প্রীতম দে
সায়ক রাজ। অর্থনীতিতে পিএইচডি। কিন্তু সংস্কৃতে দখল দেখে মনে হবে ওটাই ছিল পড়ার বিষয়। আসলে ড. সায়ক একজন পুরোহিত। পেশায় নয়, নেশায়।
“নীলাদ্রৌ তু দশবর্শম, আড়প মণ্ডপ দিনে। উল্টো রথের দিন মাসির বাড়িতে জগন্নাথ দর্শন পুরীতে সারা বছরের দর্শনের সমান। চারিদিকে যে সমস্ত রথ হয়, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এ কথা বলতে পারি আমাদের বাড়ির জগন্নাথ আরাধনায় পুরো পুরীর গন্ধ পাওয়া যায়,” বলেন সায়ক। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার সোনা বেশ হয় দেখার মতো। কোটি টাকার সোনার গয়না পরানো হয়।
পুরীতে যেমনভাবে জগন্নাথদেবের আরাধনা করা হয়, ঠিক তেমনভাবেই অক্ষরে-অক্ষরে নিয়ম রীতি মেনে পুজো হয় এই জগন্নাথ বাড়িতে।
১৯৯৬ সালে পুরীতে নবকলেবর হয়। সেই সময় পুরীর পাণ্ডা শ্রী মধুসুদন শৃঙ্গারি, বরাহনগর পাঠবাড়ী আশ্রমের তৎকালীন মহন্ত শ্রীল মধুসূদন দাস বাবাজী মহারাজকে চতুর্ধামূর্তি ব্রহ্মদারুর অর্থাৎ জগন্নাথ দেন। বাবাজী তাঁর প্রিয় শিষ্য সায়ক রাজকে সেই ঠাকুর সেবার ভার দেন। সেই থেকেই জগন্নাথ সেবিত হচ্ছেন এই বাড়িতে, পরবর্তীতে ২০১৫ সালের নবকলেবরের সময় আসেন আরও এক চতুর্ধা মুর্ত্তি। পুরাতন মুর্ত্তি দিয়ে আসা হয় শ্রীক্ষেত্রে। শ্রীমন্দিরে ব্রহ্মদারুর যেমন সেবা, এখানেও তেমন কিন্তু সংক্ষিপ্ত। কিন্তু রান্নাবান্নার সব নিয়মই মানা হয় এখানে, ভোগ ও হয় পুরীর মত। ব্যবহার করা হয় না আলু লঙ্কা। যখন ভোগ লাগে, এক দিব্য গন্ধে ভরে যায় মন্দির। এ অভিজ্ঞতা নিত্য। এ সময়ে যাঁরা দর্শন করেছেন বা সেই গন্ধ আস্বাদন করেছেন, তাঁরা বলেন, প্রভু সত্যি আসেন এখানে ভোগ খেতে। ভক্তদের বিশ্বাসের মান রাখেন ভগবান, দর্শন দেন অবিকল পুরীর রূপে।
কোটি টাকার গয়না। সোনার হাত। সোনার ভারী মুকুট। সোনার পদ যুগল। সোনার সুদর্শন চক্র। দেখলে চোখ যেন ঝলসে যায়। মানিকতলা জগন্নাথ বাড়ির রথ-উল্টোরথে থাকে এমনই অনেক বিস্ময়কর বিষয়।
এত দামী অলঙ্কার। চিন্তা হয় না? “গয়না যায়। রক্ষাও করবেন তিনিই,” হেসে জবাব জগন্নাথ বাড়ির ডক্টরেট পূজারীর।
আরও পড়ুন- ডুকরে কাঁদছে ডোকরা, পাশে পুজো কমিটি