নয়া দিল্লি: ২০২১ সালেই স্টার্ট-আপের জগতে ব্রিটেনকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ভারত। ১ লক্ষের বেশি নথিভুক্ত স্টার্ট-আপ সংস্থার নিয়ে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ স্টার্ট-আপের দেশ হয়ে উঠেছিল। দুধ হোক, ঘরবাড়ি হোক, কিংবা বিউটি প্রোডাক্ট, এই স্টার্টআপ সংস্কৃতির হাত ধরে দ্রুত বদলে যাচ্ছে ভারতের পরিচয়। কীভাবে? সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি), এই নিয়েই আলোচনা হল দেশের এক নম্বর নিউজ নেটওয়ার্ক TV9-এর বার্ষিক সম্মেলন, ‘হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে’র মঞ্চে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া: স্কেলআপ অ্যান্ড সাসটেইন’ বিষয়ে অধিবেশনে অংশ নিলেন আমূলের এমডি জয়ন মেহতা, মামাআর্থের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গজল অলঘ, ১০৮ ক্যাপিটালের ফাউন্ডিং পার্টনার সুষমা কৌশিক এবং নোব্রোকারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা সিটিও অখিল গুপ্তা। স্টার্টআপগুলির ক্ষেত্রে তহবিলের জোগানে টান থাকে। তার মধ্যে ব্যবসা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জ থাকে এবং স্টেকহোল্ডার ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করলেন তাঁরা।
বিশ্বের এক চতুর্থাংশ দুধ আসে ভারত থেকে
ভারতের সবথেকে পুরোনো স্টার্ট-আপ হল আমূল। ১৯৪৬ সালে যাত্রা শুরু করে, আজ দুধ ও দুধজাত পণ্যের বাজারে দেশের এক নম্বর ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে এই সংস্থা। এদিনের আলোচনা শুরু হয় সংস্থার এমডি জয়ন মেহতাকে দিয়ে। শুরুতেই, স্টার্ট-আপ প্যানেলে একজন ‘দুধওয়ালা’কে ডাকার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান TV9-কে। তিনি জানান, ১৮,৬০০ গ্রামের ৩৬ লক্ষ দুগ্ধচাষী তাঁদের সঙ্গে যুক্ত। সংস্থার বার্ষিক টার্নওভার এখন ১০ বিলিয়ন ডলার। জয়ন মেহতা জানান, আমূলের মূলধন হল মানষের আস্থা। আর তাই বিজ্ঞাপণের পিছনে সংস্থা তার লাভের মাত্র ১ শতাংশ ব্যয় করে। পশুসম্পদ থেকে আরও বেশি ফলন নিশ্চিত করাই দুগ্ধশিল্পের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, আজ বিশ্বের সামগ্রিক দুগ্ধ-চাহিদার এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ করে ভারত। ইউরোপের কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যাদি থেকে এক তৃতীয়াংশ রিটার্ন পান। সেখানে, আমূলের একেকটি পণ্য থেকে ৮৫ শতাংশ রিটার্ন পান কৃষকরা।
মায়ের ব্যক্তিগত খোঁজ থেকেই জন্ম নিয়েছিল মামাআর্থ
আমূলের ব্যবসার পরিধি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন মামাআর্থের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গজল অলঘ। তিনি জানান, তাঁর নিজের সন্তানের জন্য টক্সিন-মুক্ত পণ্যের খোঁজ করছিলেন তিনি। আর এই একজন মায়ের ব্যক্তিগত খোঁজ থেকেই জন্ম নিয়েছিল মামাআর্থ সংস্থা। গজল অলঘ বলেন, ফিজিক্যাল স্টোর অর্থাৎ প্রচলিত দোকান খোলার অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রচুর মূলঝনও প্রয়োজন। তাই, তিনি ডিজিটাল-ফার্স্ট পদ্ধতিতে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। শুধুমাত্র একটি গুদাম থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায় তাঁদের পণ্য। তিনিও গ্রাহকদের আস্থার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি জানান, একজন মা হিসেবে তাঁকে বিশ্বাস করেন অন্যান্য মায়েরা। সেটাই তাঁর সংস্থার তৈরি পণ্যগুলির বিক্রি বাড়িয়ে দেয়।
রিয়েল এস্টেট হয়েছে সহজ
নোব্রোকারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিটিও অখিল গুপ্তা জানিয়েছেন, বহু মানুষ বাড়ি খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়েন। এই ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য়েই তাঁরা নোব্রোকার সংস্থা তৈরি করেছিলেন। ব্রোকারেজ সরিয়ে দেওয়ার ফলে, বিক্রেতা এবং দালাল দুই পক্ষই লাভবান হয়েছে। আর এর থেকেই নোব্রোকার আজ ভারতের একমাত্র প্রপটেক ইউনিকর্নে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল নোব্রোকারের কথা। গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে পরিষেবাও বাড়িয়েছে সংস্থা। গ্রাহকদের জন্য সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর করেছে তাঁর সংস্থা। নোব্রোকার অ্যাপ ও ওয়েবসাইট চালু হওয়ার পর, রিয়েল এস্টেট খাতে লেনদেনের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।
স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে দায়িত্ববোধের প্রয়োজন
১০৮ ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার সুষমা কৌশিক বলেছেন, ২০২৩ সালে পাবলিক ইকুইটি ফান্ড এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ফান্ড – দুইই শুকিয়ে গিয়েছিল। গত বছর ভারতে ৭০০০ কোটি ডলারের বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এসেছিল। তবে, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে পুঁজির ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন না তিনি। তিনি জানিয়েছেন, ভাল এবং দুর্দান্ত মানের স্টার্টআপগুলি এবং উদ্ভাবনি স্টার্টআপগুলিই তহবিল পাচ্ছে। লগ্নিকারীরা উপলব্ধি করেছে, কিছু ভুল করলেও, ভাল মানের ব্যবসাগুলি সেই ভুলের রাস্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। টাকা কোথায় যাচ্ছে সেদিকে এখন সবসময় নজর রাখেন লগ্নিকারীরা। তিনি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে দায়িত্ববোধের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।