প্রসেনজিৎ-দেবকে নিয়ে আসরে মমতা, ছন্দ ফিরবে টলিউড?

Jul 30, 2024 | 10:50 PM

Dev: সমাধান সূত্র খুঁজতে নবান্নতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব ও গৌতম ঘোষকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বৈঠকে মঙ্গলবার দুপুর দুপুর পৌঁছে গিয়েছিলেন সকলেই। আর মিটিং শেষ হতেই এবার স্বস্তি ফেরালেন দেব। সুখবর শেয়ার করে নিলেন সাংসদ তথা অভিনেতা পরিচালক।

প্রসেনজিৎ-দেবকে নিয়ে আসরে মমতা, ছন্দ ফিরবে টলিউড?

Follow Us

কবে গড়াবে ট্রলির চাকা? স্তব্ধ স্টুডিও পাড়া। যেন থম মেরে রয়েছে রূপলী পর্দার হেঁসেল। কে ঠিক! কে ভুল! দোষ কার? এই নিয়েই চাপানউতোর চলছিল বিগত চারদিন ধরে। একটা সময়ের পর বোঝাই যাচ্ছিল অন্দরমহলের এই সমস্যা টলিপাড়ার বিবাদমান পক্ষগুলির মধ্যে দ্বারা সমাধান হওয়ার নয়। তাই বারে বারে উঠছিল আসছিল ‘তৃতীয় পক্ষে’র কথা। যাঁর মধ্যস্থতায় জট খুলতে পারে সিনেপাড়ার। বস্তুত হলও তাই। আসরে নামতে হল খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মঙ্গলবার বেলা গড়াতেই উৎসব অর্থাৎ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির গেটে ঢুকল সাংসদ তথা অভিনেতা-প্রযোজক দেবের গাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। আর ঘড়ির কাঁটায় ২ টো বাজতেই দেবের গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লেন তাঁরা। গন্তব্য নবান্ন। ডাক পড়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের চিরকালের টলিউড ‘ঘনিষ্ট মন্ত্রী’ অরূপ বিশ্বাস। আর তারপরই মিলল দেবের ইঙ্গিতবহ সোশ্যাল পোস্ট, যেখানে তিনি লেখেন, ”ধন্যবাদ দিদি। আশা করছি সন্ধ্যের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা কাল থেকে শুটিং শুরু করতে পারব। ধন্যবাদ টেকনিশিয়ানস, প্রযোজক, পরিচালক ও স্টেকহোল্ডারদের।”

প্রসঙ্গত, গত একসপ্তাহ ধরে টলিপাড়া তোলপাড় হচ্ছে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে। বাংলাদেশের এক প্রোজেক্ট যার কিঞ্চিত শুট কলকাতার বুকে হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই বাংলাদেশে গিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হল পরিচালককে। ফেডারেশন প্রশ্ন তোলে, কেন তাদের না জানিয়ে এই কাজ করেছেন রাহুল? শাস্তি স্বরূপ নির্ধারিত হয়, তিন মাসের জন্য পরিচালক হিসেবে কর্মবিরতিতে থাকবেন তিনি। আর তাতেই বেঁকে বসেন টলিপাড়ার ডিরেক্টরস গিল্ড। প্রাথমিকভাবে কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত টেকনিশিয়ানরা নিলেও পরবর্তীতে পরিচালকদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, রাহুলকে না ফেরালে সোমবার থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন তাঁরা। হয়ও তাই। সোমবার দফায় দফায় বৈঠকেও মেলেনা যার সমাধান সূত্র। সোমবার দিনভর তাদের দেওয়া বিভিন্ন বিবৃতির ফাঁকে ফাঁকে উঠে আসতে শোনা যাচ্ছিল তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কথা, আর ২৪ ঘণ্টা পেড়তে না পেড়তেই ঠিক তেমনটাই হল। মঙ্গলবার মিটিং ডাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন রাতেই ডিরেক্টরস গিল্ডের পক্ষ থেকে আও এক মিটিং ডাকা হয়। যেখানে উঠে আসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে গৌতম ঘোষ বলেছেন, ‘গাইড লাইন ঠিক করা হোক। কাউকে ব্যান করা যাবে না, নতুন নিয়ম ঠিক করতে হবে। শ্যুট শুরু করতে হবে কাল থেকে। পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন রাহুল। এক সপ্তাহ পর থেকে শ্যুট শুরু করবেন। আগামি নভেম্বর মাসের মধ্যে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। এই নতুন যে নিয়ম, তা সব গিল্ডের জন্য প্রযোজ্য হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আগামীকাল থেকে পরিচালকরা ফ্লোরে আসবেন।’ এই বৈঠকে আরও জানা যায়, এস ভি এফ এর পুজোর ছবির কাজ কিছু সপ্তাহপরে আবার শুরু হবে। কমিটি গঠন করে নতুন নীতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এরপর দেব বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে নই। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ফেডারেশন রাজি হয়েছেন, ধন্যবাদ তাদেরও। পরিচালক থেকে টেকনিশিয়ান কাউকে ব্যান করা যাবে না। বিভিন্ন বাজেট ছবির জন্য আলাদা নিয়ম রাখতে হবে। তিনমাসের মধ্যে সব নিয়ম রদবদল করা শেষ করতে হবে।’

তবে এই প্রথম নয়, অতীতেও এমন বহু সমস্যার সমাধান সূত্র খুঁজতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক টলিপাড়ার। বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পুরস্কার বিতরণে তিনি আছেন, অভিনেতাদের আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণও করতে দেখা যায় তাঁকে। নবাগত থেকে প্রবীণ শিল্পী, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রায় সকলেরই। তাই সেই ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে দূরে থাকলেন না মমতা। অভিভাবকের মতই রাশ টেনে ধরলেন তড়িঘড়ি। আর তার হাত ধরেই মিলল সমাধান। ওই কথা আছে না, ‘মঙ্গলে উষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা…’ এই শুভ দিনেই আবারও লাইট সাউন্ড ক্যামেরার তামঝাম শুরু হতে চলেছে বিনোদন জগতের আতুঁরঘরে।

যদিও সমাধান সূত্রের একটা উপায় যে এত দ্রুত মিলবে, তা অনেকেই অনুমান করতে পারেননি। অসহযোগিতার কালো মেঘ দেখে রবিবার রাতেই মিলেছিল নির্দেশ, মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে শুট, করতে হবে ব্যাঙ্কিং। কোথাও কোথাও সোমবার সকাল পর্যন্ত চলে সেই শুটিং। কবে আবারও সচল হবে টলিপাড়া, সে উত্তর না থাকায়, শেষ বেলায় যথা সম্ভব কাজ গুছিয়েছিলেন সকলে। তবে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হল না। দুদিনের কর্মবিরতির পরই মিলল স্বস্তির ইঙ্গিত। আপাতত ছন্দে ফিরছে টলিপাড়া।

Next Article