বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের প্রয়াণ, এক অভিভাবক হারাল আবৃত্তি শিল্প

Gouri ghosh: বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫৫ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ভেন্টিলেশনে ছিলেন গত কয়েকদিন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের প্রয়াণ, এক অভিভাবক হারাল আবৃত্তি শিল্প
গৌরী ঘোষ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 26, 2021 | 11:56 AM

প্রয়াত বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষ। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫৫ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ভেন্টিলেশনে ছিলেন গত কয়েকদিন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন গৌরী ঘোষ। নিউরোলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে। কিছু সংক্রমণ ছিল, যা ধরা পড়েনি বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। ধরা পড়লে হয়তো চিকিৎসা করা যেত। দীর্ঘদিন আকাশবাণীতে কাজ করেছিলেন তিনি। জুটি হিসেবে পার্থ ঘোষ এবং গৌরী ঘোষ আবৃত্তির জগতে জনপ্রিয়।

বৃহস্পতিবার গৌরীর প্রয়াণের পর তাঁর পুত্র অয়ন ঘোষ TV9 বাংলাকে বলেন, “আমার নিঃশ্বাস চলে গেল। মা চলে গেল মানে আমার নিঃশ্বাস চলে গেল। মায়ের ২১ মার্চ একটা স্ট্রোক হয়। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন চারদিন ভর্তি থাকার পর বাড়ি নিয়ে আসি। সুস্থ হচ্ছিলেন। গত ১ অগস্ট একটা কনভালশন হয়। সেটা হওয়ার পর মাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সে দিন থেকে আজ ৮টা ৫৫ পর্যন্ত যথেষ্ট লড়েছে মা। চিকিৎসকরাও চেষ্টা করেছেন। আমার ক্ষতিটা শুধু আমিই বুঝতে পারব। ছেলে হিসেবে আমার আর কিছু বলার নেই। আমি স্তম্ভিত।”

গৌরী ঘোষের প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর বার্তায় বলেন, ‘বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী গৌরী ঘোষের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর অনবদ্য আবৃত্তি মননশীল শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। তিনি দীর্ঘদিন আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের উপস্থাপিকা-ঘোষিকা হিসাবে কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সদস্য গৌরী ঘোষকে রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে ‘কাজী সব্যসাচী সম্মান’ প্রদান করে। তাঁর প্রয়াণ সাংস্কৃতিক জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি গৌরী ঘোষের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

ব্যক্তিগত সম্পর্কে পার্থ ঘোষ এবং গৌরী ঘোষ স্বামী-স্ত্রী। আবৃত্তির জগতে স্তম্ভ এই দম্পতি। রেডিও উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। আজ যেন এক অভিভাবককে হারালেন বাচিক শিল্পীরা। এমনটাই মনে করছেন শিল্প জগতের বড় অংশ। এ দিন কবি সুবোধ সরকার TV9 বাংলাকে বলেন, “আমি এই সংবাদে শোকাহত। খুব কষ্ট লাগছে। গৌরীদির সঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে, বহু মঞ্চে বহু জায়গায় বহু ব্যক্তিগত অনুসঙ্গে বারবার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। অত্যন্ত গুণী মহিলা ছিলেন। কবিতা আবৃত্তি করে বিখ্যাত হয়েছিলেন এটা ঠিক। পাশাপাশি একজন মননশীল, রুচিশীল মানুষ তাঁর ভিতরে ছিলেন তা প্রতিটি বাক্যে অনুভব করতে পারতাম। অত্যন্ত গুছিয়ে কথা বলতেন। প্রতিটি শব্দ ওজন করে বলতেন। এমনি কোনও কথা গৌরিদিকে কখনও বলতে শুনিনি। আবৃত্তি শিল্পকে শিল্প করে তোলা, জনপ্রিয় করে তোলা, কবিতাকে সবার কাছে নিয়ে যাওয়া এই কাজটা তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে করে গিয়েছেন।”

ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় সুবোধ আরও বলেন, “আমার তখন বয়স খুব অল্প। তখনও গৌরীদির সঙ্গে দেখা হয়নি, কথা হয়নি। হঠাৎ দেখি সংবাদপত্রে রবীন্দ্রসদনে আমার কবিতা পাঠ করেছেন গৌরীদি, রিভিউয়ার সেটা বড় করে লিখেছিলেন। এটা আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি। পার্থদার জন্যও আমার মন খারাপ লাগছে। একা হয়ে গেলেন। কী করবেন আমি জানি না। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা অ্যাকাডেমিতে দুজনেই উপদেষ্টার মতো, অভিভাবকের মতো থেকেছেন। গৌরীদির প্রয়াণে বাচিক শিল্পের জগতে ধ্বস নামল।”

আরও পড়ুন, ‘লস্ট’-এর শুটিং শেষ, ছবি থেকে কী শিখলেন ইয়ামি গৌতম?