Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

আমির-কিরণের বিচ্ছেদ ঘোষণার সিদ্ধান্ত কি আদতে সেলিব্রিটি স্টান্ট? মত মনোবিদ থেকে তারকার

Aamir Khan Kiran Rao: এতদিন সুখী দাম্পত্যের ছবি প্রকাশ করার পর হঠাৎই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত এবং কোপেরেন্টিংয়ের বিবৃতিতে প্রশ্ন উঠছে, এ নেহাতই সেলিব্রিটিদের চিরাচরিত গিমিক ব্যতীত কিছু নয়। সম্পর্ক ছেদ হয়ে যাওয়ার অনেক পরেও এই ধরনের ঘটনা সেলিব্রিটিহুড বজায় রাখার কৌশল মাত্র।

আমির-কিরণের বিচ্ছেদ ঘোষণার সিদ্ধান্ত কি আদতে সেলিব্রিটি স্টান্ট? মত মনোবিদ থেকে তারকার
আমির খান এবং কিরণ রাও।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 04, 2021 | 10:23 PM

১৫ বছর। নেহাত কম সময় নয়। দাম্পত্য সম্পর্কে ছিলেন আমির খান এবং কিরণ রাও। এর মধ্যেই তাঁদের জীবনে এসেছে একমাত্র সন্তান আজাদ রাও। সুখী দাম্পত্যের ছবিই এতদিন দেখেছন সাধারণ মানুষ। হঠাৎই ছন্দপতন। বলা ভাল, বড় এক ধাক্কা। কোনও কিছুর আগে থেকে আভাস না দিয়েই একেবারে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা করলেন আমির-কিরণ!

দাম্পত্য বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত তো একদিনে নেওয়া নয়। গত বছর ডিসেম্বরেও একসঙ্গে বিবাহবার্ষিকী পালন করেছিলেন তাঁরা। কেক কাটা, সেলিব্রেশনের সে সব ছবি সোশ্যাল ওয়ালে শেয়ার করেছিলেন। তার পরের কয়েক মাসে কী এমন হল? এতদিন সুখী দাম্পত্যের ছবি প্রকাশ করার পর হঠাৎই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত এবং কোপেরেন্টিংয়ের বিবৃতিতে প্রশ্ন উঠছে, এ নেহাতই সেলিব্রিটিদের চিরাচরিত গিমিক ব্যতীত কিছু নয়। সম্পর্ক ছেদ হয়ে যাওয়ার অনেক পরেও এই ধরনের ঘটনা সেলিব্রিটিহুড বজায় রাখার কৌশল মাত্র।

গতকাল এক বিবৃতি পেশ করে কিরণ এবং আমির দু’জনে জানিয়েছেন—‘গত পনেরো বছর একসঙ্গে আমরা অভিজ্ঞতা, আনন্দ এবং সুখ ভাগ করে নিয়েছি এবং আমাদের সম্পর্কটি কেবল বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় বেড়েছে। এখন আমরা আমাদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই— স্বামী-স্ত্রী হিসাবে নয়, একজন বাবা-মা এবং পরিবার হিসাবে। … একটি বিস্তৃত পরিবার যেভাবে জীবন যাপন করে ঠিক তেমন ভাবে আমাদের জীবন ভাগ করে নিয়েছি। আমরা আমাদের ছেলে আজাদের প্রতি অনুগত পিতা-মাতার মতো রয়েছি, যাকে আমরা লালন-পালন করব এবং একত্রেই করব।’

আরও পড়ুন, ‘চেষ্টা করেও ওদের বিয়েটা বাঁচাতে পারলাম না’, হতাশ আমিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু

ঠিক এখানেই আসছে একটি প্রসঙ্গ। কো পেরেন্টিং। অর্থাৎ সন্তানের যৌথ দায়িত্ব গ্রহণ। আমির-কিরণ প্রথম নন। এর আগেও বহু সেলেবের বিয়ে ভেঙেছে। বহু সাধারণ মানুষ দাম্পত্য বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছেন যৌথ ভাবে। এ তো নতুন নয়। কিন্তু আমির-কিরণের যৌথ বিবৃতির পর কো পেরেন্টিং যেন নতুন করে আলোচনায় উঠে এল। পরোক্ষে সেলিব্রিটিহুড বজায় রাখতেই কি সফল হলেন তাঁরা?

পেরেন্টিং কনসালটেন্ট পায়েল ঘোষ ব্যখ্যা করলেন, “আমির-কিরণ কো পেরেন্টিং নতুন মোড়কে যেন বিজ্ঞাপনের মতো পেশ করলেন। সেপারেশন হলে তো কোপেরেন্টিংই করতে হয়। যতটা সুন্দর ভাবে প্যাকেজিং করে দিয়েছেন, অতটা সেলফ কন্ট্রোল, ম্যাচিওরিটি তো থাকে না। ওঁদের দেখে যাঁরা বিয়ে ভাঙব ভাঙব করছেন, তাঁদের আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। বাবা, মায়ের বিচ্ছেদের যন্ত্রণাটা শিশুদের একই থাকে। সে আমির খানেরও যা, সাধারণেরও তাই। সেলেবদের বিচ্ছেদের খবর উপর থেকে দেখতে ভাল লাগে হয়তো। কিন্তু গভীর ভাবনার মধ্যে দিয়ে যাওয়া উচিত। শিশুর মানসিক টানা পোড়েনের বিষয় থাকবেই। বিচ্ছেদের পর জীবন যাপনের তফাত থেকেই যায়। শিশুর উপর তার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়ে।”

আরও পড়ুন, হাতে হাত, বিচ্ছেদের পর লাইভে আমির-কিরণ, গোটা সময় চুপই রইলেন কিরণ

বিচ্ছেদের ঘোষণার পরও আমির-কিরণ তাঁদের পুত্র সন্তান আজাদকে নিয়ে কার্গিলে রয়েছেন। এ খবর সংবাদমাধ্যমে জানান আমিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিন হাজে। অর্থাৎ সম্পর্কের নাম পাল্টে গেলেও তাঁরা একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। আবার কার্গিল থেকেই একসঙ্গে ভার্চুয়ালি লাইভ করেন দম্পতি। কটাক্ষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছে, ‘এ যেন বিচ্ছেদের উদযাপন’। সেলেবদের সেলিব্রিটিহুড বজায় রাখার এ হেন প্রয়াস সাধারণ মানুষের মনে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে?

মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ের মতে, “ম্যারেজ আর রিলেশনশিপ অত্যন্ত ফ্র্যাজাইল। পাবলিক যদি কোনও সেলেবের বিয়েটা গুড ম্যারেজ মনে করে, সেক্ষেত্রে এই ধরনের খবর একটা কমিটমেন্ট ফিয়ার তৈরি করে। যাঁদের কমিটমেন্ট ফোবিয়া আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি ইমপ্যাক্ট ফেলে। চতুর্দিকে যখন বিয়ে ভাঙছে, তখন এটা একটা পয়েন্ট যোগ করে। বেশ কিছু বছর একসঙ্গে থাকা মানেই যাঁরা মনে করেন, বিয়েটা সাকসেসফুল, তাঁদের ধাক্কা লাগে। কারও ফিয়ার অব ম্যারেজ থাকলে সেটাকে আরও উৎসাহ দেয়।”

শোনা যাচ্ছে, গত কয়েক মাস সেপারেশনে থাকার পরই নাকি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই জুটি। বিনোদন দুনিয়ার বাসিন্দা তাঁরা। জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের বিনিময় মূল্য রয়েছে তাঁদের। প্রতিটি মুহূর্তই যেন সুখী জীবনের বিজ্ঞাপন। কিন্তু বাস্তবে জীবন কি সত্যিই অতটা সোজা পথে চলে? নাকি বাস্তব যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখে সেলিব্রিটিহুড বজায় রাখতেই কোথাও ‘হ্যাপি ফেস’-এর প্রচার?

আরও পড়ুন, ফতিমার সঙ্গে সম্পর্কের জেরে আমিরের বিচ্ছেদ? ট্রোলের শিকার নায়িকা

অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী বিবাহ বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। অভিনেত্রী মধুমিতা সরকারের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। তাঁর মতে, “ডিভোর্সের অনেক কারণ থাকে। সব কিছুকে একই সমীকরণে ফেলে দেওয়া মুশকিল। আমির-কিরণ যদি গিমিক বজায় রাখতেও নিজেদের বিচ্ছেদ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন, যাতে অন্যদের তাঁদের সম্পর্কে ভুল কিছু ভেবে নেওয়ার অবকাশ না থাকে, সত্যিটা নিজেরাই বলে দিচ্ছেন, তাহলে ক্ষতি কী? আমি তো মনে করি রাজনীতিবিদরাও যদি প্রকাশ্যে বলতেন, কত ঘুষ নিয়েছি, তাহলে রাজনীতিটা আরও সুন্দর হত।”

অর্থাৎ সাধু সাবধান! প্রত্যেকের জীবন আলাদা। প্রত্যেকটা সম্পর্ক আলাদা। প্রতিটি বিয়ে, প্রতিটি বিচ্ছেদের আলাদা কার্যকারণ রয়েছে। রিমা মনে করিয়ে দিলেন, “সেলিব্রিটি আর আম জনতার লাইফ আলাদা। তাঁদের সোসাইটিতে যেটা অ্যালাউড, সব সোসাইটিতে সেটা নাও হতে পারে। আমরা কিন্তু ওদের মতো করে লাইফ কাটানোর কথা ভাবি না। ওঁদের সোসাইটিতে অনেক কিছু অ্যাকসেপটেড। সেটা সব সোসাইটিতে নয়।” ফলে পর্দার এ পার আর ও পারের তফাতটা থাকবেই। সেলেব মন সেলিব্রেটেড হতেই চাইবে। কখনও পেশাদার সেলেবের ব্যক্তিজীবনের চোখের জলও বিকিয়ে যায় অর্থের বিনিময়ে। তাই সেলেবের ব্যক্তি জীবন যখন হাটে, বাজারে, আপনার উঠোনে এসে পড়ে, তাকে রঙিন মোড়কে ধরে রাখাই তো পেশাদার সেলেবের কাজ। সে বিয়েই হোক, অথবা বিচ্ছেদ।