TV9 Bangla Explained on Trans-Man & Trans-Woman: ‘অনেকে ট্রান্স-ম্যান আর লেসবিয়ানের পার্থক্য বোঝেন না’, কেন বলেছেন সুচেতন

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য মুখোপাধ্য়ায়

Jun 24, 2023 | 5:03 PM

TV9 Bangla Explained on Transgender & Sexuality: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জননাঙ্গের নিরিখে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় অথবা যৌন পরিচয় স্থির হয়। কে ট্রান্স-ম্যান? ট্রান্স-ওম্যানই বা কাকে বলব? রূপান্তরকামী (Transgender) মানেই কি সমকামী? ১৯৬৫ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মনোচিকিৎসক প্রথম ‘trans-sexual’ শব্দটির পরিবর্তে ‘transgender’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

TV9 Bangla Explained on Trans-Man & Trans-Woman: ‘অনেকে ট্রান্স-ম্যান আর লেসবিয়ানের পার্থক্য বোঝেন না’, কেন বলেছেন সুচেতন
সুচেতন ভট্টাচার্য

Follow Us

অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সন্তান সুচেতনা ভট্টাচার্য লিঙ্গ পরিবর্তন করে হতে চাইছেন সুচেতন। সুচেতনার পরিবর্তে ‘সুচেতন’ নামেই পরিচিত হতে চাইছেন তিনি। TV9 বাংলাকে সুচেতন বলেছেন, “আমি এখন ৪১+। সিদ্ধান্তটা আমার। অনেকেই আমার মতো আছেন। তাঁদের পিতৃ-পরিচয় বা মাতৃ-পরিচয় এখানে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি নিজের মতো করেই গোটা প্রক্রিয়াটা নিয়ে লড়ে যাব। আমাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেও যেতে হবে এরপর। আমি জানি গণমাধ্যমগুলি এলজিবিটি অধিকারকে খুবই সমর্থন করে। আমাদের কমিউনিটি অচ্ছুত নয়। তাই আমাদের সমর্থন করুন। কিছু লোক আমাদের ভুলভাবে অচ্ছুত মনে করেন। দৈনন্দিন জীবনেই আমরা সেটা দেখতে পাই।” সুচেতন আরও বলেছেন, “বহু দিন ধরেই আমি মানসিকভাবে ট্রান্স-ম্যান। অনেকদিন থেকেই লিঙ্গ পরিবর্তন করার কথা ভাবছিলাম। ধীরে-ধীরে আমি মানসিকভাবে আরও বোল্ড হয়েছি। তারপর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

জুন মাস ‘প্রাইড মান্থ’ (Pride Month)। যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে বাম-ঘনিষ্ঠ মঞ্চ ‘পিপলস রিলিফ কমিটি’ আয়োজিত এলজিবিটিকিউআইএ+ মানুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মশালায় গিয়েছিলেন সুচেতন। সেখানেই যৌন সংখ্যালঘুদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনা চলাকালীন প্রশ্নোত্তর পর্বে সুচেতন জানান, তিনি সুচেতনা নন—সুচেতন। এর পর সুচেতন জানতে চান, নিজের রূপান্তর ঘটাতে তাঁকে কী-কী করতে হবে? সুচেতনের সঙ্গিনী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সুচেতনের কথা প্রথম জানা যায় মঙ্গলবার সুপ্রভা রায় নামে এক বাম কর্মীর সমাজ মাধ্যমে করা পোস্টের মাধ্যমে। সেখানে তিনি লিখছেন, “শারীরিক লিঙ্গ পরিচয় যাই হোক না কেন, ছোটবেলা থেকেই নিজেকে ছেলে মনে করা সুচেতন পেয়েছে পারিবারিক প্রেরণা। তার বাবাই তাকে ছোটবেলায় গালে সাবান লাগিয়ে দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে দিতেন। তাই নিজের প্রবণতায় তার বেড়ে ওঠা হয়ে উঠেছে স্বচ্ছন্দেই। শরীরে, মনে, সামাজিক প্রকাশনায় ট্রান্সম্যান রূপেই পরিচিত হয়েছে সুচেতন।”

TV9 বাংলা ডিজিটালকে তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তন করার ব্যাপারে সুচেতন বলেছেন, “এটা মুখরোচক ব্যাপার নয়, খুব সিরিয়াস ইস্যু।” নিজের লিঙ্গ-পরিচয় সম্পর্কে সুচেতন খুব স্পষ্ট। তাঁর কথায়, “আমি একজন ট্রান্স-ম্যান। অনেকে ট্রান্স-ম্যান আর লেসবিয়ানের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না।” ‘Transgender’—এই ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ‘রূপান্তপকামী’ শব্দটির ব্যবহার বহুল প্রচলিত এবং একপ্রকার সর্বজনগ্রাহ্যও। ১৯৬৫ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোচিকিৎসক জন এফ অলিভেন (John F. Oliven) প্রথম ‘trans-sexual’ শব্দটির পরিবর্তে ‘transgender’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

‘রূপান্তর: নির্ধারণ থেকে নির্বাচনের দিকে’ শীর্ষক প্রবন্ধে (‘কৃত্তিবাস’, এপ্রিল ২০১৯ সংখ্যা) ‘Transgender’ শব্দটি প্রসঙ্গে অঙ্গনা লিখেছেন: “… ইংরেজি এবং বাংলা শব্দ দু’টি যথার্থই অভিন্নার্থক নয়। সংকীর্ণ অর্থে ‘transgender’ (যখন ‘trans’-এর অর্থ changing) রূপান্তরকামী বোঝালেও ব্যাপক অর্থে (যখন ‘trans’ মানে beyond) তথাকথিত নারী/পুরুষ লিঙ্গ-পরিচয়ের ‘বাইরে’ যাঁরা তাঁদের সামগ্রিকভাবে বোঝাতে ‘transgender’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কাজেই ‘রূপান্তরকামী’র তুলনায় ‘transgender’-এর অর্থ ব্যাপকতর। সমাজস্বীকৃত লিঙ্গ-বর্গবহির্ভূত (transgender) অংশকেই ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বা ‘অপর লিঙ্গ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। আর রূপান্তরকামীরা হলেন লিঙ্গ-বর্গবহির্ভূত (transgender) ব্যক্তিদের অংশমাত্র।”

১৯৯২ সালে লেসলি ফিনবার্গ ‘Transgender Liberation A Movement Whose Time Has Come’ শীর্ষক একটি প্যামফ্লেট প্রচার করেন। সেই প্য়ামফ্লেটে ঘোষণা করা হয়, ‘transgender’ শব্দটি সমস্ত ধরনের অ-প্রচলিত লিঙ্গ-পরিচয়ের বোধক হবে। সেই থেকে রূপান্তরকামী ছাড়াও আরও অনেক ধরনের লিঙ্গ-পরিচয়ের সম্মিলিত নাম হিসেবে ‘transgender’ ব্যাপক অর্থে গৃহীত ও ব্যবহৃত হয়।”

⚫যেভাবে লিঙ্গ পরিচয় অথবা যৌন পরিচয় নির্ধারিত হয়…

একজন মানবশিশুর লিঙ্গ-পরিচয় অথবা প্রচলিত অর্থে যৌন-পরিচয় নির্ধারিত হয়ে যায় তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা উচিত, এখনও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জননাঙ্গের নিরিখে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় অথবা যৌন পরিচয় স্থির হয়। এরপর সেই পরিচয়ের ভিত্তিতে ওই শিশুর নামকরণ করা হয়। এর পরবর্তী স্তরে জননাঙ্গের ভিত্তিতে নির্ধারিত ওই পরিচয়ের উপর ভিত্তি করেই শুরু হয় শিশুটির সামাজিকীকরণ অর্থাৎ socialisation-এর প্রক্রিয়া। ‘রূপান্তর: নির্ধারণ থেকে নির্বাচনের দিকে’-এ অঙ্গনা লিখেছেন: “আজও সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণভাবে মোটা দাগে সব মানুষকে হয় ‘নারী’ অথবা ‘পুরুষ’ এই দুই বর্গের যে-কোনো একটার অন্তর্ভুক্ত করার প্রচলিত রীতিই মেনে চলা হয়। কেবলমাত্র দু’টি লিঙ্গ/যৌন পরিচয় স্বীকৃত বলে একে (বাইনারি) দ্বি-কোটিক লিঙ্গ-পরিচয় ব্যবস্থা বলা হয়।”

এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলা ডিজিটালের তরফে যোগাযোগ করা হয় মানবাধিকার তথা যৌন-অধিকার কর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

প্রশ্ন: LGBT-র মধ্যে যৌন অভিমুখ (Sexual Orientation) কতটা আর লিঙ্গ পরিচয় (Gender Identity) কতটা?

বাপ্পাদিত্য: LGBT-র মধ্যে LGB—এই ৩টি অক্ষর অথবা LGB স্পেকট্রামটি মূলত যৌন অভিমুখ (Sexual Orientation)-এর কথা বলে। LGB অর্থাৎ লেসবিয়ান (Lesbian), গে (Gay), বাইসেক্সুয়াল (Bisexual) মূলত যৌন অভিমুখের কথা বলে, যার মানে হল আমার যৌন পছন্দ। এবার T, অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) অক্ষরটি লিঙ্গ-পরিচয় বা Gender Orientation-এর অভিমুখ দেখায়। ফলে LGB হল যৌনতা, আর T হল লিঙ্গ।

প্রশ্ন: Trans-Man আর Trans-Woman কাকে বলে?

বাপ্পাদিত্য: Trans-Man অথবা Trans-Woman হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি এমন একটি শরীরে জন্ম নিয়েছেন, যে শরীরের লিঙ্গ-চিহ্ন অর্থাৎ সহজ কথায় genetelia এবং সেকেন্ডারি সেক্স অর্গ্যান (তা ফেশিয়াল হেয়ার হোক অথবা বক্ষদেশ)-এর সঙ্গে ওই ব্যক্তির লিঙ্গ-পরিচয় খাপ খায় না। ফলে তিনি যে শারীরিক পরিচয় নিয়ে জন্মেছেন, সেটি এবং তার লিঙ্গ-পরিচয় এক নয়—আলাদা। ফলে তিনি transition চাইছেন। এর ২টো রকম হয়: (১) M (Male) to F (Female)—পুরুষ হয়ে জন্মেছেন, নারী হতে চাইছেন এবং (২) F (Female) to M (Male)—নারী হয়ে জন্মেছেন, পুরুষ হতে চাইছেন। M to F-কে বলা হয় ট্রান্সজেন্ডার ওম্যান বা ট্রান্স-ওম্যান (Trans-Woman)। আর F to M-কে ট্রান্সজেন্ডার ম্যান বা ট্রান্স-ম্যান (Trans-Man) বলা হয়।

প্রশ্ন: যৌন অভিমুখ আর লিঙ্গ পরিচয় এই Trans-সত্ত্বাকে কতটা প্রভাবিত করে?

বাপ্পাদিত্য: হ্যাঁ, যৌন অভিমুখ আর লিঙ্গ পরিচয় Trans-সত্ত্বাকে অবশ্যই প্রভাবিত করে। সিসজেন্ডার (cisgender), অর্থাৎ যাঁদের লিঙ্গ-পরিচয় আর শারীরিক লিঙ্গ একই (পুরুষ ও নারী—এই বাইনারির অন্তর্ভুক্ত), তাঁদের transition-এর অথবা রূপান্তরের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। সিসজেন্ডারের মধ্যে সব ধরনের সেক্সুয়ালিটি (sexuality) অর্থাৎ যে কোনও যৌন পছন্দই থাকতে পারে, যেমন: বিষমকামী, সমকামী, উভকামী। একইভাবে ট্রান্সজেন্ডারের মধ্যে একজন ট্রান্স-পুরুষও থাকতে পারেন, ট্রান্স-নারীও থাকতে পারেন। তিনি transition-এর পথে হেঁটেছেন মানেই যে তাঁর যৌনতার অভিমুখ বা সেক্সুয়ালিটি সমকামী হতে হবে, এমনটা নয় মোটেই।

অর্থাৎ একজন ট্রান্স-ওম্যান যিনি পুরুষ থেকে নারী হয়েছেন, তাঁকে সমকামী হতেই হবে, এমনটা নয়। তিনি নিজে নারী হয়েছেন বলে তাঁর পার্টনারকেও নারীই হতে হবে, তা নয়। তিনি কিন্তু একজন বিষমকামী মহিলা। তিনি যখন একজন পুরুষকে পছন্দ করছেন, তখন তাঁর বিষমকামী সত্ত্বা থেকেই ওই পুরুষকে পছন্দ করছেন। আবার ওই ট্রান্স-ওম্যান ব্যক্তি একজন সমকামীও হতে পারেন। অর্থাৎ তিনি transition-এর পর নারী হয়েছেন এবং একজন নারীকেই পছন্দ করছেন। অর্থাৎ একজন ট্রান্স-ওম্যান ব্যক্তি ট্রান্স-লেসবিয়ান মহিলাও হতে পারেন। আবার একইভাবে একজন ট্রান্স-ম্যান ব্যক্তি ট্রান্স-হোমোসেক্সুয়াল বা ট্রান্স-গে পুরুষ হতে পারেন। ফলে জেন্ডার শব্দটি যেমন বিস্তৃত, তেমনই সেক্সুয়ালিটিও একইভাবে বিস্তৃত। দু’টোই রামধনু। অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডারের ক্ষেত্রে সমকামিতা, বিষমকামিতা এবং উভকামিতা—এই তিনটের যে কোনওটাই থাকতে পারে।

প্রশ্ন: এই Transition-এর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটা কেমন?

বাপ্পাদিত্য: প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন, ট্রান্স প্রোটেকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী (Transpersons Protection Bill 2018-কে সংক্ষেপে TG Bill বলা হয়), ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার জন্য কোনও পরিবর্তন অথবা রূপান্তরের দরকার নেই। আমি নিজেকে যা মনে করি, তাই-ই আমার জেন্ডার আইডেন্টিটি অর্থাৎ লিঙ্গ-পরিচয়। সেজন্য সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায় এবং তার পরবর্তীতে ট্রান্স প্রোটেকশন অ্যাক্ট—যা ২০২০ সালে দেশে লাগু হয়েছে এবং এ বছর রাজ্যের ক্যাবিনেটেও যা পাশ হয়ে গিয়েছে—দু’টোই একই কথা বলছে। তা হল, যদি আমি মনে করি মনের দিক থেকে আমার transition বা রূপান্তর হয়ে গিয়েছে, তাহলেই আমি একজন ট্রান্সজেন্ডার। সেক্ষেত্রে কোনও সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা নেই।

অন্য দিকে, কেউ যদি চিকিৎসার সাহায্যে রূপান্তর-প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে চান, তাহলে তার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। যেমন: কসমেটিক সার্জারি। এই কসমেটিক সার্জারির অংশ লেজ়ার সার্জারি আর চেস্ট রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি। ট্রান্স ওম্যানদের ক্ষেত্রে রয়েছে চেস্ট রিকনস্ট্রাকশন আর ভ্যাজাইনোপ্লাস্টি। ট্রান্স ম্যানদের ক্ষেত্রে হয় ম্যাসেক্টমি, যা আসলে চেস্ট রিকনস্ট্রাকশন ও পেনিস কনস্ট্রাকশন সার্জারি। এক্ষেত্রে শরীরের top এবং bottom-এর সরাসরি যোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে অবশ্যই প্রয়োজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ। যেহেতু এই পুরো প্রক্রিয়াটিই হরমোনের দ্বারা প্রভাবিত, তাই সেই হরমোন থেরাপি কীভাবে হবে এবং সেই থেরাপির ফলে রূপান্তরের সময় নানাবিধ গৌণ যৌন লক্ষণ শরীরে কীভাবে প্রতিফলিত হবে, সেহেতু এন্ডোক্রিনোলজিস্টের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধের ভূমিকাটা দেখেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, অস্ত্রোপচারের বিষয়টা দেখেন সার্জন।

মনোবিদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এক্ষেত্রে রূপারন্তরকামী ব্যক্তি অর্থাৎ যিনি রূপান্তরিত হতে চাইছেন, তাঁর ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ (Gender Dysphoria) আছে কি না, সেটা দেখেন মনোবিদ। ট্রান্স-ব্যক্তি যদি মনে করেন, তিনি যে শরীরের মধ্যে রয়েছেন (এক্ষেত্রে শরীর বলতে মূলত বাইনারির দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিচার এবং স্থির করা মানবদেহের কথা বলা হচ্ছে, যা জননাঙ্গের নিরিখে নির্ধারিত হয়) তা তাঁর লিঙ্গ-পরিচয় বহন করছে না অর্থাৎ তাঁর শরীর যদি তাঁর লিঙ্গ-পরিচায়ক না-হয়, তাহলে তিনি ‘জেন্ডার ডিসফোরিক’ হয়ে পড়তে পারেন। তখন মনোবিদ তাঁকে সার্জারির মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। সাইকিয়াট্রিস্টের লিখিত অনুমতির ভিত্তিতে এই সার্জারি হয়।

বাপ্পাদিত্যর সঙ্গে এই কথোপকথনের পর দেখে নেওয়া যাক ‘এ আমির অন্তরালে—বীভৎস বিবর’ শীষর্ক প্রবন্ধে তিস্তা দাশ (‘গুরুচণ্ডা৯’, অন্য যৌনতা, ডিসেম্বর ২০১৮) কী লিখেছেন। তিস্তার লেখায়, “পুরুষ ভ্রুণ (যে ভ্রুণের সেক্স ক্রোমেজোমের গঠনে ‘XY’ ক্রোমোজোম দু’টি উপস্থিত) ও স্ত্রী ভ্রুণ (যে ভ্রুণের সেক্স ক্রোমেজোম জুটিতে দু’টিই ‘XX’) উভয় ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে একটি বিশেষ অংশের (Bed Nucleus of the Stria Terminalis) গঠন মেয়েদের মতোই থাকে। এমনকী গর্ভাবস্থায় সাত থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত উভয় ভ্রুণের যৌনাঙ্গের গঠন মেয়েদের মতো হয়। বৃদ্ধির পরবর্তী পর্যায়ে ‘XY’ ভ্রূণের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের হর্মোনের প্রভাবে ঐ অংশটির গঠন-প্রকৃতি পুরুষের মতো হয়ে ওঠে ও পুং-জননাঙ্গ পরিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ‘XX’ ভ্রূণটির ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হর্মোনের প্রভাবে স্ত্রী-জননাঙ্গের পূর্ণ বিকাশ ঘটে। এটাই প্রকৃতির প্রথাগত ধারাবাহিকতা।”

‘রূপান্তর: নির্ধারণ থেকে নির্বাচনের দিকে’ শীর্ষক প্রবন্ধে (‘কৃত্তিবাস’, এপ্রিল ২০১৯ সংখ্যা) অঙ্গনা লিখেছেন: “ওয়াই ক্রোমোজোমের উপস্থিতি দিয়ে লিঙ্গ চিহ্নিত করার যে তত্ত্ব অর্থাৎ মানব কোষের ২৩ জোড়া ক্রোমেজোমের মধ্যে এক জোড়ার একটি ওয়াই ক্রোমোজোম এবং একটি এক্স ক্রোমোজোম হলে পুরুষ, আর ওয়াই ক্রোমোজোম নেই, দু’টিই এক্স ক্রোমোজোম কাজেই স্ত্রী, এইভাবে লিঙ্গ নির্ধারণের যে প্রক্রিয়া এতদিন বৈজ্ঞানিক মহলে প্রচলিত ছিল, সেটিও অতি সম্প্রতি পরিবর্তিত হয়েছে। ভ্রূণ গঠনের প্রাথমিক স্তরে লিঙ্গ-চিহ্ন উন্মেষের সময় এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোম দু’টি এক জোড়া দেহকোষ ক্রোমোজোম থেকে তৈরি হয়, ফলে পরবর্তীতেও এরা অনেকাংশে একই প্রকার জিন বহন করে। অর্থাৎ এক্স-এর বেশ কিছু জিন ওয়াই-এ, আবার ওয়াই-এর বেশ কিছু জিন এক্স-এ উপস্থিত থাকে। কাজেই এক্স এবং ওয়াই সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন কখনওই হয়ে উঠতে পারে না। বরং দু’টি সেক্স ক্রোমোজোম একে অপরের সঙ্গে কতখানি জড়িয়ে আছে, তার ওপর নির্ভর করে মানব লিঙ্গের স্বরূপ। এছাড়াও আরও কিছু বিষয়ের ওপর মানব দেহে প্রজননতন্ত্র তথা লিঙ্গের গঠন নির্ভর করে। মানব ভ্রূণের ওয়াই ক্রোমোজোমে উপস্থিত SRY নামক জিন থেকে উৎপন্ন প্রোটিন যৌনাঙ্গের গঠন নিয়ন্ত্রণ করে, লিঙ্গ-হরমোনের মাত্রা ঠিক করে দেয়। এছাড়া মানব দেহে লিঙ্গ গঠন ও নির্ণায়ক প্রক্রিয়াতে আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘ফিডব্যাক লুপ’। ভ্রূণ থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মস্তিষ্ক, হরমোন, এবং যৌনাঙ্গের মধ্যে একটি ‘লুপ’ বা চক্র চলতে থাকে। এই লুপের সময়কাল ও গতিপথের ওপরেও নির্ভর করে মানবদেহের লিঙ্গ গঠনের বিষয়টি। এত রকম বিকাশের দ্বারা সম্পন্ন হয় মানব লিঙ্গ বিকাশের প্রক্রিয়া। এই বহুমাত্রিক লিঙ্গ বিকাশের তত্ত্ব নির্দেশ করে বিবিধ লিঙ্গ বর্গের সম্ভাবনার দিকে।”

একজন রূপান্তরকামী ব্যক্তির সঙ্গে সমকামী, বিষমকামী বা বিপরীতকামী এবং উভকামীর অবস্থানগত পার্থক্য রয়েছে। সমকামী, বিষমকামী বা বিপরীতকামী এবং উভকামীর অবস্থান যৌনসঙ্গী নির্বাচন বিষয়ক অবস্থান, লিঙ্গগত অবস্থান নয়। অন্য দিকে, রূপান্তরকামী একটি লিঙ্গ-পরিচয় বা লিঙ্গগত অবস্থান। ‘রূপান্তর: নির্ধারণ থেকে নির্বাচনের দিকে’-তে অঙ্গনা লিখেছেন, “একজন ব্যক্তি কোন লিঙ্গ-পরিচয় ধারণ এবং বহন করেন এবং সেই ব্যক্তি তাঁর যৌনসঙ্গী হিসেবে কোন লিঙ্গগত অবস্থানের আর-একজন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন বা পেতে চান, এই দু’টো সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রশ্ন।”

Next Article