মাছ, মিষ্টি অ্যান্ড মোর’, ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’,’বিবাহ ডায়েরিজ’-এর মতো ‘রমকম’ নয়। ‘বর্ণ পরিচয়’-এর মতো থ্রিলারও নয়। এটা একটা ‘হরর’ স্টোরি। এই ‘হরর’-এর স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ট্রেলারে (ট্রেলারের শেষ দিকে নায়িকা বলছেন, “এটা একটা হরর স্টোরি”)। ভূত-টুত নাকি? আসলে ‘হরর’-এর সঙ্গে যে শুধু ভূত বা প্যারানর্মাল সম্পর্ক থাকে, তা মনে করেন না পরিচালক মৈনাক ভৌমিক। কথা হচ্ছে ‘চিনি’ ছবি নিয়ে, যা রিলিজ করেছে আজ, বৃহস্পতিবার। এই ছবিতে যে ‘হরর’-এর কথা বলেছেন পরিচালক, তা হল গার্হস্থ্য হিংসা। গার্হস্থ্য হিংসা (ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স) নিয়ে TV9 বাংলা ডিজিটাল কথা বলল ‘চিনি’ ছবির মা অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya), ‘চিনি’ মধুমিতা সরকার (Madhumita Sarkar) এবং চলচ্চিত্র পরিচালক তথা চাইল্ড রাইটস কমিশনের স্পেশ্যাল কনসালট্যান্ট সুদেষ্ণা রায়ের (Sudeshna Roy) সঙ্গে।
অপরাজিতা আঢ্য
“সারাজীবনে চারপাশে প্রচুর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হতে দেখেছি এবং নিজের জীবনেও মুখোমুখি হয়েছি। আমার বাড়িতে আমার উপরই অত্যাচার হয়েছে একাধিকবার। আমি কিন্তু আমার বাপের বাড়ির কথা বলছি। তুলনা টানলে শ্বশুরবাড়ি তো স্বর্গ! আমার জীবনে বাবা-মায়ের ঝগড়া তো ছিলই। পরবর্তীকালে দাদারাও অতিরিক্ত শাসন করেছে। সবই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের পর্যায়ে পড়ে। আমার নিজের সঙ্গেই হয়েছে। বিয়ের সময় স্বামীকে বলেই দিয়েছিলাম, ‘কখনও আমার উপর উঁচু গলায় কথা বলবে না, সেটা আমি সহ্য করতে পারব না’। আমার স্বামী সেটা করেওনি কোনওদিন। মলেস্টেশন সব মেয়ের জীবনেই কমবেশি ঘটেছে। কেউ বলুক আর না বলুক। আমি নিজে এটা অনুভব করেছি যে, বাড়িতে বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তি হলে বাচ্চার উপর খুব নেতিভাবচক প্রভাব পড়ে। সারাজীবনের জন্য প্যানিক তৈরি হয়। এই ছবিটার বিষয়ও তাই। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স একটা বাচ্চার জীবনে প্রভাব ফেলেছে, আর সেটাই হচ্ছে ‘চিনি’।”
মধুমিতা সরকার
“ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এমন একটা বিষয়, যেটা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে হয়তো প্রত্যেক মেয়েকেই ফেস করতে হয়। নিজের সঙ্গে ঘটে কিংবা অন্যের সঙ্গে ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে সেভাবে আলোচনা করাই হয় না। যদিও খবরের শিরোনামে দেখা যায় বারবার। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া গার্হস্থ্য হিংসার বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
সুদেষ্ণা রায় (চলচ্চিত্র পরিচালক তথা চাইল্ড রাইটস কমিশনের স্পেশ্যাল কলসালট্যান্ট)
“গার্হস্থ্য হিংসা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। চাইল্ড রাইটস কমিশনের তরফ থেকে সমাজের প্রত্যেক স্তরের ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের চরিত্র নিয়ে আমরা একটা স্টাডি করেছিলাম। দেখেছি, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাচ্চারাই। বাবা-মায়ের মধ্যে ভায়োলেন্স বাচ্চাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যেটা এই ছবিটার বিষয়। লোকে বলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে পরিবারে বাচ্চাদের অসুবিধে হয়। কিন্তু পরিবারে নিত্যদিন বাবা-মায়ের অশান্তি আরও বেশি সমস্যা তৈরি করে। আমরা তিন চারটে জায়গায় স্টাডি করেছিলাম। পতিতাপল্লিতে, উচ্চবিত্ত পরিবারে, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারকে মাথায় রাখা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে সব জায়গাতেই রয়েছে এই হিংসা। এবং সেই হিংসার রকমফেরও রয়েছে। এর জন্য বাচ্চারা খুবই সাফার করে।”