ইয়াকুব না থাকলে হয়তো দেশে ফেরাই হত না অভিনেতা সুনীল দত্তের। তিনি হিন্দু, ইয়াকুব মুসলিম– তবে ধর্ম ও মানবিকতার মিশেলেই কোনও এক রাত্রে এ দেশে নিরাপদ ভাবে আসতে পেরেছিলেন তাঁরা— ২০০৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে অতীতের এমনই এক ঘটনার কথা শুনিয়েছিলেন সুনীল।
পাকিস্তান অধ্যুষিত পঞ্জাবেই জন্ম নিয়েছিলেন সুনীল। সে সময় যদিও দেশ ভাগ হয়নি। ইয়াকুব ছিলেন তাঁর বাবার বন্ধু। বাড়ি থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরেই ছিল তাঁর বাড়ি। তবে স্বাধীনতার সময় যত এগিয়ে আসে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ধর্মের হানাহানিও। ভাগ হয়ে যায় ভারত-পাকিস্তান। রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়তে হয় দত্ত পরিবারকে। এদিকে সুনীলের বাবাও তখন প্রয়াত। কিন্তু দায় এড়াননি ইয়াকুব। ওই দাঙ্গার মুহূর্তেই ইয়াকুবই ছিলেন সুনীলের পরিবারের একমাত্র ভরসা। অতীব সন্তর্পণে এ দেশে নাকি পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনিই, জানিয়েছিলেন সুনীল। পার করিয়েছিলেন ঝিলম নদী।
বহুদিন পর আবারও তাঁর গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন সুনীল। তখন দাঙ্গা শান্ত হয়েছে। সুনীল জানিয়েছিলেন অত বছর পরেও কেউ ভোলেননি তাঁকে। পেয়েছিলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা। পেয়েছিলেন ভালবাসা। কেন? তিনি সে সময় বলিউডের পরিচিত নাম বলে? সুনীল জানিয়েছিলেন এমনটা মোটেও না। গ্রামবাসীরা তাঁকে জানান, তাঁর পিতৃপুরুষের কারণেই এত ভালবাসা। সুনীলের কথায়, “ওরা বলেছিল আমাকে নয় আমার ঠাকুরদা-বাবার জন্য আমি এত ভালবাসা পাচ্ছি। ওঁদের ধর্ম আলাদা ছিল। কিন্তু মিলেমিশে সবাই ছিলাম এক। গ্রামের বাইরে এক দরগা ছিল। আমার বাবা-ঠাকুরদা যখন ঘোড়ায় চড়ে গ্রামের বাইরে যেতেন তখন ওই জায়গার সামনে এসেই খালি পায়ে পার করতেন। ওরা বলেছিল আমাদের পরিবার যদি তাঁদের এতটা সম্মান দিতে পারে তাঁরা কেন আমাকে দেবেন না’? ভিটেমাটি থেকে একরাশ ভালবাসা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন সুনীল। যে ভালবাসা ফুরিয়ে যাওয়ার নয়, কখনও শেষ হওয়ার নয়।