TV9 বাংলা ডিজিটাল : একটা শিরোনাম একটা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে! খবরের কাগজগুলো যেসব শিরোনামগুলো তৈরি করে সেগুলো কি সব সত্যি? নাকি অনেকটাই চমক? শিরোনাম তো লিখে দেওয়া হয়।চায়ের দোকানে, পাড়ার মোড়ে তা নিয়ে ঝড়ও ওঠে।কিন্তু যাকে বা যাদের নিয়ে এই শিরোনাম, তাদের কী অবস্থা? সেই নিয়ে কি মাথা ঘামিয়েছি কখনও? আমরা হয়ত দুদিন চায়ের কাপে তুফান তুললাম! তারপর সব ভুলে গেলাম।কিন্তু যাকে বা যাদের নিয়ে এই শিরোনাম তাদের জীবন হয়ত পুরোপুরি বদলে গেল! যেমন বদলে গেল অভিনের (যিশু সেনগুপ্ত)।
অভিন সখের ফটোগ্রাফার। স্ত্রী আনন্দী (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) পেশায় স্থপতি। অভিনের রোজগারপাতি খুব একটা ভাল নয়।বন্ধুমহলে, সংসারে তাই সে একটু কুঁকড়ে থাকে।তবু ছবি তোলা নিয়ে তার অসম্ভব প্যাশন।অভিনের কাছে হঠাৎই একদিন একটা চাকরির সুযোগ আসে। যে–সে চাকরি নয়, খোদ সংবাদমাধ্যমে ফটো–সাংবাদিকের চাকরি। এক বিশিষ্ট সংবাদমাধ্যমের অন্যতম সম্পাদক রজত (অঞ্জন) অভিনকে এই চাকরির সুযোগ দেয়।কিন্তু অভিন প্রথমে খুব একটা রাজি হয় না। তারপর রজতের কাছ থেকে যখন জানতে পারে, এই কাজে বেশ অনেকটা দুঃসাহস দরকার, তখন ছবি তোলার তাগিদে সে চাকরিটা নিয়ে নেয়।
জাঁদরেল মাওবাদী নেতা রণছোড়জি এক দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়।অভিনকে সঙ্গে নিয়ে তার সিনিয়র সহকর্মী সুজিত (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) সাক্ষাৎকার নিতে বেরিয়ে পরে। কিন্তু হঠাৎই বেঁকে বসেন মাওবাদী নেতা। সাক্ষাৎকার দিতে চান না।কী আর করবে সুজিত–অভিন! হোটেলে ফিরে আসে তারা। সুজিত দুদিন অপেক্ষা করতে চায়। যদি রণছোড়জি মত বদলান। পরের দিন সকালে, কোনও এক পুরোনো মন্দিরের খোঁজ পেয়ে, ছবি তোলার নেশায় অভিন হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। আনন্দীর বারণও সে মানে না। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে রাত নামে। হোটেলে ফেরে না অভিন। বড় কোনো গন্ডগোল হল না তো? আশঙ্কায় সুজিত সমস্ত ঘটনা রজতকে জানায়। রজতও তার চ্যানেলে ঘোষণা করে দেয়, চিত্রসাংবাদিক অভিন রায় মাওবাদী দ্বারা অপহৃত হয়েছে । টিভিতে এই খবর শুনে আনন্দীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলেও খবরের দুনিয়ায় এটা একটা বড় ‘খবর’। অন্যান্য চ্যানেল এই খবরের সত্যতা যাচাইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। খুঁজে পাওয়া যায় অভিনকে? জানতে হলে ছবিটা দেখতে হবে।
শিল্প নির্দেশক ইন্দ্রনীল ঘোষের এটি প্রথম পরিচালিত ছবি। প্রথম ছবিতেই যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন পরিচালক। পরিচালকের পাশাপাশি প্রশংসার দাবি রাখেন ‘শিরোনাম’–এর কাহিনিকার দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায়। প্রতিটি চরিত্র যথাযথ। যিশু, স্বস্তিকা, শাশ্বত সবাই খুব ভাল কাজ করেছেন। সুজন মুখোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, দেবরঞ্জন নাগ, কাঞ্চনা মৈত্র ছোট পরিসরে ভাল কাজ করেছেন।ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করছেন রাজা নারায়ণ দেব। রাজা নিজের ছাপ রেখেছেন।
ইন্দ্রনীলের ‘শিরোনাম’ যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত শিরোনামই যে শেষ কথা নয়, সেটাই বুঝিয়ে দেয় এই ছবি।