স্নেহা সেনগুপ্ত
শেষ যে বাংলা সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন ঋষি কৌশিক, সেটির নাম ‘সোনা রোদের গান’। তারপর কিছুদিনের বিরতি। এবার এক্কেবারে সোজা মুম্বই উড়ে গিয়েছেন অভিনেতা। বাংলার প্রযোজনা সংস্থা ম্যাজিক মোমেন্টসের প্রথম হিন্দি সিরিয়াল ‘ঝনক’-এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋষি। এবং সেই চরিত্রটি এক খলনায়কের। প্রসঙ্গত, বাংলা ধারাবাহিকের ‘রাফ অ্যান্ড টাফ হ্য়ান্ডসম’ হিরো ঋষি তাঁর নায়ক ভাবমূর্তি ত্যাগ করে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করবেন এবার। TV9 বাংলার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন নানা খুঁটিনাটি।
কেরিয়ারের শুরুতে রিঙ্গো পরিচালিত ‘ক্রান্তি’ নামের এক বাংলা ছবিতে দেবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ঋষি। সেই চরিত্রটি ছিল গল্পের খলনায়ক/ভিলেনের। সেই ভিলেনের সঙ্গেই বিবাদ লাগে নায়কের। কিন্তু নায়কের কাছে মার খায়নি দেবা। কারণ, রিঙ্গো চেয়েছিলেন এক অন্য ধরনের ভিলেন তৈরি করতে। এবং সেই কারণেই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন ঋষিও। চিরকালই অভিনেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন এই অভিনেতা। ফলে নায়ক চরিত্রের বাইরে বের হননি সেই অর্থে। অন্তত ধারাবাহিকের পর্দাতে তো নয়ই। তাঁকে চিরকালই দুর্দান্ত চিকিৎসক, উচ্চপদস্থ পুলিশকর্মী, সাংবাদিকের মতো চরিত্রেই দেখেছেন দর্শক। এ প্রসঙ্গে এর আগে TV9 বাংলাকে দেওয়া এক এক্সক্রুলসিভ সাক্ষাৎকারে ঋষি বলেছিলেন, “‘ক্রান্তি’ করার সময় রিঙ্গো আমাকে কথা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তিনি আমাকে চিরাচরিত ভিলেনের চরিত্রে কাস্ট করবেন না। এমন একটি চরিত্র দেবেন, যেখানে ভিলেন মার খাবে না। তার কোনও অ্যাকশন সিন থাকবে না। সেই কারণেই দেবাকে মানুষ মনে রেখে দিয়েছেন এতগুলো বছর পরও। দেবা কেন খলনায়ক, সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া ছিল ছবিতে। হিরো থাকলে ভিলেনকে কুপোকাত করার জন্য একটি খল চরিত্র তৈরি করতে হবে, সেই চিরাচরিত নিয়মে হাঁটেননি রিঙ্গো।”
সেই সাক্ষাৎকারেই ঋষি বলেছিলেন, “আমরা অভিনেতারা আসলে ইমেজ বিক্রি করি। অনেকেই ভাল চরিত্র এবং চিত্রনাট্যর উপর নজর দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি দিই না। সুপারস্টারেরা কিন্তু নিজের একটা ইমেজ ধরে রাখেন। শাহরুখ খান ‘রোম্যান্টিক’ হিরো, অমিতাভ বচ্চন ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’–এটাতেই আমি বিশ্বাসী। ফলে নিজের ইমেককে কেন্দ্র করে ভয়ানক সচেতন আমিও। আমাকেও সক্কলে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নায়কের চরিত্রেই দেখেছেন। খুব অন্যরকম কিছু না হলে আমিও ছক ভাঙব না।”
এবার সেই চরিত্রটিই এসেছে ঋষির কাছে। লীনা গঙ্গাপোধ্যায়ের লেখনীতে তৈরি হয়েছে তেজসবাবু। সে কাশ্মীরে বসবাসকারী এক গুন্ডা। তেজসের নজর ঝনকের দিকে। ‘ঝনক’ ধারাবাহিকের নায়িকা। যে কোনও প্রকারে হোক ঝনককে বিয়ে করতে চায় তেজস। প্রোমোতেই সেই ঝলক স্পষ্ট। খল চরিত্রটি TV9 বাংলাকে ঋষি বলেছেন, “হ্যাঁ এই হিন্দি সিরিয়ালে আমি ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি এখনও বলব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু ইমেজেরন উপরই দাঁড়িয়ে আছে। যে সকল ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ বলেন অভিনয়টাই আসল কথা, তাঁদের আমি অমিতাভ বচ্চন এবং নাসিরউদ্দিন শাহ কিংবা আমোল পালেকরের মধ্যে ফারাক জিজ্ঞেস করব। ঝনক সিরিয়ালের ভিলেন একটি ইন্টারেস্টিং চরিত্র। সে এক্কেবারেই চিরাচরিত নয়। তার উপর লীনাদিদের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে বহুদিনের যোগাযোগ। তাও ১২ বছর হয়ে গিয়েছে। ওদের অনেকগুলো ধারাবাহিকে কাজ করেছি আমি।”
‘ঝনক’ ধারাবাহিকের অনেকটাই কাশ্মীরে শুটিং হয়েছে। তারপর মুম্বইয়ে শুটিং চলছে। একটু সুটকেস সব সময়ই প্যাক করে রাখা থাকে ঋষির। মুম্বই-কলকাতা যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাতের দিকে কল টাইম আসলে প্রায়সই পরদিন তাঁকে মুম্বইয়ে যেতে হয়। ভোরবেলাতেই ফ্লাইট নিতে হয় ঋষিকে। অভিনেতা বললেন, “এই যে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এই মুহূর্তে মুম্বই থেকেই ফিরলাম। বাড়িতে ঢুকলাম আর আমার ফোন পেলাম।” তবে এখনও স্বপ্নের নগরীতে বাসস্থানের বন্দোবস্ত করেননি ঋষি। শুটিং থাকলে সেখানে হোটেলেই থাকতে হচ্ছে অভিনেতাকে। মুম্বইয়ের কাজের ধরন সম্পর্কে বলেছেন, খুব পেশাদার সকলে।