International Mother Language Day: ১০-১২ দিনে শেষ বাংলা ছবির শুটিং, রিমেকই কি বা হবে কীভাবে? মাতৃভাষা দিবসে প্রশ্ন টলি-নায়িকাদের
মা যে কবে 'মাম্মা' হয়ে গিয়েছে তা বলা বড়ই কঠিন। থিয়েটারে গিয়ে ছবি দেখা উঠে গিয়ে এসে গিয়েছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম। যেখানে আল্লু অর্জুনের ছবি দেখার চাহিদা বেশি।
গ্রাফিক্স-অভীক দেবনাথ
Follow Us
“ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।”
বেঙ্গলি ডে’টা যেন কবে? ফেব্রুয়ারিতে না? সময় এগিয়েছে, প্রজন্ম বদলেছে। কিন্তু এই লেখা কবি অনেকদিন আগে লিখে গিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে আমাদের বলার ভাষা, পড়ার ভাষা, দেখার ভাষা বদলাচ্ছে। মা যে কবে ‘মাম্মা’ হয়ে গিয়েছে তা বলা বড়ই কঠিন। থিয়েটারে গিয়ে ছবি দেখা উঠে গিয়ে এসে গিয়েছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম। যেখানে আল্লু অর্জুনের ছবি দেখার চাহিদা বেশি। না সেখানে একটা বাংলা ছবি দেখার জন্য কোনও অধীর আগ্রহ নেই। নেই কোনও অপেক্ষা। বরং উপেক্ষাই হয় তো কিছুটা বেশি। এই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেই একই ভাবনা যেন আরও বেশি করে উস্কে দিচ্ছে। সবার রিল-এ তো এখন একটাই গান ‘ও আন্তাভা।’ তা তিনি দীপিকা পাড়ুকোন হোন কিংবা তৃণা সাহা। দীপিকা পাড়ুকোনের রিলে নতুন বাংলা সিনেমার গান—আমরা কি আশা করতে পারি না? নাকি বেশি আশা হয়ে গেল? ভারতীয় সিনেমায় দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার এখন বাড়বাড়ন্ত। আমরা কি এই ভবিষ্যৎ দেখতে পারি না? ভাবলেও বলা হয় আমরা বেশি আশা করে ফেলছি। এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কী বলছেন টলিপাড়ার নায়িকারা?
একটা সময় প্রথমে বাংলা ছবি তৈরি হত। সেখান থেকে হিন্দি ছবি বানানো হত। তা সিনেমা, গানে বারবার উঠে এসেছে। আমার মনে হয় আমরা নিজেদের শিকড় থেকে দূরে সরে এসেছি। শিকড় থেকে দূরে সরার অর্থ কখনও প্রতিদিন শাড়ি পরা অথবা ধুতি, পাঞ্জাবি পরা নয়। কিংবা প্রতিদিন মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া নয়। বা ‘আই লভ রসগোল্লা’ বলা নয়। আমি সারা পৃথিবী ঘুরতে পারি, অন্য সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু নিজের শিকড়টা শিকড়ই। সেখান থেকেই আমার মনে হয় দক্ষিণী ছবি এগিয়ে। দক্ষিণী ছবিতে নায়িকা আলাদা করে ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করেন না। দক্ষিণের মানুষদের চামড়ার রং মূলত কালোর দিকে। তাঁরা মাথায় ফুল লাগায়। ‘পুষ্পা’ ছবি, যা নিয়ে সারা দেশ তোলপাড় হচ্ছে, মেয়েটিকে দেখলে মনেই হবে পাশের বাড়ির মেয়েটি। আগে সিনেমা মানে ছিল, আমি যেটা নই, তা বড় পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু এখন ছবির ভাষা পাল্টেছে। দক্ষিণ ভারতীয় ছবিগুলো দেখলে মনে হয় শিকড়ের সঙ্গে ওদের বাঁধন অনেক দৃঢ়।
আমাদের এখানে গত কয়েক বছরে অন্যরকমের কাজ অনেক বেশি হয়েছে। বিভিন্ন শহরে গিয়ে কাজ হয়েছে। গত পাঁচ বছরের কাজ যদি আমরা নেড়ে-ঘেঁটে দেখি, তাহলে বলব আমরা কিন্তু উন্নতি করেছি। হয় তো রাতারাতি, সেরকম সাংঘাতিক কোনও পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু আমি আশাবাদী আমাদেরও সময় আসবে।
আমি খুব গর্ব অনুভব করি আমি যে ভাষায় কথা বলি, যে ভাষায় স্বপ্ন দেখি,যে ভাষায় প্রেম করি সেই ভাষার জন্য কিছু মানুষ গুলি খেয়েছিলেন। যে ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রক্ত ঝরেছিল। সেই ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমাদের অক্ষমতা আমরা ভাষাদিবস ভুলে যাই। আমাদের দৈন্যদশা বলতে হয় যে, আমার সন্তান বাংলা ভাষাটা ঠিক জানে না। আমার এটাই বলতে চাই, নিজের ভাষার প্রতি ভালবাসা না থাকে, নিজের ভাষায় যদি স্বপ্ন দেখতে না পারেন তাহলে অন্য কোনও ভাষাই শিখে উঠতে পারবেন না। জগাখিচুড়ি মাতৃভাষা হবে, তা কি সম্মানজনক হবে। তাই খুব একটা স্ব-জাতি বিদ্বেষী ইতিহাস বিস্মৃত না হয়ে একটু নিজের ভাষা নিয়ে চর্চা করলে ক্ষতি কী! আমরা বড় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। দক্ষিণী ছবি এগিয়ে আছে, কারণ তারা সংঘবদ্ধ। একসঙ্গে হাতে হাত ধরে বাঁচি, বাংলা ছবি তার স্বর্ণযুগ ফিরে পাবে।
ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যেতে পারে, তবে আমার মনে হয় বাংলা ছবির একটা ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করতে হবে। আমাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, তাই-ই আমরা সবার কাছে পৌঁছতে পারছি না। আমরা তাই নিজেরাই বলছি বাজার ছোট হয়ে গিয়েছে। সেই জন্য বাজেট কমে গিয়েছে। দশ দিন, এগারো দিনে সিনেমার শুটিং শেষ করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহে একটি ছবির শুটিং হলে, সেই ছবিতে আর কী থাকবে? বড় পরিচালক, বড় অভিনেতা, অভিনেত্রী। কিন্তু কাজ শেষ করতে হবে স্বল্প সময়ে। কাদের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করব?আমাদের ভাবার সময় নেই, সুযোগ নেই। পরিচালকের দ্বিতীয় টেক নেওয়ার অবসর নেই। উনি বেশি সময় নিয়ে নিলে, পরের ছবিটা তাঁর হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমরা সবাই ছুটছি। আমরা জানি না আমাদের গন্তব্য কী?