আগরতলা: কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শেষ হল ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন ২০২৩-এর ভোটগ্রহণ। বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮১.১০ শতাংশ। ২০১৮ সালে ভোট পড়েছিল ৯১.৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ, গতবারের থেকে ১০ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। তবে ভোটদানের হার আরও বাড়তে পারে। কারণ বিকেল ৪টের পরও অনেকেই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের টোকেন দিয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এবার অপেক্ষা ২ মার্চের। ওই দিন, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গে, একই সঙ্গে ভোট গণনা হবে ত্রিপুরারও। মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেই জানিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ৪০ থেকে ৪৫টি জায়গায় ইভিএম নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ভোটযন্ত্র বদলে দিয়ে ফের ভোটাভুটি চালু করা হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় ১৬৮টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবার এখনও পর্যন্ত ৩,৩৩৭টি বুথের একটিতেও পুনর্নির্বাচনের দাবি ওঠেনি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, ভোটের সময় ত্রিপুরায় বিক্ষিপ্তভাবে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। সেপাহিজলা জেলার বক্সনগর এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের হামলায় আহত হয়েছেন সিপিআইএম-এর লোকাল কমিটির সেক্রেটারি। তাঁকে কাছের এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে। গোমতি জেলার কাকরাবন বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম-এর দুই নির্বাচনী এজেন্টকেও বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার খয়েরপুরে সিপিআইএম প্রার্থী পবিত্র কর-এর পোলিং এজেন্টের একটি গাড়িও ভাংচুর করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বামেদের পক্ষ থেকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপির দিকে। ভোট চলাকালীন টুইটারে ভোট চাওয়ার জন্য ত্রিপুরার কংগ্রেস ও বিজেপির শাখা এবং রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সাইকিয়াকে নোটিস পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
#ECI volunteers facilitate senior citizens & Divyang Voters at polling stations during #TripuraElections2023 .
Participation of our elderly and PwD voters is an inspiration for all of us, especially young voters.#ECI #AssemblyElections2023 #IVote4Sure pic.twitter.com/NGLEjUY27o
— Election Commission of India #SVEEP (@ECISVEEP) February 16, 2023
দীর্ঘদিন পর্যন্ত ত্রিপুরায় লড়াইটা ছিল দ্বিমুখী – কংগ্রেস বনাম বাম। তবে ছবিটা বদলে যায় ২০১৮ সালে। ওই বছর বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। আর ২০২১ সালে জন্ম নেয় রাজ্যের নবতম দল তিপ্রা মোথা। ফলে বদলে গিয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। চলতি নির্বাচনে, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হাত মিলিয়েছে ‘চির প্রতিদ্বন্দ্বী’ কংগ্রেস এবং সিপিআইএম। অন্যদিকে, তিপ্রা মোথা এইবার কিংমেকার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভায় ৫৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। বাকি ৫টি আসন তারা ছেড়েছে তাদের জোট শরিক ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা বা আইপিএফটিকে। আর আম্পিনগর কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি এবং আইপিএফটি – দুই দলই। সিপিআইএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই এবং আরএসপি – অর্থাৎ বামেরা প্রার্থী দিয়েছে ৪৭টি আসনে। বাকি ১৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে জোট সঙ্গী কংগ্রেস। অন্যদিকে ত্রিপুরা রাজবংশের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মার নেতৃত্বে তিপ্রা মোথা প্রার্থী দিয়েছে ৪২টি আসনে।