পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথিতে কথা দিয়েও বিচিত্রা অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী না আসায় মিউজিক্যাল টিমের শিল্পীদের হেনস্থা এবং তাঁদের সাউন্ড সেটআপ ও ইনস্ট্রুমেন্ট আটকে রাখার অভিযোগ উঠল একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চর্চা ছিল তুঙ্গে। কাঁথিতে আটকে থাকা সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছিল সকলের মনে। ঠিক কী ঘটেছিল, সঠিকভাবে জানানর আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক শিল্পীরা সাহায্যের আবেদন করতে শুরু করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্র।
কী বলেন তিনি?
লোপামুদ্রা মিত্র তাঁর ফেসবুক লাইভে এসে শনিবার বলেন, ‘আমার কয়েকজন মিউজিশিয়ান বন্ধু কাঁথিতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আটকে রয়েছেন। ঠিক কী কারণে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে সেটা নিয়ে নিশ্চিত নই। তবে আমিও এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি তাই ধারণা করতে পারি নিশ্চয় অর্গানাইজার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে। আমি এই বিষয়ে পুলিস ও পশ্চিমবঙ্গের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ইমন চক্রবর্তীও-
ইমন বলেন, ‘গানবাজনা করতে চাওয়ার পরিণাম কী এই যে একটা দলকে চার পাঁচদিন আটকে রাখা হবে? যারা এই কাজ করেছেন তাদের দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে করজোড়ে অনুরোধ করব যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা ব্যবস্থা নিন।’
তবে কীসের এই উদ্বেগ? কী ঘটে কাঁথিতে?
৩ এপ্রিল কাঁথির বকশিশপুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় উপস্থিত থাকবেন বলেছিলেন। কিন্তু যথা সময় মঞ্চে তাঁকে দেখা গেল না। স্থানীয়দের অভিযোগ দেবশ্রী রায় অনুষ্ঠানে আসেননি। এরপরই মেজাজ হারায় স্থানীয় বাসিন্দারা। শাস্তি হিসেবে নাকি স্থানীয়রা মিউজিশিয়ানদের প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ইনস্ট্রুমেন্ট ৬ দিন ধরে আটকে রেখেছিলেন, উৎসব কমিটির বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ সামনে আসে। যদিও শিল্পীদের আটকাননি তাঁরা। তবে এতমূল্যের যন্ত্র তাঁরা ছেড়ে আসতে রাজি ছিলেন না। সেই কারণে তাঁদেরও থেকে যেতে হয়। শনিবার এ নিয়েই আবার মেচেদা বাইপাসে অবরোধ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে সেদিন কী ঘটে?
এখনও পর্যন্ত মেলা খবর অনুযায়ী তিনি নাকি সেদিন রওনা দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের উদ্দেশে। কিন্তু জানা যায় অনুষ্ঠানের অনুমতী নেই। ফলে সেখান থেকেই কাঁথি পুলিশকে জানিয়ে তিনি ফিরে আসেন। এই প্রসঙ্গে দেবশ্রী এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি তো গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা পুলিশের পারমিশনই নেয়নি। জুনপুট কোস্টাল থানাও অনুষ্ঠানের কথা জানত না”। দেবশ্রী বলেন, “যেভাবে মিউজিশিয়ানদের আটকে রেখেছে সেটা তো অপরাধ। ওঁদের পরিবারের লোকজন তো কিডন্যাপের অভিযোগ করতে পারে। আমার নিজেরই খারাপ লাগছে।”
ওই ক্লাবের সভাপতি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের মধুরিমা মণ্ডলের স্বামী মানবেন্দ্রনাথ মণ্ডল। তিনি বলেন ” পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করার বিষয়টি ভিত্তিহীন। দেবশ্রী না আসায় দর্শকদের বিক্ষোভের জেরে প্যাণ্ডেল, লাইট ও মাইকসেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুকিংয়ের সব টাকা এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলেই সমস্ত সামগ্রী ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। আমরাও চাইছি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান “। এব্যাপারে অর্গানাইজার সুমিত মাইতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ‘সুইচ অফ’ ছিল। তাই কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন ” আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটে যাবে বলেই আমরা আশাবাদী “।
এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। অবশেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে সমস্যা মিটল, কাঁথির বকশিসপুরে শিল্পীদের ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের যে বাদ্যযন্ত্র আটক করে রাখা হয়েছিল তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই মেলে খবর।