কলকাতা আমাদের প্রিয় শহর। কিন্তু আজ কনক্রিটের ভিড়ে আমাদের ছোটবেলার চেনা শহরকে কি চিনতে পারি আজ? খুঁজে পাই আমাদের ‘প্রিয়’ হয়ে ওঠা শহরের আরও প্রিয় বিষয়আশয়গুলো? উত্তর বোধহয় না-ই!
জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত পরিচালক বিক্রম আদিত্য সেনগুপ্তর ছবির গল্প আমাদের এই শহর তিলোত্তমাকে নিয়ে, শহরে হারিয়ে যাওয়া সেই প্রিয় বিষয়গুলো খোঁজার চেষ্টায়। ছবির গল্পেও তাঁর চরিত্র ইলাও ঠিক তাঁর পুরনো শহরটিকে খুঁজছে, তাঁর ছোটবেলাকে খুঁজছে। পুরনো শহরটাকে খোঁজার তাগিদ এল কীভাবে? “ফিল্মের ধারণার জীবাণুটি আমার কাছে এসেছিল যখন আমি প্রথম দেখেছিলাম যে প্রায় পাঁচ বছর আগে আইকনিক সায়েন্স সিটি ডাইনোসরটির উপরে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছিল।” বললেন ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ এবং ‘জোনাকি’ খ্যাত পরিচালক আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত। ছবির গল্প সদ্য কন্যা হারানো এক মাকে নিয়ে। একমাত্র মেয়েকে হারানোর পর, ইলা শুধুমাত্র একজন মা হিসেবে তার পরিচয় হারিয়েছেন তা নয় পাশাপশি তাঁর স্বামীর একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে। ব্যঙ্ক তাঁকে লোন দিতে নারাজ, তার বস, এক বিশাল পঞ্জি স্কিমের মালিক, তাঁকে একটি প্রস্তাব যা তিনি নিতে হাজার কষ্ট নিয়েও মেনে নিতে বাধ্য হয়। ইলা তার সৎভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে, পারিবারিক থিয়েটারের অর্ধেক মালিকানা দাবি করে, তবে ভাই তা দিতে অস্বীকার করে এবং ইলার অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিণতির জন্য তাঁকেই দোষারোপ করে। এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই, ইলার শৈশবের স্মৃতি তাকে এক নতুন সূচনার আশা জোগায়। ইলা যেভাবে নিজের জন্য স্বপ্ন দেখেছিল, যেভাবে জীবনযাপন শুরু করেছিল, সে বুঝতে পারে যে সে শহরের নয় যে কি না ক্ষুধার্ত।
এক বিবৃতিতে আদিত্য জানিয়েছেন, “এই ফিল্মটি কলকাতা শহর এবং এর জনগণের জন্য ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং আবেগের সমাপ্তি। বিশেষত এটি দ্রুত পরিবর্তিত বিশ্বের দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করে। সত্যিকারের চরিত্র এবং বাস্তব ঘটনাবলী যা আমার অতীতের ‘কমিউনিস্ট’ শহরের বিভিন্ন স্তরকে দেখানো হয়েছে, যা হয়তো কিছু মাত্রায় বেদনাদায়ক, কিন্তু তবুও তাতে আশা এবং আনন্দ ছিল। ফিল্মটি বিস্তৃত মহানগরীতে শ্বাস নিতে-নিতে হাঁপাতে থাকা মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামকে তুলে ধরে।”
আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের তৃতীয় ছবি, ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন কলকাতা’ ৭৮ তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের স্থান করে নিয়েছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মিত্র, ব্রাত্য বসু, পাশাপাশি রয়েছেন সত্রাজিৎ সরকার, অরিন্দম ঘোষ, ঋতিকা নন্দিনী শিমু, অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং নবাগত শায়ক রায়। পরিচালক আদিত্যর বাবা ত্রিদিব সেনগুপ্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিটির শুটিং করেছেন পাম ডি’অর বিজয়ী গোখান তিরিয়াকি এবং সংগীতায়োজন করেছেন ডাচ সুরকার মিনকো এগার্সম্যান।