১৯৯২ সালের ২৫ জুন বড়পর্দায় ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন বড় পর্দার বাদশাহ শাহরুখ খান। সাদা টি-শার্ট, নীল ডেনিম এবং কালো চামড়ার জ্যাকেটে মোটরসাইকেল চালিয়ে মুম্বইয়ের রাস্তা দিয়ে শাহরুখ খান গাইতে-গাইতে যাচ্ছেন–‘কই না কই চাহিয়ে পেয়ার করনে ওয়ালা’। সেই যে হৃদয় প্রবেশ, তার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রত্যক্ষ করতে প্রতিবছর যেতে হবে শাহরুখের বাংলো মন্নতে। যে মন্নতের বাইরে প্রত্যেক বছর কিংয়ের জন্মদিনে (২ নভেম্বর) লক্ষ-কোটি মানুষের ঢল নামে কেবল অনুপ্রেরণাকে এক ঝলক চোখের দেখা দেখার জন্য। দিল্লি থেকে আসা সেই ছেলেটা, যাঁর ছিল না ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও ধরনের বাবা-কাকা-জেঠা। যাঁর ছিল অদম্য জেদ এবং লক্ষ্যভেদ করার মতো অর্জুনের দৃষ্টি।
বলিউডের বুকে উপর দু’হাত মেলে দশকের পর-দশক একই মহিমায় বিরাজ করছেন ‘এক্স ফ্য়াক্টর’ওয়ালা বাদশাহ। ২০২৩ সালে মুক্তি পেয়েছে তাঁর দুটি ছবি ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’৷ দেশে যে ছবি দুটি আয় করেছে ৫৫০ কোটি টাকা এবং বিদেশের মাটিতে ১,০০০ কোটি টাকা। ১৯৯৩ সালের ‘দিওয়ানা’ মুক্তি পায় শাহরুখের। সেটি ছিল তাঁর ডেবিউ ছবি। দিব্যা ভারতী এবং ঋষি কাপুরের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন শাহরুখ। তারপর ছক ভাঙলেন। ‘অ্যান্টি হিরো’ হয়ে গেলেন দুটি ছবিতে–‘বাজ়িগর’ এবং ‘ডর’-এ। ১৪১ কোটি টাকার দুটি ছবি। তারপর কেরিয়ারে আসে ‘আঞ্জাম’ এবং ‘কভি হা কভি না’। ১৯৯৫ সালে আসে সেই মোড় ঘোরানো ছবির তালিকা। একে-একে মুক্তি পায় ‘করণ-অর্জুন’, ‘জামানা দিওয়ানা’, ‘গুড্ডু’, ‘ও ডার্লিং ইয়ে হে ইন্ডিয়া’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ‘রাম জানে’ এবং ‘শ্রীমূর্তি’। সর্বসাকুল্যে সে বছর ছবিগুলি আয় করেছিল ৬৩৮.৯২ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে নিজের ইমেজ তৈরি করলেন শাহরুখ। হয়ে উঠলেন রোম্যান্টিসিজ়মের ‘পোস্টার বয়’। যাঁকে দেখে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী শ’য়ে শ’য়ে নারী একই ধরনের স্বপ্নের রাজপুত্রকে এঁকেছিলেন…
২০০৪ সাল থেকে বছরে দুটি করে ছবি উপহার দিতে শুরু করলেন শাহরুখ। ২০০৫-এ একটি করে ছবি করলেন। ধীরে-ধীরে পাল্টাল গ্রাফ। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোনও ছবি মুক্তিই পায়নি শাহরুখের। কেন না, তাঁর ঠিক আগেই ২০১৮ সালে তাঁর অভিনীত ‘জ়িরো’ ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে, এবং শাহরুখ ঠিক করেন ফিরলে ধামাকা নিয়েই ফিরবেন। ২০২৩ সালে মুক্তি পায় ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’ । সামনে মুক্তি পাবে ‘ডানকি’।
শাহরুখ খান বলেছিলেন, “এখন আমি অনেক অলস হয়ে গিয়েছি। আগের মতো ছবি তৈরি করি না, যা আমি তৈরি করতে পারি। তবে একই বছরে তিনটে ছবি মুক্তি করাতে চাই। একটা ছবি হবে আমার মনের জন্য। একটি শরীরের জন্য এবং তৃতীয়টি পয়সার জন্য। সেই নিরিখে দেখতে গেলে ‘পাঠান’ ছিল শাহরুখে মনের ছবি। শরীরকে আনন্দ দিয়েছিল ‘জাওয়ান’, কারণ সেই ছবিতে তিনি প্রমাণ করেছিলেন তিনি বুড়িয়ে যাননি। এবং অনেকেরই অনুমান, রাজকুমার হিরানীর পরিচালনায় তৈরি ‘ডানকি’ এত পয়সা রোজগার করবে, যে সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।”