‘চট করে দেখিয়ে দি আমরা কী পারি, মটন কারি..মটন কারি… ইলিশ-খিচুড়ি…. রান্না ভাল হয় রাঁধুনির গুণে….খিচুড়িটা পুড়িয়ো না নুনে…..’ –ভাবেই চলছে কথা বলা। বাংলা ব়্যাপও বলা যেতে পারে একে, কিংবা ছন্দে কথা বলা। বাংলা সিনেমায় এমন ছন্দে কথা বলতেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কোন ছবিতে, বললেই প্রথমেই যে নামটা মাথায় আসে, তা হল সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ ছবির কথা। সেখানে ছন্দে কথা বলতে না পারলে কীভাবে মজা করতে অনুপ কুমার অভিনীত চরিত্রটি, তা আজও দর্শকের স্মৃতিতে রয়েছে। বাংলা সিনেমার মতো হিন্দিতেও এমন ছন্দে সংলাপ ছিল ‘খুবসুরৎ’ ছবিতে। সেখানেও ছিলেন বাঙালি পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। বাংলা ভাষাকে ছন্দে ছন্দে এমনভাবে ব্যবহার করতে আজকের সিনেমার পরিচালকরা ভুলে গিয়েছেন।
ধন্যবাদ প্রাপ্য পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বহুদিন পর এমন ছন্দ ফিরিয়ে আনলেন তাঁর নতুন মেগা ধারাবাহিক ‘বোধিসত্ত্বর বোধবুদ্ধি’-তে। বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ। জালে ধরা পড়লে খবর হয়। সেই মাছ নিয়ে আদিখ্যেতা একটু চলতেই পারে। চলছেও বছরের পর বছর। নন-ফিকশানে ইলিশ উৎসব হয় প্রতি বছর। কিন্তু ফিকশান অনুষ্ঠানে এমন ইলিশ উৎসব, কয়েক বছরের ধারাবাহিকে হয়নি।
উৎসবের থেকেও বড় কথা এমনভাবে ছন্দ মিলিয়ে সংলাপ বলা বা ব়্যাপ তো নয়ই। শান্তিকুঞ্জ মানে বোধিদের বাড়িতে ইলিশ উৎসবে মেতেছেন সবাই। কিন্তু সমস্যা হয়েছে পুরুষ-মহিলা চরিত্রদের মধ্যে। পুরুষরা ঠিক করেছন মহিলাদের দেখিয়ে দেবেন রান্নাটা খুব কঠিন কাজ নয়। বরং রাঁধুনি পাকা হলে রান্না হবে খাসা। এই তর্জাই দেখা যাচ্ছে প্রোমোতে। যেখানে বিশ্বনাথ, সৌরভরা কী কী রান্না পারেন, তার হিসেব দিচ্ছেন, অন্যদিকে সোনালি, সমতারা রান্না খারাপ যেন হয় তা নিয়ে করছেন মজা। সবটাই হচ্ছে ছন্দে ছন্দে।
আজকে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি শুধুই রয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমে। সেই সব পুরোনো সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চান শুভঙ্কর তাঁর প্রথম ধারাবাহিকের মধ্যে দিয়ে। বাঙালির যে গৌরববোধ বিশেষ করে ভাষার প্রতি চলে যাচ্ছে (বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাটা না জানা অনেক বাঙালির কাছে হয়েছে গর্বের) সেটাকে ছোট্ট বোধির সংলাপ-কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে যেন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন শুভঙ্কর ‘বোধিসত্ত্বর বোধবুদ্ধি’ মেগা ধারাবাহিকের মধ্যে দিয়ে।