দেরাদুন : শিয়রেই উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন। ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডের ৭০ টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটমুখী এই রাজ্যে গতবছর ছয় মাসের মধ্যে তিনজন মুখ্য়মন্ত্রী বদল হয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের অবস্থাটা অনেকটা এইরকম যে উত্তরাখণ্ডের জনগণ এক মুখ্যমন্ত্রীর নাম জেনে ঘুমাতে যাচ্ছেন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনছেন বদলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালের ১০ মার্চ বিজেপি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকে সরিয়ে তিরাথ সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রী করে। তার ঠিক তিন মাস পরেই রাওয়াতকে সরিয়ে পুষ্কর সিং ধামিকে বসানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে। উত্তরাখণ্ডের জনগণ মনে করেন আগামী নির্বাচনের পর এই মুখ্য়মন্ত্রীও বদলে যাবেন।
‘উন্নয়ন’ বিজেপির একটি অন্যতম মূল এজেন্ডা। ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার গড়ার বার্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভোট চাইছেন উত্তরাখণ্ডবাসীর কাছে। তবে সাম্প্রতিককালে সেই ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ একটি ইঞ্জিন এতবার বদল হয়েছে যে মানুষের সামনে বিজেপি তাদের সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে পারছে না। এদিকে মুখে উন্নয়নের কথা বললেও বিজেপির আসল অস্ত্র জাতপাতের সমীকরণ। দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই এই অঙ্ক কষে বিজেপি নিজেদের ঘুঁটি সাজায়। উত্তরাখণ্ডের পড়শি রাজ্য উত্তর প্রদেশ এই অঙ্কের সবথেকে বড় উদাহরণ। তবে উত্তরাখণ্ডের ভোট সমীকরণ উত্তর প্রদেশের মতো নয়। উত্তর প্রদেশে নির্বাচন কিছুটা আবেগঘন স্লোগানের উপর দাঁড়িয়ে। সেখানে জাত-পাত, দলিত-মুসলিম অঙ্কে ভোটদান হয়। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে ভোট হয় উন্নয়ন,কর্মসংস্থানের উপর ভিত্তি করে। ঠাকুর এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব থাকলেও সেখানে জাতপাতের বিভেদ নেই। এর উপর উত্তরাখণ্ডে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম। ফলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের সম্ভাবনা এখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। তাই বিজেপি আমলে সরকারের কাজ দেখেই ভোট হবে উত্তরাখণ্ডে। বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির মুহুর্মুহু মুখ্যমন্ত্রী বদলের মূল কারণ জনগণদের মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার অভিমুখ পরিবর্তন করা। উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৭ সালের গুজরাট নির্বাচনে এই ফর্মুলা কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। তাতে সন্তোষজনক ফল মেলায় উত্তরাখণ্ডে তা প্রয়োগ করতে চেয়েছে বিজেপি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে এতে বিজেপির কোনও লাভ হবে না। এই কৌশলে উল্টে উত্তরাখণ্ডের জনগণের মধ্যে বিরূপ মনোভাবের জন্ম দিয়েছে।
দেরদুনে কিমাদি গ্রামের ৫৯ বছরের এক বাসিন্দা গুলাব সিং বলছেন, “আমার এই ছোট রেশনের দোকান থেকে একেবারেই কোনও আয় হয় না। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পর্যটকের সংখ্যা (এই রাস্তা মুসৌরির দিকে যায়) ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। আমরা সারাদিন এখানে বসে তাস খেলি।” তিনি বলছিলেন যে, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলছেন, “২০১৯ অবধি আমাদের সংসার খরচ ছিল ২০০০ টাকা। এখন ৪০০০ টাকাও যথেষ্ট নয়।” গুলাব সিংয়ের কথা থেকে স্পষ্ট যে মুদ্রাস্ফীতি এই নির্বাচনে একটি বড় ইস্যু। ভোটদানের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় ইস্যু হল বেকারত্ব। উত্তরাখণ্ডের বহু শিক্ষিত যুব বেকার হয়ে বসে আছে। গুলাব বলছেন, “ভালো কলেজ থেকে পড়াশোনা করার পর আমাদের ছেলে মেয়েরা ক্ষেতে কাজ করতে পারে না, ছোট দোকানে বসতে পারে না। এবং এইখানে কোনও কর্মসংস্থানও নেই। আমাদের বুড়ো বয়সে আমরা তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।” উত্তরাখণ্ডের কিমাদি গ্রামে প্রায় ৬০০ জন ভোটার রয়েছে। গুলাব সিং জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্যে মাত্র দু’জন সরকারি চাকরি করেন। একজন স্থানীয় আদালতে এবং অন্য়জন সেনাবাহিনীতে আছেন। তিনি বলছেন, “বাকিরা হয় বেকার নয়ত শহরে কোনও ছোটোখাটো চাকরি করছে।” তিনি আরও বলেছেন, “নিয়োগের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে যুবরা।”
প্রসঙ্গত, বিজেপি তার শাসনকালে কী উন্নয়ন করল, কতজনের কর্মসংস্থান হল, কোনও প্রকল্পের ফলে গৃহস্থের কতটা কল্যাণ হল- এইসব বাস্তবিক চাহিদা পূরণের উপর দাঁড়িয়ে উত্তরখণ্ডের রাজনীতর সমীকরণ। এইখানে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা, জাত-পাত ভোটবাক্সে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
দেরাদুন : শিয়রেই উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন। ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডের ৭০ টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটমুখী এই রাজ্যে গতবছর ছয় মাসের মধ্যে তিনজন মুখ্য়মন্ত্রী বদল হয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের অবস্থাটা অনেকটা এইরকম যে উত্তরাখণ্ডের জনগণ এক মুখ্যমন্ত্রীর নাম জেনে ঘুমাতে যাচ্ছেন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনছেন বদলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালের ১০ মার্চ বিজেপি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকে সরিয়ে তিরাথ সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রী করে। তার ঠিক তিন মাস পরেই রাওয়াতকে সরিয়ে পুষ্কর সিং ধামিকে বসানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে। উত্তরাখণ্ডের জনগণ মনে করেন আগামী নির্বাচনের পর এই মুখ্য়মন্ত্রীও বদলে যাবেন।
‘উন্নয়ন’ বিজেপির একটি অন্যতম মূল এজেন্ডা। ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার গড়ার বার্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভোট চাইছেন উত্তরাখণ্ডবাসীর কাছে। তবে সাম্প্রতিককালে সেই ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ একটি ইঞ্জিন এতবার বদল হয়েছে যে মানুষের সামনে বিজেপি তাদের সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে পারছে না। এদিকে মুখে উন্নয়নের কথা বললেও বিজেপির আসল অস্ত্র জাতপাতের সমীকরণ। দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই এই অঙ্ক কষে বিজেপি নিজেদের ঘুঁটি সাজায়। উত্তরাখণ্ডের পড়শি রাজ্য উত্তর প্রদেশ এই অঙ্কের সবথেকে বড় উদাহরণ। তবে উত্তরাখণ্ডের ভোট সমীকরণ উত্তর প্রদেশের মতো নয়। উত্তর প্রদেশে নির্বাচন কিছুটা আবেগঘন স্লোগানের উপর দাঁড়িয়ে। সেখানে জাত-পাত, দলিত-মুসলিম অঙ্কে ভোটদান হয়। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে ভোট হয় উন্নয়ন,কর্মসংস্থানের উপর ভিত্তি করে। ঠাকুর এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব থাকলেও সেখানে জাতপাতের বিভেদ নেই। এর উপর উত্তরাখণ্ডে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম। ফলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের সম্ভাবনা এখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। তাই বিজেপি আমলে সরকারের কাজ দেখেই ভোট হবে উত্তরাখণ্ডে। বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির মুহুর্মুহু মুখ্যমন্ত্রী বদলের মূল কারণ জনগণদের মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার অভিমুখ পরিবর্তন করা। উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৭ সালের গুজরাট নির্বাচনে এই ফর্মুলা কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। তাতে সন্তোষজনক ফল মেলায় উত্তরাখণ্ডে তা প্রয়োগ করতে চেয়েছে বিজেপি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে এতে বিজেপির কোনও লাভ হবে না। এই কৌশলে উল্টে উত্তরাখণ্ডের জনগণের মধ্যে বিরূপ মনোভাবের জন্ম দিয়েছে।
দেরদুনে কিমাদি গ্রামের ৫৯ বছরের এক বাসিন্দা গুলাব সিং বলছেন, “আমার এই ছোট রেশনের দোকান থেকে একেবারেই কোনও আয় হয় না। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পর্যটকের সংখ্যা (এই রাস্তা মুসৌরির দিকে যায়) ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। আমরা সারাদিন এখানে বসে তাস খেলি।” তিনি বলছিলেন যে, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলছেন, “২০১৯ অবধি আমাদের সংসার খরচ ছিল ২০০০ টাকা। এখন ৪০০০ টাকাও যথেষ্ট নয়।” গুলাব সিংয়ের কথা থেকে স্পষ্ট যে মুদ্রাস্ফীতি এই নির্বাচনে একটি বড় ইস্যু। ভোটদানের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় ইস্যু হল বেকারত্ব। উত্তরাখণ্ডের বহু শিক্ষিত যুব বেকার হয়ে বসে আছে। গুলাব বলছেন, “ভালো কলেজ থেকে পড়াশোনা করার পর আমাদের ছেলে মেয়েরা ক্ষেতে কাজ করতে পারে না, ছোট দোকানে বসতে পারে না। এবং এইখানে কোনও কর্মসংস্থানও নেই। আমাদের বুড়ো বয়সে আমরা তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।” উত্তরাখণ্ডের কিমাদি গ্রামে প্রায় ৬০০ জন ভোটার রয়েছে। গুলাব সিং জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্যে মাত্র দু’জন সরকারি চাকরি করেন। একজন স্থানীয় আদালতে এবং অন্য়জন সেনাবাহিনীতে আছেন। তিনি বলছেন, “বাকিরা হয় বেকার নয়ত শহরে কোনও ছোটোখাটো চাকরি করছে।” তিনি আরও বলেছেন, “নিয়োগের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে যুবরা।”
প্রসঙ্গত, বিজেপি তার শাসনকালে কী উন্নয়ন করল, কতজনের কর্মসংস্থান হল, কোনও প্রকল্পের ফলে গৃহস্থের কতটা কল্যাণ হল- এইসব বাস্তবিক চাহিদা পূরণের উপর দাঁড়িয়ে উত্তরখণ্ডের রাজনীতর সমীকরণ। এইখানে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা, জাত-পাত ভোটবাক্সে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা