রেডিয়োর কিংবদন্তি বাচিক শিল্পী পার্থ ঘোষ চলে গেলেন। তাঁর সঙ্গে মিষ্টি মধুর সম্পর্ক ছিল বিন্দু মাসির। বিন্দু মাসি, অর্থাৎ অভিনেত্রী অনামিকা সাহার। একসময় রেডিয়োতে চুটিয়ে অভিনয় করেছিলেন অনামিকা সাহা। সেই থেকেই তাঁর পার্থ ঘোষের সঙ্গে আলাপ। আজ পার্থ ঘোষের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন অনামিকা। TV9 বাংলাকে তিনি বললেন, “একের পর-এক মানুষ চলে যাচ্ছে, আমার ভাল লাগে না শুনতে। আমিও তো একদিন চলে যাব। এর তো বিকল্প হবে না। পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষের আর কোনও বিকল্প হবে না। ‘কর্ণ-কুন্তি সংবাদ’-এর কথা আমার মনে পড়ছে। আমি গৌরীদিকে ধরে বলতাম আমাকে একটু শিখিয়ে দাও। তিনি বলতেন পার্থকে বল। সেই পার্থদা একদিন ডেকে ‘কর্ণ কুন্তি সংবাদ’-এ গৌরীদিকে না নিয়ে আমাকে নিলেন। সেটা রেকর্ডিং নয়। একটি সংস্থা থেকে করিয়েছিল। শিশির মঞ্চে হয়েছিল। আজ আমার ওদের ছেলেটির জন্য খারাপ লাগছে। এক্কেবারে একা হয়ে গেল। মা (গৌরী ঘোষ) মারা যাওয়ার সময় খুব কষ্ট পেয়েছিল। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই ওর বাবাও চলে গেল। ২০১৯ সালে অমলেন্দু ভট্টাচার্যর গ্রুপের অনুষ্ঠানে পার্থদার সঙ্গে আমার দেখা। সেটাই শেষ দেখা।”
পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ – রেডিয়োর জনপ্রিয় জুটি। ব্যক্তিজীবনে তাঁরা ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। স্ত্রী আগেই প্রয়াত হয়েছেন। ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর। ২০২১ সালের ২৬ অগাস্ট তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। এক বছর হতে না-হতেই প্রয়াত হলেন তাঁর স্বামী, বাংলার বিখ্যাত বাচিক শিল্পী পার্থ ঘোষ। আজ (০৭.০৫.২০২২) শনিবার ধরিত্রীর বুক থেকে চিরবিদায় নিলেন পার্থ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
যে কণ্ঠ শ্রোতাদের শুনিয়ে দীর্ঘদিন তাঁদের মনে বিরাজ করেছিলেন পার্থ। সেই কণ্ঠ নিয়েই ভুগতে হয়েছে তাঁকে। গলায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল পার্থ ঘোষের। হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তিও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না আর। শনিবার ভোররাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবীণ বাচিক শিল্পী।
মজার কথা, স্বামী-স্ত্রী পার্থ ও গৌরীদেবী একটা সময় রেডিয়োতে চুটিয়ে করেছেন ‘কর্ণকুন্তী সংবাদ’। মা-ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই কিংবদন্তি দম্পতি। কর্ণ ছিলেন পার্থ, গৌরীদেবী কুন্তি। কেবল তাই নয় স্ত্রী গৌরীর সঙ্গে বেশ কিছু শ্রুতিনাটকও জনপ্রিয় হয় পার্থর। যেমন ‘জীবন বৃত্ত’, ‘প্রেম’, ‘স্বর্গ থেকে নীল পাখি’।
তারপর ধরুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষ বসন্ত’। যা পাঠ করে খ্যাতির চূড়া স্পর্শ করেছিলেন পার্থ। রবীন্দ্রনাথের আরও কিছু রচনাকে অবলম্বন করেছিলেন পার্থ। সেই তালিকায় রয়েছে ‘দেবতার গ্রাস’ ও ‘বিদায়’।