নয়া দিল্লি: লোকসভা ভোটের সূচি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। একে একে সামনে আসছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নাম। লোকসভা নির্বাচনে যেমন রাজনৈতিক মতবাদের টক্কর দেখা যাচ্ছে, তার পাশাপাশি বেশ কিছু দ্বন্দ্ব রয়েছে, যা ভীষণভাবে ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত মান-অভিমানের লড়াই। এমনই এক লড়াই দেখা যাবে বিহারের হাজিপুর কেন্দ্রে। এই কেন্দ্র বেশি পরিচিত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা লোক জনশক্তি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা রামবিলাস পাসওয়ানের কেন্দ্র হিসেবে। রামবিলাসের মৃত্যুর পর এই প্রথম লোকসভা নির্বাচন হবে। আর এবার রামবিলাসের কর্মভূমিতে লড়াইটা তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান এবং তাঁর ভাই পশুপতি কুমার পারসের মধ্যে। ২০২১ সালে এলজেপি দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাকা-ভাইপোর যে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়েছিল, এবার জনগণের দরবারে তার নিষ্পত্তি হতে চলেছে।
২০১৯ সালে হাজিপুর থেকে লোকসভায় গিয়েছিলেন পশুপতি কুমার পারস। তবে, সেই সময় তিনি লড়েছিলেন এলজেপির টিকিটে। ২০২১-এ এলজেপি ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় লোক জনতা পার্টি গঠন করেছেন। এবার নয়া দলের পতাকায় একই আসন থেকেই লড়বেন। প্রশ্ন ছিল চিরাগকে নিয়ে। বুধবার রামবিলাস পাসওয়ানের ছেলে সাফ জানিয়ে দিলেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাবার কর্মভূমিতে তিনি তাঁর কাকা, পশুপতি কুমার পারসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এদিন নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “হাজিপুর থেকে লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) তথা এনডিএ প্রার্থী হচ্ছি আমি। এই নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এটা আমার বাবার কর্মভূমি ছিল। তাঁকে (পশুপতি কুমার পারস) এখৎান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানাচ্ছি। আমি সাহসের সঙ্গে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করেছি। কখনই কোনও চ্যালেঞ্জকে ভয় পাইনি। এই চ্যালেঞ্জও আমি গ্রহণ করছি।”
চিরাগ পাসওয়ান আরও জানিয়েছেন, হাজিপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা তাঁর কাছে নিছক কোনও রাজনৈতিক পছন্দ ছিল না। কারণ, কারার বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রভাব তাঁর পরিবারের উপরও পড়ে। কাকার উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার আগে পরিবারের সকল সদস্যের অনুভূতি বিবেচনা করা উচিত। তিনি আরও জানান, এর আগে পরিবার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও পশুপতি পারস একাই নিয়েছিলেন। এবারও পরিবারের দুই সদস্যের মুখোমুখি ভোট লড়ার সিদ্ধান্তের দায়ও তাঁরই কাঁদে চাপিয়েছেন চিরাদ। এদিন, দিল্লিতে এলজেপিক সংসদীয় দলের এক বৈঠক হয়। চিরাগ জানিয়েছেন, এরপর তাঁরা বিহারে যাবেন। বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে। শিগগিরই তাঁরা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন রামবিলাস পুত্র। প্রসঙ্গত, বিহারে এলজেপি-কে ৫টি আসন ছেড়েছে বিজেপি।
এদিকে, এতদিন এনডিএ শিবিরে থাকার পর মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টির সভাপতি পশুপতি কুমার পারস। ২০২১ সালে দলীয় নির্বাচনে চিরাগকে হারিয়ে তিনিই এলজেপির সভাপতি হয়েছিলেন। এরপর, কাকা-ভাইপোর দ্বন্দ্বে দল ছেড়ে নতুন দল গঠন করেছিলেন তিনি। ওই বছরই এনডিএ-তে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারও অংশ হন। কিন্তু, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিহারে তাঁর দলকে একটিও আসন দেয়নি বিজেপি। এই বঞ্চনার একদিন পরই এনডিএ ছেড়েছে আরএলজিপি।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে পশুপতি পারস বলেছেন, “আমাদের দলের পাঁচজন সাংসদ ছিল এবং আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছি। তারপরও আমাদের কোনও আসন ছাড়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। তাই আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। আমি হাজিপুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমাদের বর্তমান সাংসদরা প্রত্যেকে তাঁদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত।” কাকা না ভাইপো, রামবিলাসের যোগ্য উত্তরসূরি কাকে মনে করছে হাজিপুর? জানা যাবে ৪ জুন।