হায়দরাবাদ: তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন কে চন্দ্রশেখর রাও(কেসিআর)। নতুন রাজ্য গঠনের পর সে রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। সে রাজ্যে তাঁর জনপ্রিয়তাও নেহাতই কম নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও জয়ের হ্যাটট্রিক হল না তাঁর দলের। কংগ্রেসের কাছে পরাস্ত হয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে তাঁকে। কেসিআর দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি কেন্দ্রে জিতলেও অপর কেন্দ্রে হেরেছেন তিনি। কিন্তু কেন হারতে হল কেসিআর-এর দলকে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর পিছনে একাধিক কারণকে তুলে ধরেছেন।
পর পর দুই পর্বে ক্ষমতায় থাকা কেসিআর-এর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল বিস্তর। এমনকি পরিবারবাদের অভিযোগও দিনে দিনে বেড়েছে কেসিআর-এর বিরুদ্ধে। কেসিআর-এর ছেলে কেটি রামরাও তেলঙ্গানার মন্ত্রিসভার সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক বছর ধরেই। বিরোধীদের অভিযোগ, কেসিআর-এর ছেলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই কাটান আমেরিকায়। আবার কেসিআর-এর মেয়ে কে কবিতা রাও ছিলেন তেলঙ্গানা বিধান পরিষদের সদস্য। বেশ কিছু দুর্নীতি ইস্যুতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তেও নেমেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ছেলে-মেয়ের পাশাপাশি কেসিআর-এর বিরুদ্ধেও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। তাঁর দলের বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী বিধায়কও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, কেসিআর নিজের পরিবারের জন্য কাজ করেন, তেলঙ্গানাবাসীর জন্য নয়। নিজের বাড়ি থেকেই রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তেলঙ্গানার বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কেসি রাওয়ের বিরুদ্ধে। নিজের পোষ্যকে খুঁজতে পুলিশের ডিজি-কে তদন্তে নামামোর মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন তিনি।
এর পাশাপাশি দলের নাম পরিবর্তনেও কেসিআর ধাক্কা খেয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জন্মলগ্ন থেকেই কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলের নাম ছিল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)। অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনে গুরুত্ব ভূমিকা ছিল তাঁর দলের। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের স্বপ্নে সম্প্রতি নিজের দলের নাম পরিবর্তন করেছিলেন কেসিআর। টিআরএস থেকে নাম বদলে হয় ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। এই নাম পরিবর্তন তেলুগু ভাবাবেগে ধাক্কা দিয়েছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে ক্ষমতায় থাকার জেরে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া কেসিআর-এর বিপক্ষেই গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সবমিলিয়ে তেলঙ্গানায় নিভল কেসিআর-এর প্রদীপ। কোটি কোটি টাকা খরচে নতুন সচিবালয় বানালেও সেখানে বেশিদিন রাজত্ব করা হল তাঁর।