হুগলি: ফের শিরোনামে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। তাঁর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক সংঘাত। নেত্রী বারবার সতর্ক করেছেন দলবিরোধী কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে করা যাবে না। কিন্তু, তাতেও কী রাশ টানা যাচ্ছে! জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও নেত্রী জানিয়েছিলেন কোনওভাবেই যেন দলবিরোধী কোনওরকম মন্তব্য প্রকাশ্যে না আসে। এ বার পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে সরাসরি আইপ্যাক-কে (IPAC) নিশানা করলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রচারে হাঁটতে হাঁটতে কল্যাণ বলেন, “এখন আইপ্যাক কোথায় গেল? দালালি করার সময়ে অনেককেই পাওয়া যায়। তারপর আসল কাজে তো দেখি না। কই, কোথায় তারা! যারা সব নাম গুঁজে গুঁজে দিয়ে প্রার্থী করেছিল, তারা কোথায় এখন! এখন তো আমরাই হেঁটে হেঁটে কাজ করছি। প্রচার করছি। পিঠের শিরদাঁড়া সোজা করে কাজ করছি।”
বস্তুত, বর্তমানে আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক পূর্বের মতো ‘সুমধুর’ নয়। পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই দলের অন্দরের ক্ষোভ বাইরে আসতে শুরু করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসূত্রের নেপথ্যে প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল দলকে সুসংহত করা, শক্তিশালী করা। প্রাথমিকভাবে আইপ্যাক বিভিন্ন সমীক্ষা চালিয়ে নির্বাচনে কীভাবে কোথায় কে প্রার্থী হতে পারেন তার একটি সম্ভাব্য পরিসংখ্যান ও তালিকা প্রস্তুত করত। কিন্তু, কল্যাণের মতো এভাবে কেউ না মন্তব্য করলেও আইপ্যাকের কর্মপদ্ধতি নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্ট ছিলেন না তা মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। দলের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, আইপ্যাকের যতটা কাজ করার তার চেয়ে বেশি দলের অন্দরে প্রবেশ করছে।
২০২১-এ বিধানসভায় ব্যাপক জয়ের পরে সেই জয়ের ‘মুকুট’ আসলে কার, তা নিয়ে দলের অন্দরেই কার্যত দুটি শিবির তৈরি হয়। নবীন তৃণমূল গোষ্ঠীর অনেকাংশই দাবি করেন এই জয়ের নেপথ্যে আইপ্যাকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। যদিও দলের প্রবীণ গোষ্ঠী মনে করেন যে আইপ্যাক নয়, বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এই জয়ের কাণ্ডারী। পরবর্তীতে, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেয় ওই জয়ের নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রয়েছেন। আইপ্যাক নয়। সেক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রীর পাশে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ মুখ হচ্ছে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নিজের বক্তব্যে কল্যাণ সেই বার্তাই বেশ খানিকটা স্পষ্ট করে দিলেন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
বস্তুত, পুরভোটকে কেন্দ্র করে দলের অন্দরে যেভাবে শীর্ষ নেতৃত্বদের মধ্যেই বিরোধ শুরু হয়, তাতে কার্যত আরও স্পষ্ট হয়ে যায় যে দলের অন্দরে সবকিছু ঠিক নেই। এরইমধ্যে তৃণমূল ও আইপ্যাকের সম্পর্কে যে ‘চিড়’ ধরেছে তাও প্রকাশ্যে চলে আসে। কানাঘুষো শোনা যায়, এই আইপ্যাককে তৃণমূলের দায়িত্বে নিয়ে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, আইপ্যাকের কথা মতোই তৃণমূলের বিস্তারের নীলনকশা তৈরি করছিলেন অভিষেক। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে শক্তি বিস্তারের কৌশল কী হওয়া উচিত – তা ঠিক করে দিচ্ছিল আইপ্যাকই। কিন্তু সাম্প্রতিক ছবিতে স্পষ্ট সেই ‘সম্পর্ক’ এখন তলানিতে।
তবে কেবল কল্যাণ নয়, এর আগে আইপ্যাকের বিরুদ্ধে ঠারেঠোরে নিশানা করেছেন ফিরহাদ হাকিমও। পুরভোটে দুটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে যে ধরনের কোন্দল সামনে এসেছিল, তাতে ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। জেলায় জেলায় তালিকা পাঠিয়ে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। খোদ দলের বিধায়ক প্রার্থীতালিকা নিয়ে প্রতিবাদ করেন। ফিরহাদ জানান, দলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অপব্যবহার করা হচ্ছে। মুখে না বললেও ঠারেঠোরে আইপ্যাকের দিকেই আঙুল ছিল তাঁর। এ বার ফের কল্যাণের মন্তব্যে স্পষ্ট যে তৃণমূলের অন্দরের বিরোধ এখনও ছাইচাপা আগুন! অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।