২০২১ সালের নভেম্বর মাসে একটি স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেটিভ টিম (সিট) তৈরি করা হয়, যাঁরা শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান (Aryan Khan) এবং অন্যান্য ১৯ জনের বিরুদ্ধে মাদক রাখা ও সেবনের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে। এই দলটি সেই সময়ে সমীর ওয়াংখেড়ের নেতৃত্বে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) জোনাল ডিরেক্টরেট দ্বারা তৈরি দল মামলাটির তদন্ত করছিল। ২ অক্টোবর মুম্বই বন্দরে কর্ডেলিয়া ক্রুজ ড্রাগ বাস্টে এনবিসি কর্তৃক আরিয়ান খান এবং অন্য পাঁচজনের চাঞ্চল্যকর গ্রেপ্তারের এক মাস পরে এটি তৈরি হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল যে তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ মাদক পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া আরিয়ানের একটি আন্তর্জাতিক মাগক চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আরিয়ান নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস (এনডিপিএস) আইন, ১৯৮৫-এর অধীনে, ছয় মাস থেকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারতেন। কিন্তু, ২৮ মে, ২০২২ আরিয়ান খান যে মামলায় গত বছর ২০ দিনের বেশি জেলে কাটিয়েছিলেন সেই মামলায় পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সমস্ত অভিযোগ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
“স্যার, এটা কি আমার প্রাপ্য ছিল?” তদন্তকারী অফিসারকে বলেছিলেন শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান। সিট আধিকারিক সঞ্জয়ের দাবি, আরিয়ান সরাসরি তাঁকে বলেছিলেন, “স্যার, আপনি আমার সঙ্গে বড় অন্যায় করেছেন। আমার সুনাম নষ্ট করেছেন”।
মাদক-মামলা থেকে সপ্তাহ মুক্তি পাওয়ার পর এই বার আরিয়ানের জেরা-পর্বে তাঁর সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে মুখ খুললেন সিট প্রধান সঞ্জয় সিংহ। সংবাদ মাধ্যমকে আইপিএস অফিসার জানিয়েছেন, জেরা-পর্বে আরিয়ান তাঁকে বলেন, “স্যার, আপনি আমাকে একজন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বলা হচ্ছে, আমি মাদক পাচার করে টাকা রোজগার করি। এটা কি ভিত্তিহীন নয়? ওরা (মুম্বই উপকুলে বিলাসবহুল জাহাজ থেকে আরিয়ানকে গ্রেফতার করে এনসিবি) আমার কাছে কোনও মাদক খুঁজে পাওয়া না গেলেও সে দিন আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল”।
ওই সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় আরও জানান, শাহরুখ খানও তদন্তপর্বের সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। যদিও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে পারে, তাই তাঁরা কারও সঙ্গে দেখা করেন না। তবে এক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। যেহেতু সঞ্জয় সিং অন্য অভিযুক্তের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাই তিনি আরিয়ানের বাবার সঙ্গেও দেখা করেন। শাহরুখ এবং সঞ্জয় সিং যখন দেখা করেছিলেন, তখন এসআরকে তাঁর ছেলের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, আরিয়ান স্পষ্টতই ভাল করে ঘুমাচ্ছিল না এবং শাহরুখকে আরিয়ানের বেডরুমে যেতে হয়েছিল তাঁকে সারারাত ধরে রাখতে।
শাহরুখ আরও জানিয়েছিলেন যে তাঁর ছেলেকে ‘অপমানিত করা হচ্ছে’ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। প্রায় কান্নায় ভেঙে পড়ে শাহরুখ সঞ্জয়কে বলেছিলেন, “আমাদের এমন কিছু বড় অপরাধী বা দানব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁরা সমাজকে ধ্বংস করতে বেরিয়েছে এবং আমরা প্রতিদিন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।” অবেশেষে খান পরিবার এখন নিশ্চিন্ত। তাঁদের ছেলে মুক্তি পেয়েছে ২৮ মে ২০২২।