স্নেহা সেনগুপ্ত
কাজকেই আপাতত পাখির চোখ করেছেন মিঠুন চক্রবর্তীর পুত্র মহাক্ষয়, তথা মিমো চক্রবর্তী। বেশকিছু ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেছেন তিনি। সেই তালিকায় রয়েছে নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকী অভিনীত ‘যোগীরা সারা রারা’। সবটা নিয়েই TV9 বাংলার প্রশ্নের আনকাট উত্তর দিয়েছেন মিমো। (মিমো কথা বলেছেন হিন্দিতে। এই সাক্ষাৎকার অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)
কেমন আছেন মিমো?
আমি খুবই ভাল আছি।
কেমন চলছে জীবন?
জীবন ঠিক দিকেই এগোচ্ছে। স্বাভাবিক হচ্ছে জীবন। প্যান্ডেমিক-সময় কাটিয়ে ফেলছি আমরা। প্রায় সকলের ভ্যাকসিন নেওয়াও হয়ে গিয়েছে। উৎসবের মতো পরিস্থিতি। এসব দেখে আমিও ভীষণ খুশি। কোনও অভিযোগ নেই আমার।
বাংলায় কথা বলবেন নাকি?
আমি বাংলা বলতে পারি না। কিন্তু বুঝতে পারি একটু-একটু।
আমরা সবাই জানি, আপনার বাবা মিঠুন চক্রবর্তী আদ্যোপান্ত বাঙালি। সেখানে দাঁড়িয়ে ‘আমি বাংলা বলতে পারি না’ বলছেন। এটা কি মেনে নেওয়া সহজ?
আসলে ব্যাপারটা এটাই। আমি বাংলা বুঝতে পারি। কিন্তু তেমনভাবে বলতে পারি না। বাংলা অত্যন্ত মিষ্টি ভাষা। সহজে শিখেও ফেলা যায়। কিন্তু কথা বলতে গেলে আমার বাংলা উচ্চারণ ভুল হয়ে যায়… সেই জন্য আমি খানিক ইতস্ততঃ বোধ করি।
এসব দেখে মিঠুন চক্রবর্তী বকুনি দেন না?
বাবা বলেন তো। আমার মা (যোগীতা বালি) একজন পাঞ্জাবি। আমাদের জাতীয় ভাষা হিন্দি। বাবা বাঙালি। সবটাই তো জানতে হয়। কিন্তু কী হয়, অনেক জায়গায় থেকেছি ছোটবেলা থেকে। উটিতে ছিলাম ছোটবেলায়। সেখানে সকলে তামিল ভাষায় কথা বলেন। বেঙ্গালুরুতে আমাদের হোটেল তৈরি হচ্ছে। সেখানে সকলে কন্নড় ভাষায় কথা বলেন। তাই এত ভাষা শেখার সময় পাইনি একেবারেই। যখনই সুযোগ পাই, শেখার চেষ্টা করি। বাবা বলেন, “সময় এলে সব শিখে যাব”।
মহিলাদের অধিকার নিয়ে তৈরি একটি শর্ট ফিল্ম ‘অব মুঝে উড়না হ্যায়’-তে কাজ করেছেন আপনি…
মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি ইউটিউবে। পরিচালক সুজয় মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছেন ছবিটি। বহু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি আমরা। নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে ছবি। শর্ট ফিল্মে দেখানো হয়, একজন নারী সমস্যা থেকে কীভাবে নিজেই উঠে আসেন। আমি খুবই আনন্দিত এই ছবির অংশ হতে পেরেছি।
মহিলাদের অধিকার নিয়ে কথা বলে, এরকম একটি ছবির অংশ হবেন কেন ভাবলেন?
আমার মনে হয় সকলেরই নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে। নারী-পুরুষ সকলেই সমান। কেউ উপরে নেই, কেউ নীচে নেই। দু’জনেরই সমান সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে বলে মনে করি। এটাই এই ছবির বার্তা। সে কারণেই করতে রাজি হয়েছিলাম।
আমরা সকলেই জানি কয়েক বছর আগে আপনার জীবনে একটি কঠিন সময় এসেছিল। সেই কারণেই কি এই ধরনের একটি ছবি করতে বেশি আগ্রহী হলেন?
না, না। সেজন্য কিন্তু নয়। কঠিন সময় মানুষের জীবনে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এই ছবিটা করতে পেরে আমি কিন্তু খুবই খুশি হয়েছি। তবে এটাও বলতে চাই যে, আমি নিজে খুবই প্রাইভেট মানুষ। সেই জন্য বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না।
তারকাদের পেশাদার ও ব্যক্তিগত জীবন কি আলাদা রাখা সম্ভব?
সম্ভব। দু’টো একেবারেই আলাদা জীবন। কাজের পর আমরা সকলেই বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি ফিরে কী করছি সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত। বাড়িতে আমি পাজামা পরে থাকি। সেখানে আমি আমার পোষ্যদের সঙ্গে খেলি। পড়াশোনা করি। সেটা আলাদা জীবন। কাজ আলাদা জীবন। প্রত্যেক অভিনেতারই কিন্তু পেশাদার ও ব্যক্তিজীবন আলাদা রাখা উচিত। মিশিয়ে ফেলা উচিত নয়।
কঠিন সময়কে পিছনে ফেলে কীভাবে এগিয়ে গেলেন? কীভাবে দুঃস্বপ্নকে জয় করলেন?
এটা একান্ত ব্যক্তিগত যদিও। তবুও বলব, এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। আমি এখন কেবলই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। অতীতে যা হওয়ার, তা হয়ে গিয়েছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করে এখন সত্যি আর কিছুই হবে না। তবে টাচ উড, এখনও আমি কাজ করছি। কেরিয়ারের দিকেই মন দিয়েছি।
মিঠুন চক্রবর্তী একজন স্টার। বাবার সঙ্গে আপনার তুলনা তো চলেই আসে। কখনও কি মনে হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির আউটসাইডার হলে তুলনা থেকে বেঁচে যেতেন?
প্রশ্নটা আমার ভাল লাগল। আমি আপনার সঙ্গে সহমত, যে এটা নেপোটিজ়মের প্রশ্ন নয়। বাবা অনেক কাজ করেছেন। এখন টিভিতে ‘হুনরবাজ়’-এর বিচারকের আসনে। বাবা অভিনীত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর এত বড় সাফল্য। ৪০ বছর কাটিয়েছেন বলিউডে। বাবার লেভেলটাই আলাদা। দশটা জন্ম নিলেও বাবার জায়গায় পৌঁছতে পারব না। মানুষ যা ভাবার, ভাববেন। যা বলার, বলবেন। এটা গণতন্ত্র। প্রত্যেকের নিজের অধিকার আছে। আমার প্রতি ঘৃণাকে পাল্টাতে পারব না। ফলে বাবার সঙ্গে তুলনাকে মাথার পিছনে রাখি। নিজের কাজটাই করে যেতে চাই।
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখেছেন?
দারুণ ছবি। বিবেক অগ্নিহোত্রী আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা পরিচালক। সত্যি ঘটনা দেখিয়েছেন। ছবিটা প্রথমে মার্কিন মুলুকে রিলিজ় করেছিল। আমি বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম। ভাগ্যবানদের মধ্যে আমিও সেই ব্যক্তি যে কি না নিউ ইয়র্কে বসে ছবিটা দেখার সুযোগ পেয়েছে।
সম্প্রতি দু’টি ছবিতে অভিনয় করলেন আপনি। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী অভিনীত ‘যোগীরা সারা রারা’ এবং ‘রোশ’। কেমন অভিজ্ঞতা? নওয়াজ়উদ্দিনের থেকে কী-কী শিখলেন?
‘যোগীরা সারা রারা’ হাল্কা মেজাজের কমেডি ছবি। এই ছবিতে কাজ করা আমার কাছে প্রাপ্তি। অবশ্যই নওয়াজ স্যরের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। অভিনয় করতে-করতে অভিনয় শেখান তিনি। নিজে থেকে অভিনয়ে অনেক কিছু যোগ করেন নওয়াজ় স্যর। ওঁর অভিনয় গুণে চরিত্ররা জীবন্ত হয়ে ওঠে। অনেক কিছু শিখেছি। নওয়াজ় স্যর বলেন, অভিনেতা হিসেবে নিজেকে এক জায়গায় আটকে রাখতে নেই। খুলে রাখতে হয়। তাহলেই বড় অভিনেতা হওয়া যায়। ভাল সময় কাটিয়েছি। নেহাও দারুণ কো-স্টার। যতগুলো সিন করেছি, সবক’টাই মজা করে।
‘রোশ’-এর গল্পটিও দারুণ। সম্পূর্ণ থ্রিলারধর্মী ছবি। একটি রাতের গল্প। ৪-৫টি চরিত্র রয়েছে। কীভাবে তাঁদের জীবন একে-অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, সেটাই গল্প। দারুণ ভাবে তৈরি হয়েছে ছবিটি। আমাদের পরিচালক জয়দীপ স্যর সুন্দর করে তৈরি করেছেন। অনেক কিছু শিখলাম এই ছবি থেকেও। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিম করতে শুরু করবে খুব তাড়াতাড়ি।
ক্রসফিট কমিউনিটির জন্যেও আপনি অনেক কাজ করছেন দেখছি… শরীরকে মন্দির হিসেবে পুজো করেন…
অনেকগুলো বছর ধরে ক্রসফিট করছি। আমাদের শরীরটা একটা মন্দির। সেটার পুজো করা দরকার। যত্ন নেওয়াও দরকার। ভাল খাওয়া আর ওয়ার্কআউট করা—এই দু’টো করলেই শরীর ঠিক থাকে।