বিশ্বের মন খারাপ আজ। রোদ ঝলমলে আকাশেও বিষাদ সুর। কেউ চোখের জল মুছছেন, কেউ ফিরে যাচ্ছেন সুদূর কোন স্মৃতিতে। নেই লতা মঙ্গেশকর। প্রায় এক মাসের যুদ্ধ থমকে গিয়েছে আজ। ধরা গলায় টিভিনাইন বাঙলার ফোন ধরলেন হৈমন্তী শুক্লা। এক দীর্ঘশ্বাস। ফিরে গেলেন ফেলে আসা কোন সেই স্বর্ণযুগে। মনে পড়ে গেল ‘জ্যান্ত সরস্বতী’কে কাছ থেকে ছোঁয়ার সেই সব না হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।
একটু থামলেন। তারপর বললেন, “কী বলি বলুন তো। কষ্ট হচ্ছে খুব। কত কিছু যে ছিল একটা মানুষের মধ্যে। ওঁকে ঈশ্বররূপে তো আমরা সকলেই দেখি। আমার কাছেও কিছু আলাদা নয়। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে মা সরস্বতীর মূর্তি না বানিয়ে ওঁর পুজো করি। তাই বোধহয় ভাল হত।” স্মৃতি হাতড়ে ছোটবেলায় ফিরে গেলেন গায়িকা। মনে পড়ে গেল টেপ ফ্রক পরা সেই ছোট্ট হৈমন্তীর কথা। যে ছিল লতা অন্ত প্রাণ। যোগ করলেন, “বোধ হওয়ার বয়সের আগে থেকে ওঁর গান শুনেছি যে। দূর থেকে ভেসে আসছে কোথাও একটা বাজছে ‘আয়ে জা আনেওয়ালা…’। দৌড়ে চলে যেতাম। কী যে একটান ছিল। এখন বুঝতে পারি না।”
শেয়ার করলেন এমন এক ঘটনার যা এতদিন ছিল অন্তরালেই। দুর্গাপুরে একবার লতা মঙ্গেশকরের শো ছিল। গলাটা সঙ্গ দিচ্ছিল না কিছুতেই। হৈমন্তী বলছেন, “আমরা হলে হয়তো ভাব থাকত, ‘হ্যাঁ ঠিক গেয়ে দেব’। কিন্তু ওঁর কী টেনশন।” শেষ দিন পর্যন্তও নাকি মঞ্চে ওঠার আগে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেত মানুষটির। একবার মঞ্চে লতা, শ্রোতা হৈমন্তী। হৈমন্তীর কথায়,” একটা গান গেয়ে ওঠার পরেই আমাকে এসে বললেন ঠিক ছিল গানটা।” সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন হৈমন্তী। যে মানুষকে সারসা বিশ্ব জুড়ে পুজো করে তিনি স্বয়ং এসে সার্টিফিকেট চাইছেন এ যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাঁর। তাঁর হিন্দি গানের থেকেও বাংলা গানের ওপর হৈমন্তীর টান ছিল আরও বেশি, ছিল ,মায়া। সেই মায়ার বাঁধন কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি লতার, রয়ে গেল তাঁর কাজ, রয়ে গেলেন হৈমন্তীর মনে আজীবন মা সরস্বতী হয়েই।