আসানসোল: সব জল্পনার অবসানের মাঝে রীতিমতো চমক। একবারে অপ্রত্যাশিতভাবে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র হলেন বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের পরিচালিত আসানসোল পুরনিগমের তিনি তৃতীয় মেয়র। তবে, তিনি আসানসোল পুরনিগম এলাকায় ভোটার নন। তিনি বারাবনির ভোটার। বর্তমানে তিনি আসানসোলের সৃষ্টি নগরে থাকেন। এবারের পুর ভোটে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি লড়াই করেননি। সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য কথা হল, আসানসোলের মেয়র হওয়ার দৌঁড়ে তাঁর নামই ছিল না। আবার তিনি নির্বাচনও লড়েননি। ফলে এটা চমকই বটে! শুক্রবারই ছিল বিধান উপাধ্যায়ের জন্মদিন। এটাকে জন্মদিনে নেত্রীর দেওয়া ‘উপহার’ হিসাবেই মনে করছেন বিধান উপাধ্যায়।
পুর আইনে বলা রয়েছে, যে কেউ পুরনিগম বা পুরসভার কোন প্রশাসনিক পদে বসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বা কাউন্সিলর হতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে ৬ মাসের মধ্যে তাঁকে কোনও ওয়ার্ড থেকে জিতে আসতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় এই মর্মে এর আগের বিধান সভায় একটা সংশোধনী আনা হয়। তা পাশ হয়ে আইনে রূপান্তরিত হয়েছে।
বিধান উপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদেও রয়েছেন। বারাবনি থেকে তিন বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন বিধান৷ পুরভোটে তিনি প্রার্থী হননি। তবে তাঁকেই যে নেত্রী আসানসোলের মেয়র করবেন, তা ভাবতে পারেননি দলের অনান্য নেতৃত্বও।
অন্যদিকে, এই প্রথমবার আসানসোল পুরনিগমে দুজন ডেপুটি মেয়র হচ্ছেন। তাঁরা হলেন অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক। এই অভিজিৎ ঘটকই এবারে মেয়র পদের দৌড়ে ছিলেন। রাজ্যের আইন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটক বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি। বিদায়ী পুর বোর্ডের তিনি মেয়র পারিষদ ও পুর প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি আসানসোল পুরনিগমের চারবারের কাউন্সিলর। এবারের পুর ভোটে তিনি ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়াই করে জিতেছেন।
ওয়াসিমুল হক গত পুর ভোটের আসানসোলের রেলপার এলাকা থেকে সিপিএমের টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হন। পরে তিনি দলবদল করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি তিনবারের কাউন্সিলর। এবার তিনি ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। এদিন নতুন দায়িত্ব পেয়ে তাঁরা বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করবো। আসানসোলের মানুষের কাছে আরও ভালো করে পুর পরিষেবা পৌঁছে দিতে যা যা করার তা করবো।”
এদিকে, মেয়র পদের দৌড়ে থাকা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়কে এবারেও পুরনিগমের চেয়ারম্যান করা হল। এবার তিনি ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। অমরবাবু মোট সাতবারের কাউন্সিলর। তিনি প্রায় এক বছর ধরে আসানসোল পুরনিগমের বিদায়ী পুরপ্রশাসক বোর্ডের প্রশাসক বা চেয়ারপার্সন ছিলেন। এবারেও চেয়ারম্যানের পদ পেয়ে তিনি বলেন, “দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করব।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “তৃণমূলের ইস্তেহারে যে যে বিষয়গুলি প্রাধান পেয়েছিল, মেয়র হিসাবে সেগুলির ওপর আগে জোর দেব।” শুক্রবার দলেরই একটা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তখনই জানতে পারেন মেয়র হওয়ার খবর। তিনিও বাকিদের মতনই স্তম্ভিত। অন্যদিকে প্রাক্তন মেয়র বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, “বন্ধু বিধান উপাধ্যায়কে অভিনন্দন কিন্তু তৃণমূল নেতা বিধান উপাধ্যায়কে মেয়র হওয়ার অভিনন্দন দিতে পারলাম না। কারণ তিনিও জানেন কীভাবে ভোট লুট হয়েছে। সন্ত্রাস হয়েছে। গণতন্ত্রের হত্যা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: Kolkata Fire: শাটারের নীচ থেকে গল গল বেরোচ্ছে ধোঁয়া, ফল ব্যবসায়ীর প্রায় দু’লক্ষ নগদ টাকা তখন ছাই