর জীবনে পা দিয়ে কেউ সাধারণত খুব একটা ঝুঁকি নিতে চান না। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও এই নীতিই সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রবীণদের সুবিধার জন্য এমনই পাঁচটি বিকল্প পথের সুলুক সন্ধান রইল, যেখানে সুদের হার ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের থেকে তুলনামূলক ভাবে খানিকটা বেশি হবে, আবার টাকা উধাও হওয়ার ভয়ও নেই। কারণ গচ্ছিত অর্থের নিরাপত্তার ভরসা দিচ্ছে খোদ ভারত সরকার।
সরকারের মদতপুষ্ট স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিম-এর (SCSS) জনপ্রিয়তার বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বর্তমানে এই প্রকল্পে সুদের হার ৭.৪ শতাংশ। সাধারণভাবে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়স্ক ব্যক্তিরা ন্যূনতম এক হাজার টাকা দিয়ে SCSS অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর। তবে আরও ৩ বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায়। বর্তমানে সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিমে সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা গচ্ছিত রাখা যায়।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সরকারি প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হল প্রধানমন্ত্রী বয়ঃবন্দনা যোজনা (PMVVY) । বর্তমানে এই প্রকল্পে বার্ষিক ৭.৪ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে। এই পলিসির মেয়াদ ১০ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করা যায়।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ফ্লোটিং রেট সেভিংস বন্ডও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য লগ্নির অন্যতম সুরক্ষিত বিকল্প হতে পারে। ভারত সরকারের আনা এই বন্ড থেকে যথেষ্ট ভাল সুদ পাওয়া যায়। সাধারণত ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটের (NSC) তুলনায় ফ্লোটিং-রেট RBI বন্ডে ০.৩৫ শতাংশ বেশি হারে সুদ দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে এই বন্ডে সুদের হার ৭.১৫ শতাংশ। এই বন্ডে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা লগ্নি করা যায়। তবে ক্ষেত্রে লগ্নির কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই।
প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার নিরিখে পিছিয়ে নেই পোস্ট অফিস মাসিক আয় প্রকল্পও (POMIS)। এই প্রকল্পে মাসিক কিস্তিতে সুদের টাকা লগ্নিকারী পেয়ে থাকেন। এই স্কিমের সুবিধা কেবলমাত্র পোস্ট অফিসে পাওয়া যায়। প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর। বর্তমানে MIS-এ সুদের হার বার্ষিক ৬.৬ শতাংশ। সিঙ্গল অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা জমা রাখা যায়।
ন্যাশনাল পেনশন স্কিমও প্রবীণদের জন্য আরও একটি জনপ্রিয় লগ্নির স্থান। ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর বয়সী কোনও ব্যক্তি এই স্কিমে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। তবে প্রকল্পে লগ্নির মেয়াদ ৭০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আয়কর দাতারা আয়কর আইনের ৮০(সি) ধারা অনুসারে NPS-এ অনুদানের উপরে বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পেতে পারেন। এখানে লগ্নিকারীরা নিজেদের পছন্দ অনুসারে কম ঝুঁকিপূর্ণ থেকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগে আমানত গচ্ছিত রাখতে পারেন। আরও পড়ুন: ব্যবসা শুরু করতে চান? ৫০ লক্ষ টাকা অবধি লোন দেবে ফেসবুক