অ্যাকোয়াটিকায় তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। চতুর্দিকে শুধু কালো মাথার ভিড়। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বেঁধে মঞ্চে উঠলেন অরিজিৎ সিং। শুরু হল হর্ষধ্বনি। এল তাঁর আইকনিক ‘রঙ দে তু মোহে’ গেরুয়া গাওয়ার অনুরোধও। অরিজিৎ গাইলেন ঠিকই, তবে সেই সঙ্গে নিজেই টানলেন গেরুয়া প্রসঙ্গ। যে গেরুয়া প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু দিন আগেই শহর জুড়ে হয়েছে কতই না জলঘোলা? শনিবার মঞ্চে উঠে অরিজিৎ বলেন, ” এই গানটা নিয়ে খামোকা বিতর্ক তৈরি হল। গেরুয়া রঙটা তো সন্ন্যাসীদের রং। স্বামীজির রঙ। বিবেকানন্দও যদি সাদা পরতেন তাহলে কি সাদা নিয়েই এরকম হত?” কার্যতই যেন বিতর্কে জল ঢালতে চাইলেন অরিজিৎ। একই সঙ্গে এই জলঘোলা নিয়ে কি খানিক দিলেন ‘খোঁচা’ও? তেমনটাই মনে করছেন অনুরাগীরা।
কোথা থেকে হয়েছিল গেরুয়া বিতর্কের সূত্রপাত? ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অরিজিৎ সিং। অরিজিৎকে মঞ্চে বরণ করে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা বিধায়ক জুন মালিয়া। মঞ্চে উঠে অরিজিৎ বলেন, “আমরা সবাই ছবি দেখতে ভালবাসি। কোভিডের পরে আবারও একটা বিষয় নিয়ে উৎসাহ তৈরি হল। এমন একটা জায়গা যেখানে ছবি নিয়ে বিনোদনও হয়, দেশের কথা জানতে পারি, শিক্ষাও বাড়ে। সবাইকে আমার প্রণাম”। এরপরেই দেখা যায় অরিজিতের উদ্দেশে একটি গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অরিজিৎও নিরাশ করেননি। তিনি বলেন, “একটা গান গেয়ে দিই, তাহলে ল্যাটা চুকে যাবে।” শাহরুখকে নিবেদন করে অরিজিৎ ধরেন সেই জনপ্রিয় গান,”রঙ দে তু মোহে গেরুয়া”। সেই ক্লিপিংস ভাইরাল হয়। বিতর্কের শুরু এর পরেই।
১৪ ফেব্রুয়ারি অরিজিতের ইকো পার্কে একটি কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল। হঠাৎই হিডকোর তরফে জানানো হয় আন্তর্জাতিক কর্মসূচীর কারণে ইকো পার্ককে ভেন্যু হিসেবে দেওয়া সম্ভব নয়। বাতিল হয় গায়কের কনসার্ট। শুরু হয় বিতর্ক। এই ইস্যুতে মন্তব্য করেন বিজেপি সর্ব ভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ““সব শো নয়, বেছে-বেছে অনুষ্ঠান বাতিল করা হচ্ছে।তৃণমূলের সঙ্গে না থাকলে করে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু অরিজিৎ সিং নয়, যারা তৃণমূলের সঙ্গে নেই প্রত্যেকের শো বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই বাংলার শিল্প সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছে তৃণমূল।” বিজেপি নেতা মতিল মালব্যও টুইটারে লেখেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়েই ‘রঙ দে তু মোহে গেরুয়া’ গেয়েছিলেন অরিজিৎ। আর এর পরেই তাঁর শো ইকোপার্কে বাতিক করল হিডকো। হিডকো তো সরকারের।”
যদিও হিডকোর তরফে জানানো হয়েছিলেন, নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে জি ২০ সামিটের কর্মসূচীর কারণে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যায়নি। কিছু দিনের মধ্যেই যদিও আয়োজকদের তরফে কনসার্টের নতুন স্থান ও তারিখ ঘোষণা করা হয় যা গতকাল রাতে অনুষ্ঠিত হল সাফল্যের সঙ্গে। এই গোটা সময়ে চুপ ছিলেন অরিজিৎ। অবশেষে সকলের সামনে মুখ খুললেন এ প্রসঙ্গে। তবে প্রশ্ন একটাই, বিতর্ক কি থামল নাকি মন্তব্য করে ধামা চাপা পড়া বিতর্ককে খানিক উস্কেই দিলেন মুর্শিদাবাদের এই গায়ক?