নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর), সকাল তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। বিকেল ৫টায় শেষ হল ভোটগ্রহণ। এর ফলে শেষ হল রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, তেলঙ্গানা, ছত্তীসগঢ় এবং মিজোরাম – এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। ফলাফল প্রকাশ করা হবে ৩ ডিসেম্বর। রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। দুই রাজ্যেই বিজেপির সঙ্গে তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। অন্যদিকে, মধ্য প্রদেশের শাসন ক্ষমতা বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে তৎপর কংগ্রেস। আর তেলঙ্গানায় গতে পারে ত্রিমুখী লড়াই। ফলাফল প্রকাশের আগেই কোন রাজ্যে কে ক্ষমতায় আসতে চলেছে, তার একটা আভাস পাওয়া যায় বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি থেকে। এদিন ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই প্রকাশ করা হবে সেই সকল সমীক্ষার ফল। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফলের প্রতি মুহূর্তের আপডেট পেতে চোখ রাখুন এখানে –
জন কি বাতের সমীক্ষায় মিজোরামে ক্ষমতা বদলের পূর্বাভাস দিলেও, সিএনএক্স, সিভোটার এবং ইটিজি – তিন সমীক্ষা সংস্থাই শাসক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের ক্ষমতা ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে। সিএনএক্সের এক্সিট পোল অনুযায়ী এমএনএফ পেতে পারে ১৪-১৮টি আসন এবং জেডপিএম পেতে পারে ১২-১৬টি আসন। আর কংগ্রেস ৯-১০ আসন এবং বিজেপি ০-২ আসন পেতে পারে। সি-ভোটারের সমীক্ষা বলছে, এমএনএফ পেতে পারে ১৫-২১ আসন, জেডপিএম ১২-১৮ আসন, কংগ্রেস ২-৮ আসন। ইটিজির সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৪-১৮ আসন জিতে ক্ষমতা ধরে রাখবে এমএনএফ। জেডপিএম ১০-১৪টি, কংগ্রেস ৯-১৩টি এবং বিজেপি ০-২টি আসন পেতে পারে।
ইটিজি-র এক্সিট পোলেও ছত্তীসগঢ়ে সরকার গঠনের বিষয়ে এগিয়ে রাখা হয়েছে কংগ্রেসকে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই রাজ্যে কংগ্রেস পেতে পারে ৪৮ থেকে ৫৬ আসন। আর বিজেপি পেতে পারে ৩২ থেকে ৪০ আসন। সি-ভোটারের সমীক্ষায় অবশ্য ছত্তীসগঢ়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তাদের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, কংগ্রেস পেতে পারে ৪১ থেকে ৫৩টি আসন। আর বিজেপি পেতে পারে ৩৬ থেকে ৪৮টি আসন।
পোলস্ট্র্যাটের সমীক্ষা অনুযায়ী, ছত্তীসগঢ়ে পুরুষ ভোটারদের ৪৭ শতাংশের ভোট পেতে চলেছে কংগ্রেস, বিজেপি পেতে পারে ৪৪ শতাংশের বোট। একই সময়ে মহিলাদের ভোটারদের ৪৩ শতাংশের ভোট পেতে পারে কংগ্রেস, আর বিজেপি ৪৪ শতাংশ।
পোলস্ট্র্যাটের সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজস্থানে সরকার গঠনের বিষয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে বিজেপি। তবে, রাজস্থানের বুথ ফেরত সমীক্ষায়, বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থার পক্ষ থেকে মিশ্র পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এগিয়ে রেখেছে বিজেপিকে। কেউ কেউ রাজ্যের প্রতা ভেঙে পরপর দুবার সরকার গঠন করবে কংগ্রেস বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। অ্যাক্সিসমাইন্ডিয়ার সমীক্ষার ফল বলছে, রাজস্থানে বিজেপি ৮০ থেকে ১০০টি আসন পেতে দেখা চলেছে। আর কংগ্রেস পেতে পারে ৮৬ থেকে ১০৬টি আসন। ইটিজি রিসার্চের এক্সিট পোলে বলা হয়েছে, বিজেপি ১০৮ থেকে ১২৮টি আসন পেতে পারে, আর কংগ্রেস আটকে যাবে ৫৬ থেকে ৭২ আসনে। ম্যাট্রিজের এক্সিট পোল অনুসারে, বিজেপি ১১৫ থেকে ১৩০টি আসনে জিতে সবথেকে বড় দল হবে বিজেপি। আর পেতে পারে ৬৫ থেকে ৭৫ আসন। সি ভোটারের সমীক্ষার ফলেও কংগ্রেসকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের পূর্বাভাস, বিজেপি জিততে পারে ৯৪ থেকে ১১৪টি আসনে, আর কংগ্রেস ৭১ থেকে ৯১টি আসনে। তবে, সিএনএক্স সমীক্ষায় বিজেপি-কে পিছিয়ে রা্রাখা হয়েছে। তাদের সমীক্ষার ফল বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৮০ থেকে ৯০টি আসন, আর কংগ্রেস ৯৪ থেকে ১০৪টি আসন।
পোলস্ট্র্যাটের সমীক্ষায় মধ্য প্রদেশে সরকার গঠনের বিষয়ে কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখা হলেও, টুডেইজ চাণক্য, ম্যাট্রিজ-সহ অন্যান্য সমীক্ষা সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষা কিন্তু বিজেপিকে এগিয়ে রেখেছে। টুডেইজ চাণক্য পরিচালিত বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি ১৫০টিরও বেশি আসন পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস আটকে থাকবে ৭০-৮০টি আসনে। আর ম্যাট্রিজ পরিচালিত এক্সিট পোলে বলা হয়েছে, বিজেপি পেতে পারে ১১৮ থেকে ১৩০ আসন। আর কংগ্রেস পেতে পারে ৯৭ থেকে ১০৭টি আসন। সিএনএক্স-এর বুথ পেরত সমীক্ষাতেও বলা হয়েছে, বিজেপি পেতে পারে ১১৬টি আসন, আর কংগ্রেস ১১১টি।
পোলস্ট্র্যাটের বুথ ফেরত সমীক্ষায় আরও দেখ গিয়েছে, মধ্য প্রদেশে তফশিলি জাতি ও উপজাতি ভোটারদের সমর্থন পেয়েছে কংগ্রেস। আর উচ্চবর্ণের সমর্থন রয়েছে বিজেপির দিকে। প্রায় ৫০ শতাংশ এসসি ভোটার এবং প্রায় ৪৯ শতাংশ এসটি ভোটার কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। সেখানে উচ্চবর্ণের ৪৯শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি।
পোলস্ট্র্যাটের বুথ ফেরত সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ৪৮ শতাংশ পুরুষ ভোটার কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। আর মহিলা ভোটারদের পছন্দের দল বিজেপি। ৪৭ শতাংশ মহিলা ভোটাররা বিজেপিকেই ভোট দিয়েছেন।
মিজোরামে বুথ ফেরত সমীক্ষা করেনি পোলস্ট্র্যাট। জন কি বাত সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, মিজোরামে এবার জয় পেতে চলেছে জোরাম পিপপলস মুভমেন্টয জেডপিএম ১২ থেকে ২৫টি আসনে জিততে পারে। ১০ থেকে ১৪টি আসন পেতে পারে বর্তমান শাসকদল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। আর কংগ্রেস ৫ থেকে ৯টি আসন পেতে পারে। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে এবার খাতা খুলতে পারে বিজেপিও। তারা সর্বোচ্চ ২টি আসন জিততে পারে।
২০১৮ সালে বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই জোর লড়াইয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ৪০ আসনের মিজোরাম বিধানসভায় ঝড় তুলেছিল জোরামথাঙ্গার মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ২৬ আসনে জয়ী হয়ে, কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল তারা। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৫টি আসন। ৮ আসনে জিতে প্রধান বিরোধী দল হয়েছিল জোরাম পিপলস মুভমেন্ট।
ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট, প্রধান বিরোধী দল জোরাম পিপলস মুভমেন্ট এবং কংগ্রেস – তিনটি দলই মিজোরামের ৪০টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ২৩টি আসনে। আর আম আদমি পার্টি প্রার্থী দিয়েছে চারটি আসনে। এছাড়া ২৭ জন নির্দল প্রার্থীও আছেন।
তেলঙ্গানাতেও এবার পালা বদলের ইঙ্গিত মিলছে। জোর লড়াই হতে পারে বিআরএস এবং কংগ্রেসের মধ্যে। তবে সামান্য হলেও এগিয়ে থাকতে পারে হাত শিবির। পোলস্ট্রেটের বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুসারে, কংগ্রেস জিততে পারে ৪৯ থেকে ৫৯টি আসন। আর বিআরএস পেতে পারে ৪৮ থেকে ৫৮টি আসন। ফলে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ওয়াইসির এআইমিম দলের ভূমিকা। তারা পেতে পারে ৬ থেকে ৮টি আসন। অন্যদিকে, এই দক্ষিণী রাজ্যে প্রথমবার খাতা খুলতে পারে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতে যেতে পারে ৫ থেকে ১০টি আসন।
রাজ্য গঠনের পর থেকে পরপর দুই নির্বাচনে জয়ী হয়েছে কেসিআর-এর দল, বিআরএস। আগে তাদের নাম ছিল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি বা টিআরএস। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১১৯ আসনের তেলঙ্গানা বিধানসভায় ৮৮ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল টিআরএস (এখন বিআরএস)। ২০১৪ সালের থেকে ২৫টি আসন বেশি পেয়েছিল তারা। মাত্র ১৯টি আসনে জিতে অনেক পিছনে থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইমিম জিতেছিল ৭টি আসনে।
পোলস্ট্র্যাটের সমীক্ষা অনুযায়ী, ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন ভূপেশ বাঘেল। ফের সরকার গড়তে পারে কংগ্রেস। তবে, গতবারের মতে জয় সহজ হবে না। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। পোলস্ট্র্যাটের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, উপজাতি অধ্যুষিত এই রাজ্যে কংগ্রেস পেতে পারে ৪০ থেকে ৫০টি আসন। আর বিজেপি আটকে যেতে পারে ৩৫ থেকে ৪৫টি আসনে। অন্যান্যরা তিনটি আসন পেতে পারে।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়, অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারে। কার্যক্ষেত্রে ৯০ আসনের বিধানসভায় ৬৮টি আসন জিতে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ১৫টি আসন। আর অজিত যোগীর দল পেয়েছিল ৫টি আসন।
এখনও পর্যন্ত, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে প্রবণতা ধরা পড়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থানে সরকার পরিবর্তন হতে পারে। মধ্য প্রদেশে চেয়ার চলে যেতে পারে শিবরাজ সিং চৌহানের। ক্ষমতায় ফিরতে পারে কংগ্রেস। উল্টো ছবি দেখা যেতে পারে রাজস্থানে। এখানে অশোক গেহলটের সরকারকে উল্টে দিতে পারে বিজেপি।
ভোট প্রাপ্তির দিক থেকেও রাজস্থানে বিজেপির এগিয়ে থাকার প্রবণতা ধরা পড়েছে বহুথ ফেরত সমীক্ষায়। বিজেপি এখানে পেতে পারে ৪১.৮ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেতে পারে ৩৯.৯ শতাংশ ভোট। অন্যান্যদের খাতায় যেতে পারে ১৮.৩ শতাংশ ভোট।
রাজস্থানেও ঘটতে পারে পালা বদল। ক্ষমতায় ফিরতে পারে বিজেপি। লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হলেও, শেষ পর্যন্ত জোর ধাক্কা খেতে পারেন অশোক গেহলট। পোলস্ট্র্যাটের বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুসারে, বিজেপি এই রাজ্যে পেতে পারে ১০০ থেকে ১১০টি আসন। কংগ্রেস আটকে যেতে পারে ৯০ থেকে ১০০ আসনে। অন্য দলগুলো পেতে পারে ৫ থেকে ১৫টি আসন।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, রাজস্থানে ১০৭টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। বিজেপি জিতেছিল ৭০টি আসন। এছাড়া, সিপিআইএম এবং ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি দুটি করে আসন জিতেছিল। এর বাইরে আরএলপি তিনটি আসন এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল একটি আসনে জয়ী হয়েছিল। জয়ী হয়েছিলেন ১৩ জন নির্দল প্রার্থীও।
পোলস্ট্র্যাটের এক্সিট পোল সমীক্ষা অনুযায়ী, মধ্য প্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেস ৪৫.৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে। বিজেপি পেতে পারে ৪৩.৩ শতাংশ ভোট।
২৩০ আসনের মধ্য প্রদেশ বিধানসভায় সরকার গঠনের ম্যাজিক সংখ্যা ১১৬। অর্থাৎ, যে দল ১১৬টি বা তার বেশি আসন জিতবে, তারাই সরকার গঠন করবে।
সামনে এল বুথ ফেরত সমীক্ষার প্রথম প্রবণতা। মধ্য প্রদেশে জয় পেতে পারে কংগ্রেস। পোলস্ট্র্যাটের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই রাজ্যে কংগ্রেস ১১১ থেকে ১২১টি আসন পেতে পারে। আর বিজেপি পেতে পারে ১০৬ থেকে ১১৬টি আসন।
প্রথমে আসতে চলেছে মধ্য প্রদেশের বুথ ফেরত সমীক্ষারল ফল। তাই সবার আগে মধ্য প্রদেশে এর আগের নির্বাচনে কী ফল ছিল, তা জেনে নেওয়া যাক। মধ্য প্রদেশে মোট ২৩০টি বিধানসভা আসন রয়েছে। ২০১৮-য় বিজেপি জিতেছিল ১০৯ আসনে। ১১৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। আর ২টি আসন পেয়েছিল বিএসপি এবং ৭টি আসন গিয়েছিল অন্যান্যদের কাছে।
বিকেল ৩টে পর্যন্ত তেলঙ্গানায় ৫১.৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। তেলঙ্গানায় ভোট শেষ হওয়ার পরই এক্সিট পোলের ফলাফল সামনে আসবে। আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা।
তেলঙ্গানার ১১৯টি বিধানসভা আসনে এখনও ভোটগ্রহণ চলছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মিটবে ভোটগ্রহণ পর্ব। ভোটগ্রহণ শেষ হলেই এক্সিট পোলের ফলাফল বের হতে শুরু করবে।