‘কী দরকার ছিল বল তো আমাদের এই লাইনে আসার’; জগন্নাথ বসুকে কেন বলেছিলেন গৌরী ঘোষ?

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sneha Sengupta

Aug 26, 2021 | 1:08 PM

জগন্নাথ বসু বলেছেন, "যেদিন আমার সবচেয়ে ভাল শো হয়েছিল পার্থদা ও গৌরীদি একছুট্টে বাড়ি এসে চিৎকার করে বলেছিলেন, 'এদিকে নেমে আয়, কী অপূর্ব করলি।'"

কী দরকার ছিল বল তো আমাদের এই লাইনে আসার; জগন্নাথ বসুকে কেন বলেছিলেন গৌরী ঘোষ?

Follow Us

“তোমার ছোঁয়ায় শব্দও খোলে পাপড়ি,
ঘুম থেকে জাগে কবিতার রাজকন্যা,
সোনার কাঠির জাদু ধরে আছে কণ্ঠে,
বাধ ভেঙে নামে বিপুল আলোক বন্যা…”

ভেন্টিলেশনে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজ সকাল ৮:৫৫তে মৃত্যুর কাছে হার মানেন বিখ্যাত বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষ। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অনেকের মনে। আকাশবাণীর সহকর্মী জগন্নাথ বসু তাঁর প্রিয় গৌরীদির বিষয়ে বলতে গিয়ে এই কবিতাটি দিয়েই শুরু করলেন তাঁর স্মৃতিচারণা। কবিতাটি গৌরী ঘোষকে নিয়ে লিখেছিলেন পবিত্র মুখোপাধ্যায়।

করোনার দুটি ডোজ নেওয়ার পরও সংক্রমিত হয়েছেন জগন্নাথ। তারপর থেকে তিনি নিজেও খুব একটা সুস্থ নয়। একের পর এক দুঃসংবাদে মর্মাহত হয়েছেন। প্রিয় গৌরী ঘোষকে আপন দিদির মতো ভালবাসতেন। তাঁর চলে যাওয়া কিছুতেই মনে নিতে পারছেন না প্রবীণ বাচিক শিল্পী। TV9 বাংলা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোনের ওপার থেকে ধরা ধরা কণ্ঠে জগন্নাথ বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। দু’জনের উচ্চারণকে আমি অনুকরণীয় বলে মনে করতাম। একজন শম্ভু মিত্র, অন্যজন গৌর ঘোষ। যাঁর উচ্চারণশৈলী, বাচনভঙ্গী, কণ্ঠস্বর – সমস্ত কিছুই ছিল অসাধারণ। দীর্ঘকাল আমরা একসঙ্গে আকাশবাণীতে কাজ করেছি। উনি ঘোষণা, ইত্যাদির দিকে ছিলেন। আমি ছিলাম নাটকের দিকে। আমাদের মধ্যে দিদি-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। আমি ওঁকে নিজের দিদি বলে ভাবতাম। তিনি আমাকে ভাইয়ের মতোই ভালবাসতেন।”

দু’জনে কেবল সহকর্মী ছিলেন না, পারিবারিক সূত্রেও আবদ্ধ ছিলেন। ‘ফ্যামিলি ফ্রেন্ড’ বলা হয় যাকে। বলেন,  “এরকম অনেক ঘটনা আছে মনে রাখার মতো। দু’জনেই টেনশনে কাঁপছি। একটু পরে আমাদের অনুষ্ঠান রবীন্দ্রসদনে। গৌরীদি আমার হাতে হাত দিয়ে বললেন, দেখ তুই তো আমার ছোট ভাই। কী দরকার ছিল বল তো আমাদের এই লাইনে আসার। তা হলে তো এই টেনশনটা ভোগ করতে হত না। এই সব মজা করতেন আরকী। আমরা সপরিবারে একসঙ্গে অনেক জায়গায় বেড়াতেও গিয়েছে। দিঘা, চাঁদিপুর… আমাদের সঙ্গে যেতেন অমিতাভ বাগচীও। পূর্ণিমার চাঁদনী রাতে রবীন্দ্রনাথের গান ধরেছিলেন গৌরীদি। অসাধারণ সেই গান। আমার আজ সকাল থেকেই কানে বাজছে।”

আকাশবাণীর জুটি ছিলেন পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ। কালজয়ী এই জুটিকে কেউ ভোলেনি। ভুলতে পারবে না কোনওদিনই। এই জুটি সম্পর্কে নানা কথা বলতে গিয়ে জগন্নাথ তাঁর স্মৃতির পাতা থেকে টেনে আনেন এক আশ্চর্য ঘটনা। যে ঘটনা বলে দেয় সহকর্মী হয়ে কীভাবে পাশে থাকা যায়। জগন্নাথ বলেন, “স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। কবীর সুমনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সেখানে। তিনি আমাকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। ওঁরই মাথা থেকে এই প্যাঁচটা বেরিয়েছিল বোধহয়। সাহেবরা বলেছিলেন, কলকাতায় দুটি ভাল জুটি আছে বাচিক শিল্পের। একটি পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষ। অন্যটি জগন্নাথ বসু-ঊর্মীমালা বসু। তোমাদের মধ্যে তো একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকার কথা। তোমাদের মধ্যে ঈর্ষার সম্পর্ক নেই? আমি সেদিন বলেছিলাম, যেদিন আমার সবচেয়ে ভাল শো হয়েছিল পার্থদা ও গৌরীদি একছুট্টে বাড়ি এসে চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘এদিকে নেমে আয়, কী অপূর্ব করলি।’ এই ছিল আমাদের সম্পর্ক। আমাদের ভালবাসাবাসির সম্পর্ক।”

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন গৌরী ঘোষ। নিউরোলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে। কিছু সংক্রমণ ছিল, যা ধরা পড়েনি বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। ধরা পড়লে হয়তো চিকিৎসা করা যেত। দীর্ঘদিন আকাশবাণীতে কাজ করেছিলেন তিনি। জুটি হিসেবে পার্থ ঘোষ এবং গৌরী ঘোষ আবৃত্তির জগতে জনপ্রিয়।

আরও পড়ুনবাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের প্রয়াণ, এক অভিভাবক হারাল আবৃত্তি শিল্প

Next Article