সত্যজিৎ রায়ের ১০২তম জন্মদিন। আর একইসঙ্গে তার পরিচালিত ‘মহানগর’ছবির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রিজার্ভেশন অফ সত্যজিৎ রায় আর্কাইভস’-এর উদ্যোগে সোমবার ১ মে নন্দন-১ প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী জয়া বচ্চন এবং সত্যজিতের সুযোগ্য পুত্র সন্দীপ রায়। ‘মহানগর’ ছবিকে ঘিরেই আলোচনা এগিয়ে চলে, মাঝে মাঝে জয়ার কথায় উঁকি দিয়ে যায় তার আদরের ‘মানিক কাকু’র সঙ্গে কাটানো বেশ কিছু মুহূর্তের রেশ।
কনভেন্টে পড়তে পড়তেই ‘মহানগর’ ছবিতে কাজের সুযোগ আসে জয়ার কাছে। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও বাবার উৎসাহে রাজি হয়ে যান জয়া। কিশোরী জয়া। ছবির সেটে তিনিই ছিলেন কনিষ্ঠতম, আর সকলের বড় আদরের। জয়া বলেন, ‘সেটে আমিই সবথেকে বেশি চঞ্চল ছিলাম। সবার সঙ্গে মিশতাম, কথা বলতাম আর মানিক কাকু একেবারে শান্ত, চুপ।’ কোলাবায় সেই ছবির শুটিংয়ের সময় রাস্তা দিয়ে একদিন মানিকদা গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন আর তখনই ফুটপাথ থেকে জোরে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসেন জয়া, ‘মানিক কাকু, মানিক কাকু’! পুনেতে যখন পড়তেন, একদিন গুপী গাইন বাঘা বাইন দেখানোর কথা সেখানে, আর তাইজন্য ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন সত্যজিৎ। তাকে দেখে জয়ার সে কি আনন্দ! শুটিং ফ্লোরের কত স্মৃতি উঠে আসে তাঁর বয়ানে।
বায়োস্কোপের চাকাটা যেন তার চোখের সামনে ঘুরে চলে অবিরাম। তাঁর মনে পড়ে যায় কীভাবে শুটিং ফ্লোরে ‘মানিক কাকু’র টিফিনের চিকেন স্যান্ডুইচ থেকে চট করে তুলে নিতেন একটা টুকরো। কিশোরীসুলভ চপলতার কাহিনি এগিয়ে চলে।
সত্যজিৎ যখন ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ করলেন, অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ ব্যবহার করেছিলেন তিনি ভয়েস ওভারের জন্য। ‘অমিতজি’ ডাক পেলেন, অথচ তার অতি আদরের ‘জয়া’কে ডাকেননি মানিক কাকু। এই আক্ষেপ তার আজও আছে। মনখারাপও হয়েছিল খুব। পরে কোনও এক স্টুডিওতে দেখা হলে সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভালোবাসা এতটুকু কমেনি তাতে।
সন্দীপ রায়ের আবদার তিনি ফেলতে পারেন না আর তার ডাকেই এদিন কলকাতায় আসেন জয়া বচ্চন। তাকে দেখার জন্য, তার মুখ থেকে আরও কিছু কথা শোনার উৎসাহে সভায় হাজির হয়েছিলেন অগুনতি মানুষ। সত্যজিৎ যেন এভাবেই বাঙালির মধ্যে বেঁচে আছেন আজও।