কলকাতা: সদ্যই পুরভোটের (West Bengal Municipal Elections 20220 পূর্ব নির্ধারিত দিন পিছিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State Election Commission)। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আদালতকে সম্মান জানিয়েই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২২ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা ছিল। তা পিছিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। পুরনিগমের ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় কার্যত নিজেদের ‘জয়’ দেখছে বিরোধীরা। বাম-কংগ্রেস-বিজেপির দাবি, ঠেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাল্টা শাসক শিবিরের দাবি, কেন বাংলার ভোটই চর্চার কারণ? আর কোথাও কি নির্বাচন হচ্ছে না?
শাসক শিবিরের পর্যবেক্ষণ
শনিবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আগে ভোট ভোট করে সারাবছর চেঁচালেন। তারপর যখন ভোটের সময় এল, তখন নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে টিভিতে বক্তৃতা দিতে বসে গেলেন! কেবল কি বাংলাতেই ভোট হচ্ছে? বাংলার বাইরে আরও যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে তাতে কোনও সমস্যা নেই? যে পাঁচ রাজ্যে ভোট, সেখানকার ভোট নিয়ে তো আলোচনা দেখছি না। ওই রাজ্যগুলিতে কী করোনা নেই? ”
পার্থর আরও সংযোজন, “বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বারবার আমরা অনুরোধ করেছিলাম নির্বাচন কমিশনের কাছে, যেন আট দফায় ভোট দীর্ঘায়িত না করা হয়। কিন্তু, কমিশন সে কথা শোনেনি। আট দফাতেই নির্বাচন হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তাতে মানুষ আরও বেশি ভোট দিতে পারবেন।”
বিরোধীদের পর্যবেক্ষণ
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে পুরভোট পিছিয়ে দেওয়া হোক, এই দাবি তুলে বরাবর সরব হয়েছে বিরোধীরা। ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, “জল খাবে কিন্তু ঘোলা করে খাবে। কে খাবে আমরা তা সবাই জানি। মানুষের চিন্তা নেই, রাজনীতির আর ভোটের চিন্তা। আজকে আদালতের থাপ্পড় খেয়ে ভোট পিছোতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা এখনও বলছি ভোট পিছিয়ে দিন।”
একা দিলীপ নন, বাম ও কংগ্রেস শিবিরও কার্যত অনুরূপ মন্তব্য করেছে। সিপিএম নেতা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এটা তো অবধারিতই। এটা না করলে তো নিজেদের মুখ রক্ষা হবে না। তাই এখন চিঠি দিয়েছে।”
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর কথায়, “প্রথম দিন থেকেই আমি বলেছি এই ভোট নির্ভর করছে রাজ্যের উপরে। রাজ্য মনে করলে ভোট করতে পারে। রাজ্য মনে করলে ভোট না করাতে পারে। মাঝখান থেকে নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে দিয়ে বলি পাঁঠা করার কোনও মানেই নেই। নির্বাচন কমিশন বাংলায় দাঁতহীন, নখহীন একটা বাঘের মতো। সে কারণেই হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।”
রাজ্যের সিদ্ধান্তেই সহমত পোষণ কমিশনের
পুরভোট যেহেতু রাজ্য নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করে তাই প্রথামাফিক সেই ভোট নিয়ে চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণার আগে রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়। রাজ্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই ভোট ঘোষণা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ বারও রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেই ভোট ঘোষণা করা হয়েছিল। ২২ জানুয়ারি চার পুরনিগম আসানসোল, চন্দননগর, বিধাননগর ও শিলিগুড়িতে ভোটের দিন ঠিক হয়। এদিকে, কোভিড পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই বিরোধীরা ভোট পিছোনোর দাবিতে সরব হয়। ভোট পিছোনোর দাবিতে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
অবশেষে, শনিবার, নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম সরকার। তবে, এই পরিস্থিতিতে ভোট পিছোলেও আপত্তি নেই। সেই মোতাবেক, কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, চার জেলার চার পুরনিগমে ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি পুরনিগম, হুগলি জেলার চন্দননগর পুরনিগম, উত্তর ২৪ পরগনার বিধাননগর পুরনিগম ও পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল পুরনিগমে এদিন ভোট হবে। সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: TMC Clash: ‘প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিতর্ক তৈরি করা যাবে না’, সকল তৃণমূল সাংসদদের সতর্কবার্তা