কলকাতা শহরেই জন্ম ১৯৩৫ সালে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। আজ তাঁর জন্মদিন। ৮৭-র ‘তরুণ’ বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত তরুণই বটে। এই তো কিছুদিন আগেই মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন ‘মাধবী’ নাটকে। ‘মহাভারত’-এ উল্লিখিত রাজা যযাতির চরিত্রে অভিনয় করে ফের দর্শকের অন্তর স্পর্শ করেছেন রুদ্রপ্রসাদ। বরাবরের মতো। সে কী দাপট! দর্শক হাঁ করে দেখেছেন তাঁর পারফরম্যান্স। যেমনটা দেখে এসেছেন এতকাল। কেবল তো ‘মাধবী’ নয়। দিন কয়েক আগে ‘পাঞ্চজন্য’ ও ‘নাচনী’তেও পারফর্ম করেছেন। একাধিক নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন, অভিনয় করেছেন। নান্দীকারের প্রাণপুরুষ রুদ্রপ্রসাদ ওয়ার্কশপ না করলে আজও অসম্পূর্ণই থেকে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ। তিনি সকলের আদরের ‘স্যার’। নাট্যপ্রিয় মানুষের অন্যতম প্রিয় এক শিল্পী। সেই রুদ্রুপ্রসাদই জন্মদিনের সকালে TV9 বাংলাকে খানিক মন খারাপের সুরে বলেছেন, “জন্মদিনে মন ভাল থাকে যেমন, মন খারাপও হয়ে যায়। মনে হয় আর বেশিদিন তো এগুলো পাব না।”
জন্মদিনের সকাল। ফোনের ওপারে ‘বার্থ ডে বয়’ রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। TV9 বাংলার ফোন পেয়ে প্রকাশ করলেন তাঁর আনন্দ। উলটে নিজেও বললেন ‘শুভ জন্মদিন’, একেবারে শিশুর মতো। আর বললেন, “তোমরা সকলে ভাল থাকবে খুব। সকাল থেকে অনেকের ফোন এসেছে। অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে আজ। জানেন আজ মমতাদিদি (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ফোন করেছিলেন প্রথম, সেই ভোর বেলায়। চিঠিও পাঠিয়েছেন আমাকে। তারপর প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, ছাত্র-ছাত্রীরা ফোন করেছেন একে একে। কয়েকটা কলম উপহার পেয়েছি। চকোলেট পেয়েছি। গতকাল রাতে আমার মেয়ে (অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত) ফোন করেছিল। জামাই (অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিক) ফোন করেছিল। নান্দীকারের অনেকে ফোন করেছে। সবাই খুব ভালবাসছে আমাকে। এই ভালবাসা পেতে পেতে মন ভাল যেমন লাগে খারাপও হয়ে যায়। মনে হয় আর বেশিদিন তো এগুলো পাব না।” কষ্ট চাপা কণ্ঠে হাসতে শুরু করলেন রুদ্রপ্রসাদ।
রুদ্রপ্রসাদের জন্মদিনে বাইরে খাওয়াদাওয়ার প্ল্যান করা হয়েছে। জানালেন কন্যা সোহিনী সেনগুপ্ত। মঞ্চ, সিনেমার পাশাপাশি এখন ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন সোহিনী। ধারাবাহিকের মেকআপ রুমে মেকআপ করছিলেন ‘খড়কুটো’র পুটুপিসি। বাবার জন্মদিনে সকলের সঙ্গে বাইরে খেতে যেতে পারবেন না পেশাদার প্রতিশ্রুতির কারণে। খানিক মন খারাপ করেই সোহিনী TV9 বাংলাকে বলেছেন, “আমি তো বাবাকে খাওয়াতে নিয়ে যেতে পারছি না। সকাল থেকেই শুটিংয়ে আছি। সপ্তর্ষি ও নান্দীকারের অর্ঘ্যরা বাবাকে খাওয়াতে নিয়ে যাবে ফ্লুরিজ়ে। সেখানে প্লাম কেক খাওয়া হবে। ওটাই আমাদের সকলের ফেভারিট। যে কোনও অনুষ্ঠান-উৎযাপনে আমরা বাফ্লুরিজ়েই যাই। মা-বাবা সকলে সেখানেই যেতেন। আজ আমি মিস করলাম সবটা। কী আর করব বলুন। তবে আমি রাতে গিয়ে দেখা করব বাবার সঙ্গে।”
বাংলার নাট্য মঞ্চের অন্যতম নাম রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনা করেছেন ‘আন্তিগনে’, ‘ফুটবল’, ‘খড়ির গণ্ডি’, ‘ব্যতিক্রম’, ‘শঙ্খপুরের সুকন্যা’, ‘যখন একা’, ‘হনন মেরু’, ‘নীলা’, ‘মুদ্রারাক্ষস’, ‘মাননীয় বিচারকমণ্ডলী’, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক’, ‘চক্র’, ‘পাতা ঝরে যায়’, ‘বৃক্ষের খোঁজে’, ‘শানু রায়চৌধুরী’, ‘এই শহর এই সময়’, ‘ফেরিওয়ালার মৃত্যু’, ‘নানা রঙের দিনগুলি’, ‘শেষ সাক্ষাৎকার’-এর মতো নাটক। অভিনয় করেছেন ‘আন্তিগনে’, ‘ফুটবল’, ‘ব্যতিক্রম’, ‘শঙ্খপুরের সুকন্যা’, ‘যখন একা’, ‘হনন মেরু’, ‘নীলা’, ‘মুদ্রারাক্ষস’, ‘মাননীয় বিচারকমণ্ডলী’, ‘শেষ সাক্ষাৎকার’, ‘সজনবোধিয়ার ঘাট’, ‘নগরকীর্তন’, ‘ফেরিওয়ালার মৃত্যু’, ‘গোত্রহীন’, ‘যাহা চাই’, ‘মাধবী’, ‘নাট্যকারের সন্ধানে ৬টি চরিত্র’, ‘মঞ্জুরী আমের মঞ্জুরী’, ‘নাচনী’, ‘পাঞ্চজন্য’র মতো নাটকে। রুপোলি পর্দাতেও অভিনয় করেছেন। ১৯৯৩ সালে বের্নার্দো বার্তোলুচির ‘লিটল বুদ্ধ’তে রেখেছেন অভিনয়ের সাক্ষর। রোল্যান্ড জোফির ‘সিটি অফ জয়’তেও অভিনয় করেছেন রুদ্রপ্রসাদ। তপন সিনহার ‘হাটে বাজারে’, ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘সাগিনা মাহাতো’তেও তাঁর অভিনয় বিশেষ উল্লিখিত।
পরিবার, প্রিয়জনদের সঙ্গে এভাবেই আনন্দে থাকুন রুদ্রপ্রসাদ। TV9 বাংলার পক্ষ থেকে আপনাকে জানানো হচ্ছে ‘শুভ জন্মদিন। ভাল থাকুন।’
আরও পড়ুন: Mrinal Sen: ‘কলকাতায় পরিকাঠামো নেই’, মৃণাল সেনের সৃষ্টি গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত হল বিদেশে