Real Life Brothel Inmate: ‘যৌনকর্মীরা আছে বলেই সমাজের আর পাঁচজন মেয়ে, বোন, দিদি সুস্থভাবে চলতে পারছে’, বলছেন সোনাগাছির যৌনকর্মী

Real Life Brothel Inmate: "যে দিন এই যৌনপেশাকে পেশা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, সে দিন মনে করব যথার্থ সম্মান পেয়েছি", বিশ্বাস করে সোনাগাছির যৌনকর্মী। জানেন 'গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি' বলে একটি ছবি রিলিজ় করেছে, সে কথাও।

Real Life Brothel Inmate: 'যৌনকর্মীরা আছে বলেই সমাজের আর পাঁচজন মেয়ে, বোন, দিদি সুস্থভাবে চলতে পারছে', বলছেন সোনাগাছির যৌনকর্মী
গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ।
Follow Us:
| Updated on: Mar 21, 2022 | 2:46 PM

অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়

“কুঁওয়ারি আপনে ছোড়া নহি। শ্রীমতি কিসি নে বনায়া নহি।”

জানুয়ারির ২৫ তারিখ রিলিজ়-করা ছবি ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’-র শেষে এই সংলাপ রয়েছে আলিয়া ‘গাঙ্গু’ ভাটের মুখে। প্রথম দু’সপ্তাহে এই ছবির ডোমেস্টিক বক্স অফিস কালেকশন ১০২.৬৮ কোটি। যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে যেমন সরব হয়েছিলেন ‘গাঙ্গুবাঈ’, তেমনই অগুণতি রিয়েল-লাইফ গাঙ্গুবাঈদের নিয়ে তাঁদের অধিকারপ্রতিষ্ঠার লড়াই করে চলেছে ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’। ‘দুর্বার’-এর সূত্রে TV9 বাংলা কথা বলল সোনাগাছির এক যৌনকর্মীর সঙ্গে।

‘গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ বলে একটি ছবি রিলিজ় করেছে, জানেন?

উত্তর: হ্যাঁ, জানি।

আলিয়া ভাটকে চেনেন?

উত্তর: হ্যাঁ, আলিয়া ভাটকে চিনি।

যৌনকর্মীদের সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজে দেরি করা যাবে না বলে সম্প্রতি আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং বিচারপতি বি আর গভাইয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, চার সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে জানাতে হবে, সেখানে বসবাসকারী যৌনকর্মীদের সঠিক সংখ্যা কত। পাশাপাশি জানাতে হবে, কোন পথে রাজ্য তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজে এগোতে চাইছে। বিচারপতি রাও বলেছেন, “… আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো যৌনকর্মীরাও দেশের নাগরিক।” একজন যৌনকর্মী হিসেবে নিজেকে ‘নাগরিক’ ভাবতে কতটা গর্ববোধ হয় আজ?

উত্তর: একজন যৌনকর্মী হিসেবে এটা আমার কাছে অত্যন্ত গর্বের যে আমি ভারতবর্ষের নাগরিক। যৌনকর্মী মানে আমি কোথা থেকে এসেছি… আমি তো সমাজের একজন। প্রথমে তো আমি কারও মা, কারও মেয়ে, কারও বোন ছিলাম। যৌনপেশায় এসে একে আমি আর পাঁচটা কাজের মতোই বেছে নিয়েছি। পেশায় আমার নামটাই যৌনকর্মী।

নাগরিক হিসেবে এই মুহূর্তে কী-কী প্রাপ্য অধিকার ভোগ করছেন?

উত্তর: নাগরিক হিসেবে আমি যে অধিকারগুলো ভোগ করছি, সেগুলো হল রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প… কিন্তু যৌনকর্মী হিসেবে আমি তো একা নই, আমার মতো আরও যে সব যৌনকর্মী দিদি-বোন রয়েছেন, তাঁদেরও এই অধিকারগুলো পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর সবক’টার আওতায় এখনও সকলে আসতে পারেননি। যখন সবাই এসে যাবেন, তখন মনে করব যৌনকর্মীরা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় এসে গিয়েছেন। এখনও সবাই হননি, বাকি আছে। সেটা ধাপে-ধাপে হচ্ছে কারণ ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’-র মতো যৌনকর্মীদের সংগঠন তাঁদের কাছাকাছি যাচ্ছে, দেখছে তাঁদের কাছে কী-কী প্রমাণপত্র রয়েছে। সেই অনুযায়ী সরকারের কাছে আবেদন করছি: এই অধিকারগুলো যৌনকর্মীদের দিতে হবে। বয়স্কদের জন্য ভাতা যেমন এখনও অনেকে পাচ্ছেন না।

নাগরিক-অধিকারগুলো পেতে আপনাদের কতটা দেরি হয়ে গেল বলে মনে হয়?

উত্তর: অনেক… অ-নে-এ-এ-এ-ক দেরি… যৌনকর্মীদের আর পাঁচজন নাগরিকের মতো নাগরিক হিসেবে মনে করা হত না। শুধুমাত্র ভোট দেওয়ার অধিকারটুকু ছিল। কোনও নাগরিক অধিকার পাওয়ার মতো জায়গায় ছিলেন না যৌনকর্মীরা। ভোটের অধিকারের পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। আমরা একসময় নির্বাচন কমিশনারের কাছে গিয়ে একদিনে ৩৫০ যৌনকর্মীর ভোটাধিকার অর্জন করেছিলাম। দুর্বার-এর সদস্য কার্ড, ঊষা কার্ড, হেল্থ কার্ড থাকা সত্ত্বেও ২৫, ৩০… এমনকী ৫০ বছর ধরে পেশার সঙ্গে যুক্ত যৌনকর্মীরা ভোটাধিকার পাচ্ছিলেন না। কারণ তাঁরা কবে, কোথা থেকে এসেছেন… তাঁদের মা-বাবা… কিছুরই কোনও হিসেব নেই। এই যৌনপল্লিই তাঁদের ঘরবাড়ি।

এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলি। যৌনকর্মীর সন্তানদের আগে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় খুব সমস্যা হত। কারণ বাবার পরিচয় না-দিলে স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না। তখন অনেক বাচ্চাকে ড্রপ-আউট করে যেতে হয়েছে। এখন সেই জায়গাটা আমরা স্কুল-কর্তৃপক্ষদের বোঝাতে পেরেছি যে, একজন পড়ুয়া যদি বাবার পরিচয়ে ভর্তি হতে পারে তাহলে তার মা কোন অংশে কম? মায়ের পরিচয়ে কেন বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না—সেই জায়গাটা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এবার কিছু তো কানাঘুষো থাকেই: ‘এই… এই… অমুক যৌনপল্লি থেকে এসেছে’, ‘তমুক যৌনকর্মীর সন্তান’ এটা কাটতে নিঃসন্দেহে সময় তো লাগবেই কারণ এই পেশাটাকে সমাজ আর পাঁচটা পেশার মতো ভাল চোখে দেখে না। এখনও আর পাঁচটা পেশার মতো ভাবতে শেখেনি। ভাবাতে হবে। সময় লাগবে। ধীরে-ধীরে হবে। তবে আগের চেয়ে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।

যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে প্রথম সরব হয়েছিলেন খোদ এক মহিলা যৌনকর্মী, এটা ভেবে কেমন লাগছে?

উত্তর: একজন যৌনকর্মী হিসেবে এক দিকে এটা ভাবতে খুবই গর্ববোধ হচ্ছে যে আজ ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ ছবিতে আমাদের অধিকারের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্য়দিকে, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজ থেকে অনেক বছর আগে ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে যৌনপেশাকে আর পাঁচটা কাজের মতো একটা স্বতন্ত্র কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আর্জি জানালেও আজও সেটা হয়নি। দুর্বার গত ২৭ বছর ধরে যৌনকর্মীদের অধিকারপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০০৬-এ পার্লামেন্ট মার্চ করলেও আজও সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এই লড়াই তো আজকের লড়াই নয়… ৪০-৫০ বছরের লড়াই… আমরা লড়ে যাচ্ছি, কিন্তু পারছি না সবসময়।

আমরা, যৌনকর্মীরা, সমাজের একটা অংশ। যৌনকর্মীরা আছে বলেই সমাজের আর পাঁচজন মেয়ে, বোন, দিদি সুস্থভাবে চলতে পারছে। সেই সঙ্গে যৌনকর্মীরা এই কাজটাকে কাজ হিসেবে দেখে। যৌনকর্মীরা চুরি, ছিনতাই করে না। আমরা মানুষকে পরিষেবা দিই। তার পরিবর্তে পয়সা রোজগার করি। তাহলে এই কাজটাকে মেনে নিতে কোথায় অসুবিধে? এই কাজে যাতে অন্যায় বা অত্যাচার না-হয়, কেউ যাতে চলে না-আসতে পারে, সেজন্য সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ড বা স্বশাসিত বোর্ড রয়েছে। কোনও নাবালিকা বা সাবালিকা এই পেশায় এলে তাকে এই বোর্ডের মাধ্যমে আসতে হবে। এই স্বশাসিত বোর্ড সুপ্রিম কোর্টের প্যানেলেও রয়েছে। দুর্ভাগ্য, এতদিনে আমাদের এই অধিকারগুলো পেয়ে যাওয়া উচিত ছিল। যৌনকর্মী বা যৌনকর্মীর পেশাকে ঘিরে যে আইনগুলো তৈরি হচ্ছে, যেমন ইম্মরাল ট্র্যাফিক প্রিভেনশন অ্যাক্ট-এর কিছু ধারা যৌনকর্মীদের কেন্দ্র করে তৈরি। কেন? আমরা চাই এই আইনটা বাতিল করা হোক। কোনও পেশার জন্য কোনও আইন তৈরি হোক, আমরা চাই না। সমাজের আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের জন্য যে আইন, আমাদের জন্যও সেই একই আইন থাক। কারও পেশা দেখে কোনও আইন তৈরি হোক, সেটা চাই না।

এর সঙ্গে সঙ্গে বলব ট্র্যাফিকিং বিল—সেটাও পরোক্ষভাবে যৌনকর্মী, যৌনকর্মীর সন্তান অথবা যৌনকর্মীর পরিবারকে ঘিরেই। এরকম কোনও ধারা বা আইন আমরা চাই না—চাই বাতিল হোক।

সন্তান কত বড় হল আপনার?

উত্তর: একজনের ২৫ বছর। আর একজনের ১৮ বছর।

কী হতে চায় তারা?

উত্তর: দু’জনেই পড়াশোনা শিখেছে। একজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে ড্রাইভিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। নিজের গাড়ি রয়েছে। আর মেয়ে বাড়িতেই রয়েছে।

যৌনকর্মীর সন্তান—সমাজ কীভাবে দেখে তাকে?

উত্তর: এখনও তো যৌনকর্মীদের পেশা স্বীকৃতি পায়নি সমাজের চোখে। এই পেশা এখনও খারাপ পেশা। আর পাঁচটা পেশার মতো মনে করা হয় না। হয়তো কিছু মানুষের মধ্যে বদল এসেছে। পুরোপুরি তো বদল আসেনি। তাই যখন জানতে পারে যে কেউ যৌনকর্মীর সন্তান, মানুষ তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। ‘এই, ওর মা নষ্ট’, ‘ও বাজে’, ‘যৌনকর্মীর মেয়ে যৌনকর্মীই হবে’ অথবা ‘যৌনকর্মীর সন্তান মাতাল হবে, চোর হবে, ডাকাত হবে’… এটাই কিন্তু অধিকাংশের ধারণা। এই ধারণাটা না-থাকাই উচিত। যৌনকর্মীর সন্তান আগের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষিত। অনেক ভাল-ভাল জায়গায় তারা পৌঁছেছে। কেউ-কেউ সরকারি চাকরি করছে। ভাল-ভাল পোস্টে রয়েছে। আগের জায়গায় কিন্তু পড়ে নেই তারা। অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে।

“আপকি ইজ্জত একবার গয়ি তো গয়ি, হম তো রোজ রাত কো ইজ্জত বেচতি হ্যায়। সালি খতমিচ নহি হোতি…”—’গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’তে আলিয়ার মুখে রয়েছে এই সংলাপ। ‘রোজ রাত কো ইজ্জত’ বেচতে হয় যে যৌনকর্মীদের, তাঁদের একজন হিসেবে এখনও কোন-কোন অধিকার পাওয়া বাকি রয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়?

উত্তর: যে দিন এই যৌনপেশাকে পেশা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, সে দিন মনে করব যথার্থ সম্মান পেয়েছি। শ্রমিক হিসেবে আর একজন শ্রমিকের তালিকায় জায়গা পাওয়াটা খুব দরকার। পেনশনের মতো যে সব সুযোগ-সুবিধে, সেগুলো পাওয়া দরকার। এখনও তো পাইনি।

কখনও ভেবে দেখেছেন যৌনকর্মী না বলে যদি যৌনশিল্পী বলে ডাকা হয় আপনাদের, কেমন লাগবে?

উত্তর: আপনি যৌনশিল্পী বলতে পারেন, আমি বলব না। আমি যেহেতু যৌনপেশাটাকে একটা কাজ হিসেবে দেখি, তাই সেটা আমি কোনও শিল্পী হিসেবে করছি না। শিল্পী বলব যদি নাচ-গান দেখানো হয়, তবে। আমি তাই-ই শ্রমিকই বলব। যৌনশিল্পী অথবা যৌনকর্মী—দু’টোই বলা গেলেও আমি যৌনকর্মীই বলব। যৌনকর্মী—এই নামটাও তো ছিল না আগে। দুর্বার-এর মতো সংগঠনের লড়াই আমাদের ‘বেশ্যা’ থেকে ‘যৌনকর্মী’তে নিয়ে এসেছে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: অন্বেষা দাস, দুর্বার

গ্রাফিক ও অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ 

আরও পড়ুন: পাঁচ দিনের আবাসিক পাঠশালায় পাঠ লিঙ্গ-যৌনতাবোধের, উদ্যোগে পূর্ব ভারতের প্রথম রেজিস্টার্ড এলবিটিকিউ সংগঠন