জ়ুম কল-এ এসে একজন ‘পারফেকশনিস্ট’ সেলেব্রিটি সম্প্রতি ‘ব্য়াখ্যা’ দিলেন তাঁর এবং তাঁর ‘প্রাক্তন’ স্ত্রীয়ের নতুন অধ্যায় সম্পর্কে। আর একজন সেলেব্রিটি তাঁর ও ‘স্বামী’র যৌথ দিনযাপনের সময়কালকে ‘লিভ-ইন সম্পর্ক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খান-কিরণ রাওয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ এবং কো-পেরেন্টিং সংক্রান্ত ঘোষণা এবং সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহানের সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ দেওয়া বিবৃতি—সাম্প্রতিক অতীতের এই দুই সেলিব্রিটির ‘অ্য়ানাউন্সমেন্ট’ একপ্রকার যেন হার মানায় করণ জোহরের ‘মার্কেটিং স্ট্র্য়াটেজি’কেও (ঘটনাচক্রে আজ, মঙ্গলবার রণবীর সিংয়ের জন্মদিনের দিন তাঁর পরবর্তী ছবির ঘোষণা করেছেন করণ, যে ছবিতে অভিনয় করছেন বার্থ ডে বয় রণবীর এবং সদ্য় প্রযোজকের চেয়ারে-বসা করণের প্রিয় ‘স্টু়ডেন্ট’ আলিয়া ভাট)। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এই ধরনের ‘স্ট্র্য়াটেজিক’ ঘোষণার গভীরে কোথাও কি লুকিয়ে রয়েছে সচেতনভাবে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ মনোভাব? অর্থাৎ সেলিব্রিটি বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বৃহত্তর গণমাধ্যমে নিজের বক্তব্য় প্রকাশ করা হবে ঠিকই, কিন্তু গোটা বিষয়টিকেই পরিবেশন করা হবে একপাক্ষিকভাবে যাতে দর্শককে স্রেফ ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। সহজ কথায় সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্য়মে ‘নিজের’ বক্তব্য প্রকাশ করা হলেও পাল্টা প্রশ্ন করা হলে সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কোনও ‘নৈতিক’ দায়ভার বা দায়িত্ব আর না-থাকে সংশ্লিষ্ট ব্য়ক্তির। কোথাও গিয়ে ‘অ্য়ানাউন্সমেন্ট’-এর আড়ম্বরের ছটায় নৈতিকতা-অনৈতিকতার সূক্ষ্ণ লাইনকে এড়িয়ে ফ্য়ান-ফলোয়ারদের ‘প্রতারণা’ করা ফেলছে না তো এই জাতীয় একের পর এক ঘোষণার নতুন ট্রেন্ড?
সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বিষয়টিকে সরাসরি আইনি ভাষায় ‘প্রতারণা’ হিসেবে না-দেখলেও ‘ইনডিউসমেন্ট’—অর্থাৎ যাকে প্রতারণার প্রথম ধাপ বলে গণ্য হয়—হিসেবে দেখতে সাবলীল। তাঁর কথায়, “যদিও তারকাদের বৈবাহিক সম্পর্ক এবং ব্য়ক্তিজীবন তাঁদের একান্ত প্রাইভেট বিষয়। তাই-ই তা নিয়ে মন্তব্য় করব না। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে সন্দেহ নেই এই ধরনের ঘোষণা বা ‘অ্য়ানাউন্সমেন্ট’-এর গভীরে ফ্য়ান-ফলোয়ারদের—যাঁরা অবশ্যই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তথা সমাজের অংশ এবং অঙ্গ—সুপ্তভাবে ইনডিউস বা প্রভাবিত করা হচ্ছে। এবং এই ধরনের ইনডিউসমেন্ট-এর প্রভাব অবশ্যই নেতিবাচক।” বিভাসবাবুর সংযোজন, “একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ল’ বা আইন আসলে কোডিফকেশন অফ এথিকস। এই এথিকস বা নৈতিকতা যখন কোডিফায়েড হয়, তখন তাকে আইন হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়।” নুসরত জাহান প্রসঙ্গে বিভাসবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য়, “বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে লিভ-ইন সম্পর্ক নিয়ে বিবৃতি এগুলি সবই আসললে আইনি পরিভাষায় আদালতকক্ষের একান্ত কনফিডেনশিয়াল বিষয়।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য়গুলিকে সংবাদমাধ্যম অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এনে তারকাদের বিবৃতি দিতে দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, এগুলি নিয়ে উল্টো দিক থেকে নানাবিধ প্রশ্ন তোলা হলে কাউকেই কোনও পদক্ষেপ করতেও দেখা যাচ্ছে না।”
আরও পড়ুন-আমির-কিরণের বিচ্ছেদ ঘোষণার সিদ্ধান্ত কি আদতে সেলিব্রিটি স্টান্ট? মত মনোবিদ থেকে তারকার
প্রসঙ্গত আমিরের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিন হাজে সংবাদমাধ্যমকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, আমির-কিরণের দাম্পত্য বিচ্ছেদ যাতে না হয়, সে বিষয়ে দুজনকেই নাকি তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। গত ডিসেম্বরেও একসঙ্গে বিবাহবার্ষিকী পালন করেছিলেন আমির-কিরণ। তার কয়েক মাসের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত অবাক করেছে তাঁদের ঘনিষ্ঠদেরও। শোনা যাচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে সেপারেশনে ছিলেন তাঁরা। তারপরই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। সেপারেশনের সময় নাকি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন ঘনিষ্ঠরা। কিন্তু আমির-কিরণ নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করতে রাজি হননি। আমিন শেয়ার করেছেন, “আমার বিয়েতে আমির এসেছিল। আমি ওর আর কিরণের বিয়েতেও গিয়েছিলাম। ফলে এটা তো আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি। আমরা একসঙ্গে বসে ওদের বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনাও করেছি। যদি সত্যিই বাধা দিতে পারতাম, ভাল হত।”
আমিরের বন্ধু আমিনের এই বক্তব্য়ের রেশই যেন মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, যা তিনি ইতিমধ্যেই শেয়ার করেছেন TV9 বাংলার-র সঙ্গে: “পাবলিক যদি কোনও সেলেবের বিয়েটা গুড ম্যারেজ মনে করে, সেক্ষেত্রে এই ধরনের খবর একটা কমিটমেন্ট ফিয়ার তৈরি করে। যাঁদের কমিটমেন্ট ফোবিয়া আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি ইমপ্যাক্ট ফেলে।” এই ‘কমিটমেন্ট ফোবিয়া’ যেন আবার প্রকারান্তরে আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য়েরই প্রতিধ্বনি—“খুঁটিয়ে দেখলে সন্দেহ নেই এই ধরনের ঘোষণা বা ‘অ্য়ানাউন্সমেন্ট’-এর গভীরে ফ্য়ান-ফলোয়ারদের—যাঁরা অবশ্যই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তথা সমাজের অংশ এবং অঙ্গ—সুপ্তভাবে ইনডিউস বা প্রভাবিত করা হচ্ছে। এবং এই ধরনের ইনডিউসমেন্ট-এর প্রভাব অবশ্যই নেতিবাচক।” এবং এই ইনডিউসমেন্ট-এর নেতিবাচক প্রভাবের স্পষ্ট অনুরণন রিমার কথাতেও, “বেশ কিছু বছর একসঙ্গে থাকা মানেই যাঁরা মনে করেন, বিয়েটা সাকসেসফুল, তাঁদের ধাক্কা লাগে। কারও ফিয়ার অব ম্যারেজ থাকলে সেটাকে আরও উৎসাহ দেয়।”