AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Exclusive: পার্থর পয়লা বাইশ সেলে রাত কাটিয়েই ‘বাল্মীকি’ হয়েছিলেন নাইজেল, শোনালেন সেই গল্প

Partha Chatterjee in Jail: গরাদে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যাঁরা জেলের ভাত খায়নি, তাঁদের কাছে এ যেন রহস্যময় জীবন। কেমন সেই প্রেসিডেন্সি জেল! TV9 বাংলা কথা বলেছিল জেলের একদা-বন্দি তথা অভিনেতা নাইজেল আকারার সঙ্গে।

Exclusive: পার্থর পয়লা বাইশ সেলে রাত কাটিয়েই ‘বাল্মীকি’ হয়েছিলেন নাইজেল, শোনালেন সেই গল্প
কী বললেন নাইজেল?
| Updated on: Aug 09, 2022 | 2:16 PM
Share

স্নেহা সেনগুপ্ত

তাঁর নাকি পোষ্যের নামে ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর নামে নাকি কলকাতা টু কাকদ্বীপ একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। তিনি নাকি দিনে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার ফল কিনতেন। আজ সে সব অতীত। মন্ত্রীহীন-দলহীন-সঙ্গীহীন পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ গারদে। প্রেসিডেন্সির পয়লা বাইশ সেলে একাকী জেল-যাপন।

কিছুদিন আগে পর্যন্ত যেন ‘পদিপিসির বর্মী বাক্সে’ লুকিয়ে ছিল ‘অপার’ অপার সম্রাজ্য। ‘সিঁদ’ কেটে ইডি প্রকাশ্যে নিয়ে এল পাহাড় প্রমাণ টাকার স্তূপ। তা দেখে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমায় টাকার পাহাড়ের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া উত্তমকুমার ওরফে অরিন্দম মুখার্জিকে বারবারই মনে পড়ে যাচ্ছিল বাঙালির। টাকার চোরাবালিতে অরিন্দমের তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন অনেকে। যাঁর সংসারে প্রতিমাসে শুধুমাত্র আড়াই লক্ষ টাকার ফল আসত, সেই সংসারের গৃহকর্তা জেলে বসে সকালে খাচ্ছেন স্রেফ বাটার টোস্ট। রুটি, তরকারি, ডাল খাচ্ছেন রাতে। ড্রামে রাখা জলে স্নান সারছেন। ঢেউ খেলানো কিং সাইজ় নরম বিছানা ছেড়ে চৌকিতে মাথা রাখছেন। আর সেই মাথার উপর নেই বাতানুকুল যন্ত্রের বসন্তের বাতাস।

মন্ত্রী ছিলেন বলেও বাড়তি কোনও সুযোগ পাচ্ছেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর পাঁচটা বন্দির মতোই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। যাঁরা জেলের ভাত খায়নি, তাঁদের কাছে এ যেন রহস্যময় জীবন। কেমন সেই প্রেসিডেন্সি জেল! পয়লা বাইশ সেলের আলাদা বৈশিষ্ট্যই বা কী? সেলুলয়েডে যে জেল-দৃশ্য আমরা দেখি, তার সঙ্গে কতটা তফাৎ বাস্তবে। এই সব কৌতূহল উদঘাটন করতে TV9 বাংলা কথা বলেছিল প্রেসিডেন্সি জেলের ওই পয়লা বাইশ সেলের একদা-বন্দি তথা অভিনেতা নাইজেল আকারার সঙ্গে। এ সব শুনতে শুনতে সে সব ভয়ঙ্কর দিনের স্মৃতির সরণি ধরে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ালেন নাইজেল।

নাইজেল বলছিলেন, “আমার জীবনে এমন একটা অধ্যায় আসে, যখন অনেকগুলো বছর আমাকে কাটাতে হয় সংশোধনাগারে। আলিপুর, প্রেসিডেন্সি দুই জায়গাতেই আমি ছিলাম বন্দি হয়ে। প্রথমে আলিপুরে। তারপর প্রেসিডেন্সিতে। প্রত্যেক জেলের স্ট্রাকচার আলাদা। তেমন সেলগুলোও। অন্যভাবে ডিজ়াইন করা থাকে প্রতি জেলে। আলিপুরে টানা সেল থাকে সারি ধরে। রয়েছে একতলা-দোতলার সেলও। প্রেসিডেন্সিতে ৪৪টা সেল রয়েছে।” তিনি আরও বলছিলেন, “সেই ৪৪টা সেলের মধ্যে ১ থেকে ২২টা সেল একটা সেকশনে রয়েছে। ২৩ থেকে ৪৪ অন্য সেকশনে। প্রত্যেক সেলের সামনে রয়েছে বাউন্ডারি। কোনও ইনমেটই একে-অপরকে দেখতে পান না। আইসোলেশন নির্ভর করে আসামীর অপরাধের উপর। যে যত দুঁদে আসামী, ততই কঠোর তাঁর কারাবাস।”

সূত্রের খবর, পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। প্রথম দিন চৌকি না থাকায় মেঝেতে রাত কাটিয়েছিলেন পার্থ। এমনকী ওই সেলে চেয়ার ছিল না বলে কমোডে বসে থাকতেন তিনি। যদিও নাইজেল বলেন, “প্রত্যেক সেলে নিজস্ব টয়লেট আছে। পাবলিক টয়লেট নেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে সেলে রয়েছেন, আমিও সেই সেলেই ছিলাম। এই সেলে সন্ত্রাসবাদী, রাজনৈতিক আসামীরা থাকে মূলত। কিংবা রাখা হয় তাঁদের, যাঁদের উপর প্রচুর প্রেসার থাকে। তাঁরা প্রত্যেকেই ‘হাই রিস্ক প্রিজ়নার্স’। যেমন আফতাব আনসারি! একটা সেলে ৩ থেকে ৫ জনকেও রাখা হয় অনেক সময়। তবে হ্যাঁ, সেলে বিজোড় নম্বর রাখার নিয়ম। ১ থেকে ২২, যতগুলো সেল আছে, সেখানে তাঁরাই থাকেন। ২৩ থেকে ৪৪-এ রাখা হয় তুলনায় লঘু অপরাধীদের।”

২০০৪ সালে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়েছিলেন নাইজেল আকারা। এর আগে ২০০০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ছিলেন আলিপুর জেলে। প্রেসিডেন্সিতে যাওয়ার পরে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পয়লা বাইশেই ছিলেন তিনি। সেই স্মৃতি উস্কে নাইজেল বলতে থাকেন, “সপ্তাহের ২ দিন বাইরের লোকের সঙ্গে দেখা করার নিয়ম পয়লা বাইশের বন্দিদের। তখনই বাইরের খাবার খেতে পারেন তিনি। কিন্তু রান্না করে নিয়ে আসা খাবার আসামীকে দেওয়া যায় না। নিয়ম তেমনটাই। তার উপর আদালত যদি বলে কোনও আসামীকে প্রকাশ্যে আনা যাবে না, তখন চিত্রটা অন্যরকম হয়ে ওঠে।”

পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী। তৃণমূলের মহাসচিবও। এমনই হাই প্রোফাইল ব্যক্তিকে দেখতে স্বভাবতই উৎসুক থাকেন জেলের বন্দিরাও। কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নাইজেল বলেন, “আমি যখন জেলে ছিলাম, চোখের সামনে বহু পলিটিক্যাল প্রিজ়নারকে দেখেছি। এক্ষুনি একজনের নাম মনে আসছে – দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (জোড়া খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সিপিএম নেতা)। জেলের মধ্যে মাওইস্ট নেতাদের দেখেছি। কেউ যদি গোলমাল করতেন, জেলার ছিল শাসন করার জন্য। কিন্তু লক্ষ্মী হয়ে থাকলে জেলাররাও ভালবাসতেন।”

জেলের রীতিনীতি সম্পর্কে নাইজেল বলছিলেন, “কারও যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু অসুস্থতা থাকত তাঁকে আলাদা করে যত্নে রাখা হত। ডায়েটও তৈরি হত অন্যরকম। এছাড়া, মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই। জেলে বাড়ির লোকের যে কোনও দু’জনের নম্বর দিয়ে রাখার চল ছিল। তবে এখন কী হয়েছে জানি না। অনেক কিছু হয়তো পাল্টে গিয়েছে।”