লখনউ: নির্বাচনের আগেই একের পর এক নেতার বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তপ্ত রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতিই রাহুল গান্ধী(Rahul Gandhi)-কে কটাক্ষ করে ‘বাবা-ছেলে’র মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা(Himanta Biswa Sarma)। উত্তরাখণ্ডে নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “পাকিস্তানে যখন ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল রাহুল গান্ধী তার প্রমাণ চেয়েছিলেন। আমরা কখনও প্রমাণ করতে বলেছি যে আপনি রাজীব গান্ধীর ছেলে?”। কংগ্রেস সহ একাধিক নেতা হিমন্তের এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন। ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে গলা তুলেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী(Priyanka Gandhi)-ও। শনিবার উত্তর প্রদেশের রায়বরেলীতে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। সেখানেই ফের একবার অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষের প্রসঙ্গ উঠলে প্রিয়ঙ্কা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “আমার মায়ের সম্পর্কে এই কথা বলা উচিত ছিল না ওনাদের।”
রায়বরেলীর পথে দাঁড়িয়েই প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেন, “আমার মায়ের সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলা উচিত ছিল না ওনাদের। উনি একজন শহিদের বিধবা। আমার মা এই দেশের জন্য নিজের জীবন সমর্পণ করেছেন”। রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রিয়ঙ্কা মনে করিয়ে দেন যে, সনিয়া গান্ধী নিজের স্বামী তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যা হতে দেখেছিলেন এবং তাঁর ছিন্নভিন্ন দেহ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। প্রিয়ঙ্কা প্রশ্ন করেন, “কী প্রয়োজন ছিল ওনার (সনিয়া গান্ধী) নামে এই ধরনের কথা বলার? মাকে এই নোংরায় টেনে আনলেন কেন ওনারা?”
রাজনীতির আসল অর্থ বোঝাতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেন, “নির্বাচন মূল্যবোধ, বিশ্বাস, চিন্তাধারা ও নানা বিষয়ের উপর হওয়া উচিত। অন্য কাউকে অপমান করে নয় বা এই ধরনের নিন্দনীয় মন্তব্য করে নয়।”
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন ছিল। সেখানেই বিজেপির হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সম্প্রতিই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী পাকিস্তানের অন্দরে ভারতীয় সেনার অভিযান সম্পর্কে কেন্দ্রের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গ টেনেই হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন, “যদি আমাদের দেশের জওয়ানরা বলেন যে তারা পাকিস্তানের জমিতে গিয়ে অভিযান চালিয়েছেন, তবে সেটাই সত্যি। আপনি (রাহুল গান্ধী) কি বিপিন রাওয়াত বা জওয়ানদের বিশ্বাস করেন না? আমরা কি কখনও প্রশ্ন করেছি যে আপনি আদৌই রাজীব গান্ধীর ছেলে কিনা? তাই দয়া করে আমাদের সেনা জওয়ানদের কালিমালিপ্ত করবেন না।”
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই মন্তব্যের পরই বিতর্ক শুরু হয়। কংগ্রেস সহ একাধিক দলের নেতা-নেত্রীরা রাহুল গান্ধীর পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার কড়া সমালোচনা করেন। এমনকি হায়দরাবাদে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নামে অভিযোগও দায়ের করা হয়।
রায়বরেলীতে প্রচারে বেরিয়ে কংগ্রেসের সাধারণ সচিব প্রিয়ঙ্কা গান্ধী শাসক দল বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন যে, বিজেপি সাধারণ মানুষকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে। রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়নি এবংকুশাসন চলছে, তা থেকে নজর সরাতেই সাধারণ মানুষকে বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত রেখেছে বিজেপি।
প্রিয়ঙ্কা বলেন, “বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, কৃষকদের সমস্যা, রাজ্যের মহিলা ও দলিতদের উপরে যে অত্যাচার হচ্ছে, এগুলিই আসল সমস্যা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি এই বিষয়ে কথা বলছেন না। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে কেন ওনারা এই কাজ করছেন, কারণ তাদের কাছে বিগত পাঁচ বছরে কটা কর্মসংস্খান হয়েছে, তা নিয়ে কোনও উত্তর নেই। কেউ ভাবতে পেরেছিল একটা গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এক হাজার টাকা হতে পারে? সর্ষের তেলের দাম ২০০ টাকা হতে পারে?”