ছোটবেলার প্রেম
ছোটবেলায় প্রত্যেকের পুজোই অন্যভাবে কাটে। আমিও পাড়ায় পুজোয় মেতে থাকতাম ভীষণরকম। রাজা বসন্ত রায় রোডে ছিল আমাদের পুজো। ঠাকুর বরণ থেকে বিসর্জন পর্যন্ত পুরোটাতেই যুক্ত থাকতাম। সকাল থেকেই প্যান্ডেলে থাকতাম। পুজোর এই কটা দিন আমার বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক কম থাকত।
পাড়ার নস্ট্যালজিয়া
পাড়ার ছেলেরা যা যা করত সবটাই আমি করতাম। চাঁদাও তুলতাম। এখন পাড়া কালচার উঠে গিয়েছে। কিন্তু তখন ওই সময়টায় সকলেই তাই করত, পাড়ায় মেতে থাকত। চাঁদা তুলতে যাওয়া থেকে শুরু করে পাড়ায় চায়ের দোকানে খাতা চলা, রকে বসে আড্ডা মারা, রাস্তায় ক্রিকেট-ফুটবল খেলা, সবটাই করেছি।
পুজোতে প্রেম
…আর পুজোর এই সময়টায় সুন্দর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছিল একটা অংশ। কেবল ছোটবেলায় বলব না, এখনও চলে পুরোদমে। কিন্তু এই সময়ের নিরিখে আগের সময়কে বিচার করলে চলবে না। তখন চোখে চোখ পড়াটাই অনেক ছিল আমাদের কাছে। আমার সঙ্গে তো বহুবার হয়েছে, না হলে জীবন চলে কীভাবে (হাসি)! এখনকার মতো একেবারেই ছিল না বিষয়টা। আমাদের সময় পুজোর প্রেম অন্যরকম ভাবে ধরা দিয়েছে।
পুজোর দুঃখের স্মৃতি
আমি ঠাকুর দেখতে যাওয়া অনেকদিন আগে ছেড়ে দিয়েছি। কারণ, পুরোদস্তুর পুজোর সঙ্গেই যুক্ত থাকতাম। অষ্টমীর দিন আমাদের পুজোর প্যান্ডেল পুড়ে গিয়েছিল। গোটা প্যান্ডেল জ্বলে গিয়েছিল। সেটা একটা ভয়াবহ স্মৃতি আমার জীবনে। সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর আমি আর পুজোর সঙ্গে থাকতাম না। প্রতিবার বাইরে বেড়াতে চলে যাই। এবারও পুজোতে বাইরে চলে যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি কাউকে বলছি না। সিক্রেট!
এখনকার পুজো
বিশেষ বিশেষ অঞ্চল ছাড়া পাড়া কালচারে পুজো আর সেভাবে দেখতে পাই না। সবটাই তো ফ্ল্যাটবাড়ি কালচার হয়ে গিয়েছে। পাড়ার ব্যাপারটা আর সেই অর্থে নেই বললেই চলে। তার উপর আমি আর পুজোতে কলকাতায় থাকি না।
খাওদা দাওয়া
আমি খেতে ভালবাসি, আপনারা সকলেই জানেন। পুজোতে খাওয়াদাওয়ার একটা বিষয় থাকত আমাদের। কে আর রেস্তোরাঁয় ঢুকে প্রপার ডিনার করে! পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতাম। তাই রেস্তোয়াঁয় যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করতাম না! রোল খাওয়া বলুন, চপ খাওয়া বলুন কিংবা ফুচকা। সবটাই চলত লাগামছাড়া। সেই খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা এখনও আছে। যেখানেই বেড়াতে যাই না কেন, কবজি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করি। নো ডায়েট!
পুজোর শপিং
আর শপিংয়ের বিষয়টা যদি বলি, তা হলে বলতে হয় আমি পুজোতে কিচ্ছু কিনি না। সারা বছর যা পরি, সেটাই পুজোতে রিপিট হয়। তবে যেখানে বেড়াতে যাই, সেখানে গিয়ে শপিং করি। লোকাল/স্থানীয় জিনিসপত্রের উপর আমার খুব আকর্ষণ। সেসব কিনে নিয়ে আসি। সেটাতেই আনন্দ খুঁজে পাই।
বাবার (শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে পুজোর স্মৃতি
বাবার সঙ্গে পুজোর স্মৃতি একটাই। বাবা আমাকে ভাসানে যেতে দিতেন না। ভয় পেতেন। যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়, সেটাই ছিল বাবার ভয়। তখন গঙ্গার ঘাট এত বাঁধানো ছিল না। তার উপর দিয়েই ঠাকুর জলে ফেলতে হত। কিন্তু আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা, বলতাম যাবই। এই ঝামেলা প্রতি বছরই হত।
মহালয়ায় তর্পণ
আমি খুব একটা ধর্মান্ধ মানুষ নই। তাই কোনও দিনও তর্পণ করিনি। আমার বাবা আমার পৈতেই দেননি। বাবা বলেছিলেন, এত যদি ভক্তি থাকে, কালীঘাটে গিয়ে পৈতে দিয়ে দাও। আমি দেব না। আমার পৈতে নেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের পরিবারে পৈতে হলে অনেক উপহার পাওয়া যেত। এগুলোর উপর লোভ ছিল। বাবাকে বলেছিলাম, আমার যদি একটু পৈতেটা দাও! বাবা বলেছিলেন দেবেন না। আমার সব মিস হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বাড়ির সবাই এক জায়গায় হলেই হইহই করে পুজো কেটে যায়: পূজারিনি ঘোষ