কোথায় থাকেন আপনি? উত্তরটা যদি কলকাতা হয়, তা হলে আপনার জন্য সুখবর। আবার উত্তরটা কলকাতা না হলেও যদি কলকাতার সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ থেকে থাকে আপনার, তা হলেও এ সুখবরের ভাগীদার আপনি। আপনি যদি নিতান্তই অন্য কোনও শহরের বাসিন্দা হন এবং কলকাতার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না থাকে, তা হলেও এ খবর আপনি চেখে দেখতে পারেন। তারপর হয়তো নিজের শহরের জন্যও তৈরি করে ফেলবেন ‘ডাকবাক্সে কলকাতা’-র মতো কোনও এক ভালবাসা।
‘ডাকবাক্সে কলকাতা’ আসলে কলকাতাকে ভালবাসার আর এক নাম। কলকাতা শহর বলতে ঠিক কী মন হয় আপনার? নিজের বাড়ি, স্কুলের রাস্তা, বন্ধুদের আড্ডা, চায়ের ঠেক, ভিড় মেট্রো, হকারদের সঙ্গে দরদাম, ফুলের হাট, বইমেলা, রিক্সা সফর, দুর্গাপুজো, বো ব্যারাকের ক্রিসমাস… লম্বা লিস্ট। নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে পারেন সকলে। কিন্তু যাদের বা যা কিছুর স্পর্শ এই শহর আপনাকে দিল, সেই শহরকে তো ফিরিয়ে দেওয়া হল না কিছুই। ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন গুলশনরা খাতুন, শিলাদিত্য মৌলিক, রণজয় ভট্টাচার্যের মতো শিল্পীরা। সেই ফিরিয়ে দেওয়ার জার্নির শরিক আপনিও।
কলকাতা শহরকে ২০টি চিঠি লিখেছেন গুলশনারা। তিনি এবং দেবরাজ ভট্টাচার্য পড়েছেন সেই চিঠি। রণজয় ভট্টাচার্যের মিউজিক ছুঁয়ে গিয়েছে চিঠির পাতা। একের পর এক ছবি সাজিয়ে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন শিলাদিত্য মৌলিক। গোটা কর্মকান্ড সম্পাদনা করছেন বোধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী ভাবে এল এমন ভাবনা? এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলাকে গুলশনারা বললেন, “আমার মনে হয়েছিল কলকাতার প্রচুর আর্কিটেকচারাল ডকুমেনটেশন রয়েছে। ইমোশনাল ডকুমেনটেশন নেই। আমার এমন হয়েছে, কাঁদতে কাঁদতে সার্দান অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটেছি। হঠাৎ একটা ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বসেছি। আমার মনে হয়েছে শহরটাই যেন মাথায় হাত রাখল। বাইরে গিয়ে আমরাই বলি, ‘কলকাতা খুব নোংরা’। কিন্তু কলকাতা এমন এক শহর যাকে ছেড়ে চলে যাওয়া যায়, ফেলে দেওয়া যায় না, আবার ফিরে আসতে হয়।”
গুলশনারা জানালেন, কলকাতা শহরকে মোট ২০টি চিঠি লিখেছেন তিনি। কখনও শহরই প্রেমিক, কখনও বা শহরই প্রেমিকা। ভিক্টোরিয়ার পরী, পার্কস্ট্রিট গোরস্থান, ব্রডওয়ে, বৃষ্টিভেজা কলকাতাকে লেখা হয়েছে চিঠিগুলো। তাঁর কথায়, “কলকাতাই এমন একটা শহর যেখানে পুজো প্যান্ডেলের নাম মহম্মদ আলি পার্ক। রিজওয়ানের জন্য মোমবাতি মিছিল করেছিলাম আমরাই। আবার এখানেই এনআরসির জন্য মিছিল হয়। মনে হল, শহরটাকে একটু ভালবাসা দিয়ে যাই। কলকাতাকে আমাদের ট্রিবিউট।”
বায়োস্কোপের মতো করে তৈরি করেছেন শিলাদিত্য। পুরো প্রজেক্টে প্রায় ২০০০ মোবাইলে তোলা ছবি জোগাড় করা হয়েছিল। তার মধ্যে থেকে ৬০-৬২ টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ২০ মিনিটের এই প্রয়াস সিনেমা হলে স্ক্রিনিং করানোর পরিকল্পনা করেছেন বলে জানালেন গুলশনারা। পরবর্তী কালে কোনও একটি ওয়েব স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে আরও বেশি সংখ্যক দর্শকের দেখার জন্য রাখা থাকবে এই কাজ।
আরও পড়ুন, বাবা হলেন অপারশক্তি খুরানা, স্ত্রী এবং সন্তান কেমন আছে?