83 Movie: কবীরের প্রেমে কবীর সুমন, ’83’ দেখে অভিভূত ‘গানওয়ালা’

83 Movie: আমি সিনেমার সিরিয়াস দর্শক। আমি ৫০ বছর ধরে সিনেমা দেখছি। যখন পাশ্চাত্যে থাকতাম তখনও দেখতাম, এখনও দেখি। আমি 83-র মতো ছবি দেখিনি। আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছবি এটা।

83 Movie: কবীরের প্রেমে কবীর সুমন, '83' দেখে অভিভূত 'গানওয়ালা'
কবীরের প্রেমে কবীর সুমন, 83 দেখে অভিভূত 'গানওয়ালা'
Follow Us:
| Updated on: Apr 12, 2024 | 2:27 PM

সম্প্রতি একটি কল রেকর্ডিংয়ের জেরে তিনি হয়েছিলেন ভাইরাল। উঠে এসেছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। রে-রে করে উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়া। তাঁর একনিষ্ঠ অনুরাগীরাও সরে গিয়েছিলেন তাঁর থেকে দূরে। তিনি কবীর সুমন। প্রেম যাকে বারংবার করেছে আকর্ষণ! ইদানীং দেখা গেল কবীর সুমন তাঁর দু’টি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মজেছেন কবীর খানের 83 ছবিতে। বারবার তিনি দেখছেন 83। “ভালবাসার এই ছবি” দেখতে পেরে তিনি ওই পোস্টে বলছেন “ভাগ্যিস বেঁচে আছি তাই দেখতে পেলাম এমন ছবি “। আমরা কল করলাম কবীর সুমনকে। মঙ্গলবার দুপুরে। রইল সেই একান্ত কল রেকর্ডিংয়ের কিছু অংশ।

(TV9 বাংলা ডিজিটালের ভিডিয়ো প্রোডিউসার নন্দন পালের সঙ্গে কবীর সুমনের মঙ্গলবারের ফোন-সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা)

প্র: ১৯৮৩তে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিশ্বজয়ের সময়ে কী চলছিল আপনার জীবনে?

কবীর সুমন: ১৯৮০-র প্রথম থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করতাম। ভারত যখন ১৯৮৩তে ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপ জয় করল, আমি সেই সময়ে ক্রিকেটের খবর রাখতাম না। আমার ক্রিকেট প্রেমটা টেস্ট ক্রিকেটে। সেই যুগটা যখন শেষ হল, তখন আমি ইউরোপে চলে গিয়েছি, যেখানে ক্রিকেটের কোনও গুরুত্ব নেই। আমার ক্রিকেটের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগই রইল না। তবে কানাঘুষো শুনতাম লিমিটেড ওভারের খেলা হচ্ছে। আমার সেটা ভাল লাগত না। আমি টেস্ট ক্রিকেটের আমলের লোক।

(তাই ভারতের ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ জেতার সময়ে ক্রিকেট থেকে বহু দূরে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের সংবাদকর্মী ছিলেন সুমন। তবে কলকাতায় থাকাকালীন কিশোর বয়সে ইডেন গার্ডেনে ক্রিকেট দেখেছেন সুমন একাধিকবার।)

প্র: ইডেনে গিয়ে খেলা দেখেছেন?

কবীর সুমন: তখনকার দিনে টিকিট পাওয়া ছিল এক ঝকমারি। প্রথম টেস্ট ম্যাচ দেখি আকাশবাণীর ছাদ থেকে, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ ছিল। রিচি বেনো ছিলেন অধিনায়ক। আরও অনেকে বাইনোকুলার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিশোর আমিও একটা ধার করা বাইনোকুলার দিয়ে দেখি খেলাটা। বাবা তখন চাকরি করতেন আকাশবাণীতে। আর একটা ম্যাচ পাকিস্তানের—টেস্ট—বাইনোকুলার দিয়ে দেখেছিলাম। তারপর টিকিট নিয়ে মাঠে যাই। মনসুর আলি খান পতৌদি ছিলেন ভারতের অধিনায়ক আর টেড ডেক্সটার ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ম্যাচটি জেতে ভারত। এছাড়া টেস্ট দেখা হয়নি। তবে টেস্ট নয়, এমন কিছু চমৎকার খেলা দেখেছি ইডেনে। যেমন সোয়ান্টন’স ইলেভেনের খেলা। একটা সম্মিলিত দল। রিচি বেনো ছিলেন অধিনায়ক, গ্যারি সোবার্স ছিলেন সেই মিশ্র দলে।

প্র: আর ফেসবুকে আপনি লিখেছেন 83-র কথা। ছবিটা কতবার দেখলেন এখনও পর্যন্ত?

কবীর সুমন: কালও দেখেছি (সোমবার)। আজকেও দেখেছি (মঙ্গলবার)। এখনও পর্যন্ত ২বারেরও বেশি দেখেছি। আবার দেখছি। কারণ আমার এক নবীন বন্ধু আমাকে ওটা ডাউনলোড করে দিয়েছেন। ফলে আমি ওটা যখন তখন দেখতে পারছি খেলাটা, ছবিটা।

প্র: দেখে আপনার অনুভূতি কী হচ্ছে?

কবীর সুমন: আমি সিনেমার সিরিয়াস দর্শক। আমি ৫০ বছর ধরে সিনেমা দেখছি। যখন পাশ্চাত্যে থাকতাম তখনও দেখতাম, এখনও দেখি। আমি 83-র মতো ছবি দেখিনি। আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছবি এটা।

প্র: এর আগে অন্য কোনও ছবি যা এতটা নাড়িয়ে দিয়েছে আপনাকে? যে ছবি আপনি বারবার দেখতে চেয়েছেন…

কবীর সুমন: (কাল বিলম্ব না করে দৃপ্ত উত্তর) হ্যাঁ, বজরঙ্গি ভাইজান।

প্র: ঘটনাচক্রে দু’টিই ভারতীয় ছবি এবং দু’টিই বলিউডের ছবি…

কবীর সুমন: (থামিয়ে দিয়ে) দু’টিই কবীর খানের ছবি। আমরা যদি এইভাবে বলি ব্যাপারটাকে: কবীর খান ভদ্রলোকের নাম। হলিউড বললে এটা হয় না। টলিউড বললে যেমন কিছুই হয় না, তেমনিই বলিউড বললেও হয় না। কবীর খান, কবীর খান। তেমনই আমি ‘কাবুল এক্সপ্রেস’ দেখেছি, ‘নিউ ইয়র্ক’ দেখেছি। এগুলো কবীর খানের ছবি। বলিউড বা হলিউড নয়। আমি কবীর খানের ছবি দেখে বুঝেছি উনি একদম আলাদা। ওঁর ধা-রে-কা-ছে কেউ নেই।

প্র: কবীর সুমনের কাছে কবীর খান কোন জায়গায় আলাদা?

কবীর সুমন: প্রথম কথা কবীর খানের ছবি আশ্চর্যভাবে নয়, স্বাভাবিকভাবে ভালবাসার ছবি। যদি বলা যায় যে একটা ছবির মূল বিষয় কী? একমাত্র কবীর খানের ছবি দেখে মনে হয় প্রেম, ভালবাসা। মানুষের জন্য মানুষের ভালবাসা। এরকম ভালবাসার ছবি আমি দেখিনি। আমি ভারতের লোক, আমার মাতৃভাষা বাংলা। সত্যি বলতে নিজেকে ভারতীয় বলতে কোনও গর্ব কোনও দিন হয়নি, ভারতীয় সঙ্গীত ছাড়া আর কোনও বিষয়ে। সুভাষ চন্দ্র বসুর কথা পড়ে ছোটবেলায় গর্ব হত, আমাদের সশস্ত্র বিপ্লবীদের কথা পড়ে গর্ব হত। আর কবীর খানের ছবি দেখে মনে হয় আমি ভারতীয়। এটা আমার বড় পরিচয়। মানে আমার মতো একজন অ-দেশপ্রেমিক মানুষের মনেও 83 একটা ভারতপ্রেম জাগিয়েছে। এই ভারত হল ‘হিন্দুস্থান’। কোনও বিশেষ পলিটিক্যাল পার্টির ভারত নয়।

প্র: আর ওনার ফিল্ম মেকিং এর কোনও বিশেষ বৈশিষ্ট যেটা আপনাকে ভাবিয়েছে?

কবীর সুমন: দেখুন ওঁর যেটা বৈশিষ্ট্য, যেন এটা ওনার কর্তব্যের মধ্যে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু কর্তব্য বলে করছেন না। প্রথম কথা হচ্ছে আমাদের সম্প্রদায়-সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব স্বাভাবিক সম্পর্ক। স্বাভাবিক। যার মধ্যে কোনও বৈরিতা নেই। খুউব স্বাভাবিক। সেটা কোনও লেকচার দিয়ে দেখাচ্ছেন না। বা ‘মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’—এরকম ভাবে না। স্বাভাবিক ভালবাসার জায়গা থেকে। আর সেই সঙ্গে রয়েছে আমার দেশে হিন্দু-মুসলমানের অদ্ভুত সহাবস্থান। যেটাকে কেউ কোনওদিন দেখাননি, অ্যাড্রেস করেননি। আর সেটা কোনও নাটক না-করে, আবেগতাড়িত না-হয়ে, যাত্রা না-করে, নৌটঙ্কি না-করে, প্রবন্ধ না-লিখে এই সহাবস্থানকে অ্যাড্রেস করেন উনি। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত। সেই দেশকে ছোট না করে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতকে দেখিয়েছেন। আমি মূলত সঙ্গীতের লোক। ভারত আর পাকিস্তান একই ভাষায় ধ্রুপদী সঙ্গীত আর একই ভাবে খেয়াল গায়! 83 ছবিতে একটি দৃশ্যে পাকিস্তনের বর্ডার অঞ্চলের এক সেনাধিনায়ক ভারতের যিনি সেনাধিনায়ক তাঁকে হটলাইনে বলছেন, “আজ আমরা ফায়ারিং করব না, তোমরা খেলা দেখো। একদিনের জন্য এই যুদ্ধ বিরতি কারণ ভারত ফাইনাল খেলছে।’’ এগুলো তো সত্য, এগুলো তো মিথ্যা না। বানিয়ে বলছেন না, এটা তো কেউ গল্প লেখেননি। এগুলো ইতিহাস। যে দেশটাকে রোজ গালমন্দ না-করলে অনেকের ভাত হজম হয় না, তাঁরা এটা করছেন!

প্র: যুদ্ধ থামিয়ে দিচ্ছে?

কবীর সুমন: অনন্ত এক দিনের জন্য। কেন না ভারত ফাইনালে। এটা উনি দেখিয়েছেন, কি সুন্দরভাবে। “ভাগ মিলখা ভাগ”-এও ঠিক এরকম একটি সিকুয়েন্স রয়েছে। মিলখা যখন দৌড়চ্ছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ রেসে, তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দু’টি হাত তুলে দোয়া করছেন, আল্লাহর কাছে। তিনি কৃতজ্ঞ যে মিলখা জিতেছেন। চমৎকার। ওই আইয়ুব খানই তো মিলখার নাম দিয়েছিলেন- উড়ন্ত শিখ! সেই রকমই ইমরান খানের সঙ্গে কপিলের যখন দেখা হচ্ছে এই 83 ছবিতে, সেই দৃশ্যও চমৎকার। ছোট-ছোট দৃশ্য। কিন্তু কোনও বাড়াবাড়ি নেই। কোনও লেকচার নেই। আমি ভাবতে পারিনি এরকম একটা ছবি হতে পারে! বিশেষতঃ খেলার ওপর যে এরকম ছবি হতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।

প্র: নমস্কার

কবীর সুমন: আপনিও আমার ভালবাসা নেবেন। নমস্কার।

গ্রাফিক্স ও অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস