শিলাজিৎ মজুমদার
রূপঙ্কর একজন গায়ক। বহুদিন ধরে গান গাইছেন। একজন শিল্পীর অন্য শিল্পীর প্রতি প্রতিযোগিতাসুলভ মানসিকতা থাকে। সেই মানসিকতা অনুযায়ী, রূপঙ্কর নিজের বক্তব্য রেখেছেন। আমরা অনেকেই খেয়াল রাখি না, কথা বলার সময় অনেককিছু বলে ফেলি। রূপঙ্কর ইমোশনাল মানুষ। ফলে যা বলেছে, তা বলার সময় প্রজেন্টেশনে ডেরোগেটরি কথাও ছিল। কিন্তু ও যেটা বলতে চেয়েছে পুরোটাই ওর মনের কথা। মুশকিল হল, এরকম মনের কথা বললে ট্রোলড হতে হয়। রূপঙ্করের ক্ষেত্রে সেটাও হয়েছে। এখন তাঁকেই সেটা সামলাতে হবে। এছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।
অনেক শিল্পীই হয়তো মনে করেন, আমি ওর থেকে ভাল করতে পারি। মনে করেন আমরা সমান-সমান। কিংবা আমাদের মধ্যে কী কম রইল!—সেই মনে হওয়া থেকেই এই ধরনের কথা বলেছে রূপঙ্কর। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ওকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। বিষয়টা এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায় পৌঁছেছে যে, রূপঙ্করকে হুমকি ফোনও করা হচ্ছে। এটা কিন্তু খুবই অসহ্যকর। এটাও রূপঙ্করের দুর্ভাগ্য যে, ওর কথা বলার পরপরই কেকে চলে গেলেন। সেটা আমাদের জন্যেও খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। ফলে অনেক বেশি করে দোষী হয়ে উঠেছেন রূপঙ্কর।
আমার চেয়ে বয়সে ছোট যাঁরা, যাঁদের আমি স্নেহ করি, বারবারই তাঁদের বলি, মনের মধ্যে কোনও বেদনা থাকলে সেটা ওয়ান-অন-ওয়ানে কাউকে বলে দেওয়া ভাল। জনগণের সামনে এসব বলার দরকার নেই।
এই ঘটনার পর দেখছি বাংলা গান ও হিন্দি গান নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে। যে কোনও ভাষার গানের ক্ষেত্রেই যদি নিজস্ব জোর না থাকে, বাজার না থাকে, সেটা নিয়ে চলতে অসুবিধা হয়। কিন্তু এটা ঠিক যে, আজ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের যে দাম, যে মূল্য, যে সম্মান, সেই সম্মান তাঁরা পান না। কেকের মতো কেউ শো করতে এলে পারিশ্রমিক হিসেবে ২৫-৩০ লাখ টাকা এমনিতেই পাবেন। কিন্তু আমাদের বাংলার শিল্পীদেরও তো একটা বেসিক গ্রেড থাকবে। সেই গ্রেডটা কিন্তু শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গে পান না। তাই হতাশা থেকেই হয়তো এমন কথা রূপঙ্কর বলেছেন।
আমি একটা কথা বলেই শেষ করব—মানুষের অনেক বেশি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। অসংযত হলে, অসংযত ব্যবহারই ফিরে আসবে। রূপঙ্করেরও পরবর্তীকালে কিছু বলার আগে খেয়াল রাখা দরকার। বাংলার গান তো কাউকে মারতে পারবে না। যতটুকু পাওয়ার ততটুকুই আমরা পাব। তার চেয়ে বেশি পাব না। সেই দাম পেতে গেলে অনেক জায়গাতেই ‘না’ বলতে হবে, তা হলেই সাহসের সঙ্গে বেঁচে থাকা যাবে।