বিহঙ্গী বিশ্বাস
বিয়ের খবরটা যে কী করে সবাই জেনে গেল কিছুতেই বুঝতে পারছেন না শ্রীময়ী চট্টরাজ! রবিবার রাত থেকেই সমানে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ… একগুচ্ছ অভিযোগের পাহাড়ে ধ্বস্ত হতে থাকা শ্রীময়ী কি সত্যিই হোমব্রেকার? মানে সহজ কথায়: তাঁর জন্যই সংসারে আগুন? পাঁচ দিন-পেরনো নববধূর মনের অবস্থা এই মুহূর্তে ঠিক কী? জানতে যোগাযোগ করেছিল TV9 বাংলা।
চনমনে কণ্ঠস্বর, নববধূর গলায় সোহাগের উচ্ছ্বাস। একেবারেই জড়তা নেই কোথাও। একটানা বলে চললেন, “আমার ঠাকুরদার বয়স ৯৫ বছর। এই বছরের শুরুতে হঠাৎ করেই কাঞ্চন (মল্লিক) একদিন আমার বাড়ি আসে। এসে ঠাকুরদা’কে বলে, ‘আপনার নাতনিকে বিয়ে করতে চাই।’ তখনও ওর ডিভোর্স (পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে)-টা হয়নি। বলে, ডিভোর্স হলেই বিয়ে করবে। আপত্তি নেই তো? সে দিন ঠাকুরদা খালি একটা কথাই বলেছিলেন, ‘তোমাদের জীবন তোমরা যদি সুখী থাক, আমার কিচ্ছু বলার নেই। তবে বাড়ির সবচেয়ে ছোট ও। ওকে ভাল রেখো।”
কাট টু, এই বছরের সরস্বতী পুজো। বাগদেবীর সঙ্গে সঙ্গে এবার ওই দিনে আগমন হয়েছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। তবে ওই দিনেই মদনদেব আড়ালে ছুড়বেন বাণ, আর তাতেই বোল্ড আউট হয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলবেন শ্রীময়ী, তা নিজেও ভাবেননি—অন্তত নিজে দাবি করলেন এমনটাই। বলছিলেন, “সরস্বতী পুজোর আগের দিন আমার নাইট শুটিং ছিল। সারা রাত জেগেছি। মনটা খুব খারাপ ছিল। রোজ় ডে, চকোলেট ডে… কত কিছু হচ্ছে, আমি কিছুই পাচ্ছি না। ওকে বলতে পাত্ওতা দিল না। পছন্দ করে না জানিয়েই দিল। আমায় বলেছিল, সরস্বতী পুজোর দিন দুপুরে ওর বাড়িতে যেতে, একটা গেট টুগেদার আছে। গিয়ে দেখি ভিতরের সব ঘর বন্ধ। ওকে ফোন করতেই বলল, ‘এসেছ তো আমি কী করব? বসে থাকো’। এত খারাপ ব্যবহার! আমি নাইট শুটিং করে এসেছি। তা-ও এরকম করছে! এত খারাপ ব্যবহার খুব খারাপ লাগে। ভেবেছিলাম, ধুর আমি বেরিয়েই যাব। হঠাৎ দেখি সব আত্মীয়রা ঢুকতে শুরু করেছে। আমার বাবা-মা, ওর দাদা-বৌদি। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। দেখি বন্ধ ঘরগুলো ফুল, বেলুন দিয়ে সাজানো। হঠাৎ কাঞ্চন হাতে গোলাপ নিয়ে হাঁটুগেড়ে আমার সামনে বসে পড়ল। আমাকে ডবল চমকে দিয়ে বলল, ‘উইল ইউ ম্যারি মি’?
চোখ ছলছল করে উঠেছিল শ্রীময়ীর। সম্মতি জানাতে সময় নিয়েছিলেন কয়েক সেকেন্ড। পাশের ঘরে অপেক্ষা করছিলেন রেজিস্টার। শুভকাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে কয়েক মিনিট। ঠিক যেন, ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’। তবে এ ক্ষেত্রে ‘ছুঁড়ি’র সম্মতি ছিল ষোলোআনা। প্রশ্ন উঠতেই পারে, রেজিস্টারের কাছে এক মাস আগে থেকে বিয়ের যে আবেদন জানাতে হয়, তা কি শ্রীময়ী করেননি? যদি করেও থাকেন, তাহলে তো বিয়ে করছেন, তা তো তিনি জানতেনই। বললেন, “আর বলবেন না, আমার এক বন্ধুকে দিয়ে কায়দা করে আমার ডিজিটাল সই জোগাড় করে রেখেছিল কাঞ্চন। ও যে এমন করতে পারে, আমি কোনওদিন ভাবতেও পারিনি। ঠিক যেন সিনেমা।”
‘কাঞ্চন খুব মুখচোরা, আমি মুখের উপর বলে দিতে পারি আই লাভ ইউ, ও পারে না’, বলেই চলছিলেন শ্রীময়ী। ওঁদের আলাপ সেই ২০১২-এ। এক শো’য়ে গিয়েছিলেন দু’জনে একসঙ্গে। ‘কাঞ্চন-শ্রাবন্তী’ নাইট, সে সময় শ্রীময়ী ২০-ও পার করেননি। মাচা অনুষ্ঠানটিতে উপচে পড়েছিল ভিড়। দর্শক কলা-আলু ছুড়ছিল। সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। শ্রীময়ীর মনে পড়ে যাচ্ছে নবাগতা তিনি যখন ওই সব দেখে ভয়ে কুঁকড়ে রাতের খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন নিজের হাতে তাঁকে রুটি মাংস খাইয়ে দিয়েছিলেন কাঞ্চন। ওই খাওয়ানোয় ছিল না প্রেম, ছিল স্নেহ আর ভরসার হাত। যোগ করলেন, “তখন কিন্তু কিছুই ছিল না। দু’তরফের সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক ছিল। হঠাৎ করেই সেই যে প্রেস-মিডিয়া হল দু’ বছর আগে, বাবা-মা’র কাছেও নানা খবর আসতে থাকে। আমায় একদিন জিজ্ঞাস করেই ফেললেন ওঁরা, ‘কী রে? তোদের মধ্যে কি সত্যিই ভালবাসা আছে? আমায় বল তো? এটা করিস না। একটা সংসার ভেঙে যাচ্ছে। অভিশাপ কুড়োচ্ছিস।’ মা’কে সে দিন একটা কথাই বলেছিলাম, ‘যদি সত্যিই সংসার আমার কারণে ভাঙে, তাহলে মাঝের এই দশটা বছর কেন নষ্ট করলাম? তখনই তো বলতে পারতাম, যে আমি তোমায় ভালবাসি। তা তো করিনি।”
পিঙ্কি অভিযোগ করেছিলেন, সম্পর্ক ভাঙার নেপথ্যে দায়ী শ্রীময়ী। মোহিনী মায়ায় বশ করেছেন ২৬-এর যুবতী, উঠেছিল এমন কথাও। শুধু কি নেটিজেন? শ্রীময়ীর দাবি, টলিউডের অন্দরের অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতাও তাঁদের সম্পর্ককে ভাঙার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। বলছিলেন, “আগে কোনও সাক্ষাৎকারে বলিনি, নাম শুনলে চমকে যাবেন, এমন অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতা আছেন যারা আমাকে ফোন করে এক কথা বলেছে, আর কাঞ্চনকে ফোন করে আরেক কথা।” বন্ধ করে কেঁদেছেন শ্রীময়ী। সেই কথা মনে করেই হয়তো খানিক থামলেন শ্রীময়ী। বললেন, “আমাদের শুধু চকচকে রূপটাই বিক্রি হয়। ভিতরের ইমোশনগুলো কেউ দেখে না। ভাবে আমাদের বোধহয় পরিবার নেই। আছে তো, খারাপ লাগাগুলোও আছে।” এখন আর পিঙ্কির সঙ্গে যোগাযোগ নেই শ্রীময়ীর। আইনি ভাবে কাঞ্চনের সঙ্গেও পিঙ্কির বিচ্ছেদ হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি। শ্রীময়ীকে বিয়ে করার পর থেকে তাঁকেও তৃতীয় বিয়ে নিয়ে কম কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়নি। তাতে অবশ্য বিশেষ বিচলিত নন শ্রীময়ী। তিনি যে জানেন, তাঁর প্রিয় ‘কাঞ্চনদা’র অতীত তাঁকে ভাবায় না। বললেন, “কেউ তো কোনও সম্পর্ক ভাঙবে বলে শুরু করে না। কেউ চায় না, কাদা ছোড়াছুড়ি হোক। তৃতীয় বিয়ে নিয়ে এত কথা হচ্ছে! যে সংসার করে, সেই বলতে পারবে পাত্রে কতটা ফুটো আছে, কতটা নেই। কাঞ্চন জানে, কাঞ্চনের সম্পর্ক কেন টেকেনি। এখানে তো আমার ঢোকাও উচিৎ নয়।”
আপাতত ৬ মার্চের দিকে তাকিয়ে আছেন শ্রীময়ী। ওই দিন আনুষ্ঠানিক বিয়ে। মুম্বই থেকে এক ডিজাইনার বন্ধু আসবে তাঁর। কী পরবেন, ঠিক করবেন সেইদিনই। আর ভ্যেনু? হেসে বললেন, “কাঞ্চনটা এমন! জানেন, কোথায় ভেন্যু ঠিক করেছে, সেটা পর্যন্ত বলেনি। উফফ।” না বিরক্ত নন তিনি, কপট রাগে উপচে পড়ল ‘অনুরাগের ছোঁয়া’।