১৯৮০ সালে বিয়ে করেন রাহুল দেব বর্মণ (RD Burman) এবং আশা ভোঁসলে (Asha Bhosle)। দুজনেরই ছিল এটা দ্বিতীয় বিয়ে। ১৯৬৬ সালে রিতা প্যাটেলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পঞ্চম, কিন্তু ১৯৭১ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১৯৬৬ সালেই ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবি দিয়ে পঞ্চম এবং আশার পথ চলা শুরু গানের জগতে। কাজ করতে করতে কখন যেন বয়সে বছর ৬ বড় আশার প্রেমে পড়ে যান আর. ডি. বর্মন। কিন্তু নিজের ভালবাসার কথা মুখ ফুটে বলতে পারেননি প্রথমে সুরের জাদুকর। কিন্তু তাঁকে না জানিয়েও পারছিলেন না। এমন অবস্থায় তিনি একটি অদ্ভুত কাজ শুরু করেন। বেনামে নিয়মিত গোলাপ পাঠাতে থাকেন আশাকে।
আশা ভোঁসলে তাঁর একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনাটি স্মরণ করে জানিয়েছিলেন, কেউ তাঁকে প্রায় নিয়ম করে গোলাপ পাঠাতেন। একদিন এমনিভাবে তাঁর কাছে গোপাল আসে, সেই সময় তাঁর বাড়িতে আরডি বর্মণ এবং কবি-গীতিকার মাজরুহ সুলতানপুরী উপস্থিত ছিলেন। তিনি গোলাপ দেখে বলে ওঠেন, “ওগুলো ফেলে দাও। কোনও বোকা রোজ রোজ আমায় ফুল পাঠিয়ে সময় নষ্ট করছে”। তাঁর এই কথা শুনে পঞ্চম কষ্ট পান। তখনই মজরুহ সাহেব হেসে বললেন, “এই বোকাই তোমায় গোলাপ পাঠাচ্ছে”।
যদিও প্রথমে আশা রাজি হননি পঞ্চমের বিয়ের প্রস্তাব। কারণ তাঁর প্রথম বিয়ে অভিজ্ঞতা ভাল ছিল না। কিন্তু পঞ্চমের ভালবাসার কাছে এক সময় নত স্বীকার করে ১৯৮০ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। পঞ্চম কীভাবে তাঁর ভালবাসা আদায় করেছিলেন সেই সব মজার ঘটনা আশা ভাগ করেছিলেন সেই সাক্ষাৎকারে। শুধু ফুল নয়, পঞ্চম নানাভাবে তাঁর সঙ্গে মজা করতেন। আশা বলেছিলেন, “একবার পঞ্চম অন্ধকারে আফ্রো-উইগ পরে আমাকে ভয় দেখিয়েছিলেন। তিনি আমাকে সহ সবাইকে নকলও করতে পারতেন”। কাজের ফাঁকে এইসব করেই অবশেষে সুরের জাদুকর মন জয় করেন নিজের ভালবাসার।
আশা বহুবার বিভিন্ন জায়গায় তাঁর এবং আর. ডি. বর্মনের ভালবাসার বন্ডিং হিসেবে বলেছেন, “সঙ্গীতই ছিল আমাদের বিয়ের মূল ভিত্তি। আমরা বিসমিল্লাহ খান, বিটলস, শার্লি বাসে.. এবং আরও অনেকের গান ঘন্টার পর ঘন্টা শুনতে পারতাম। পঞ্চম স্নান করে বেরিয়ে লুঙ্গি কুর্তা পরে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৩টে পর্যন্ত জন কোল্ট্রানের অ্যালবাম, আর্থ উইন্ড অ্যান্ড ফায়ার, সার্জিও মেন্ডেস, সান্তানা, দ্য রোলিং স্টোনস, ব্লাড সোয়েট প্রমুখের গান শুনতেন, সঙ্গে গুনগুনও করতেন। আমিও তাঁর সঙ্গে দিতাম। সঙ্গীতের প্রতি আমাদের ভালবাসা ছিল একই রকম এবং এটাই ছিল আমাদের চিরস্থায়ী বন্ধন।”
আর ডি বর্মণ ১৯৬১ সালে ‘ছোটে নবাব’ ছবি দিয়ে সুরকার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেন। তবে পরিচিতি পান ‘ভুত বাংলো’ ছবি থেকে। আর এই ছবি দিয়েই কিশোর কুমারের সঙ্গে তৈরি হয় জুটি। তিসরি মঞ্জিল, বাহারোঁ কে সপনে, জুয়েল থিফ, পড়োসান, প্যায়ার কা মৌসম, কাটি পতং, প্রেম পূজারি, হরে রাম হরে কৃষ্ণ-র মতো বহু ছবিতে জনপ্রিয় সঙ্গীত দিয়েছেন শ্রোতাদের। তালিকায় ইয়াদোঁ কি বারাত, শোলে আর আন্ধিও রয়েছে। এত ভাল ভাল গান উপহার দিলেও পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রথম ১৯৮১ সালে ‘সনম তেরি কসম’ ছবির জন্য। দুঃখের বিষয় ‘ইজাজৎ’ ছবির জন্য গীতিকার হিসেব গুলজার, সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আশা ভোঁসলে জাতীয় পুরস্কার পেলেও আর.ডি. বর্মনের কাছে অধরাই থেকে যায় পুরস্কার। ‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরি’ তাঁর শেষ কাজ। যা মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পর।