মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার পত্রে সই করলেন সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। গতকাল অর্থাৎ বুধবার সন্ধেয় এই সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্রের কাজ সেরে ফেলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করে এই খবর নিজেই দিয়েছেন সুমন।
অঙ্গদান অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমাজের সব স্তরেই সচেতনতার অভাব রয়েছে অঙ্গদান নিয়ে। গত ১৩ অগস্ট ছিল ওয়ার্ল্ড অর্গ্যান ডোনেশন ডে। আগামী ৪ নভেম্বর, ন্যাশনাল অর্গ্যান ডোনেশন ডে। বিভিন্ন স্তরে সারা বছর ধরেই সচেতনতা প্রসারের কাজ চলে। কিন্তু এই দুটি দিনকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট দফতরে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।
স্পেশ্যাল সেক্রেটারি মেডিকেল এডুকেশন, সিনিয়র স্টেট নোডাল অফিসার ফর অর্গ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডক্টর তমাল ঘোষ গত ১৩ অগস্ট মরোণোত্তর অঙ্গদান নিয়ে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। একজন অঙ্গদান করলে কতজনকে বাঁচাতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্ট দু’রকম হয়। একটা লাইভ আর একটা ব্রেন ডেথের পর। আমরা চাইছি লোকে ব্রেন ডেথের পর অর্গ্যান ডোনেট করুক। ব্রেন ডেথের পর যিনি অর্গ্যান ডোনেট করবেন, তার জন্য অঙ্গীকার করুক। এটা করতে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মানুষ মারা যাওয়ার পর তাঁকে দাহ করা হবে বা দফন করা হবে, যাই-ই হোক অর্গ্যান নষ্ট হবে। একজন ব্রেন ডেথ হওয়া পেশেন্ট আটজনের জীবন বাঁচাতে পারেন। আটটা অর্গ্যান পাওয়া যেতে পারে। লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস, প্যাংক্রিয়াস ইত্যাদি।”
অর্গ্যান ডোনেশন নিয়ে মানুষের ভুল ধারণাও রয়েছে। কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই সে সব ভুল ধারণার সম্মুখীন হন ডক্টর তমাল ঘোষ। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “অর্গ্যান ডোনেট করলে দেহের কোনও বিকৃতি হবে, এই ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের। এটা ভাঙাতে হবে। অর্গ্যানের জন্য অর্গ্যানই চাই। কোনও ফ্যাক্টারি তো নেই, যেখানে অর্গ্যান তৈরি করা যাবে। একমাত্র যদি কেউ ডোনেট করেন, তবেই পাওয়া যাবে। আর একজন লাইভ লোক কিডনি বা লিভার দিতে পারেন। কিন্তু হার্ট বা লাংস তো জীবন্ত মানুষ, অর্থাৎ লিভিং ডোনার দিতে পারে না। তার জন্য ব্রেন ডেথ হতে হবে। এই সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছি। যাতে আমার ব্রেন ডেথ হলে যদি অঙ্গদান করি তা হলে অন্য কেউ পাবেন, তার উপকার হবে। সমাজের উপকার হবে।”
অঙ্গ নেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা কত হওয়া প্রয়োজন তা নিয়েও সাধারণ মানুষের ধারণা অত্যন্ত সীমিত। এ প্রসঙ্গে ডক্টর তমাল ঘোষ বলেছিলেন, “অর্গ্যান দিয়ে তো মানুষের কাজে লাগতে হবে। ধরুন কোনও পেশেন্ট ডায়াবেটিক বা কোনও পেশেন্টের ক্যানসার আছে, অথবা লিভারে হয়তো সমস্যা আছে তার অর্গ্যান তো ভাল হবে না। এগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। আমরা ৫০, ৬০-এর মধ্যে কিডনি নেওয়ার চেষ্টা করি। কম বয়স হলে ভাল। আর কর্নিয়া ৭০-এর উপর হলেও নেওয়া যায়।”
তবে সার্বিক ভাবে মরোণোত্তর অঙ্গদানে আরও বেশি মানুষ এগিয়ে আসুন, এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন ডক্টর ঘোষ। কবীর সুমনের মতো জনপ্রিয় শিল্পীর এ হেন পদক্ষেপে সচেতনতা যে কয়েক গুণ বাড়বে তেমনটাই মনে করেন তাঁর অনুরাগীরা।
আরও পড়ুন, Iman Chakraborty: পুজোর শুটিংয়ে এক মিষ্টি মেয়ের দেখা পেলেন ইমন, মেয়েটিকে আপনিও চেনেন!